ভ্রমন

বাংলাদেশের চীনামাটির শহরে যাবেন কি?

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ময়মনসিংহের শেষ প্রান্তের নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার নান্দনিক গ্রাম। যেখানে কবি রফিক আজাদ ছিলেন। বিরিশিরি পর্বের কবিতা এই স্বর্গভূমিকে উপজীব্য করে লিখেছেন। চীনামাটির পাহাড়ে কবে যাব আহারে, এমন আক্ষেপ হুট করে পূরণ হবে! আর বিরিশিরি যে ময়মনসিংহ শহর থেকে দূরের দুর্গম পথও বটে। সেটা জানতাম না, যদি না যেতাম। গুগলের যুগে সবই হাতের মুঠোয়।

বিজয়পুরে অবস্থিত চীনামাটির পাহাড় আর সোমেশ্বরীর বুকে স্বচ্ছ নীল জল দেখার জন্য মনপ্রাণ উদগ্রীব। কীভাবে যাব! এই নিয়ে নানান পরিকল্পনা শেষে ১৫ মার্চ সকালের ট্রেনে চেপে শ্যামগঞ্জ নামক স্টেশনে পৌঁছাই। তখন সকাল ১১টা। চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে সিএনজিতে উঠি। যখন সুসং দুর্গাপুরে তখন সূর্য মাথার ওপর। সোমশ্বরীর বুক চিরে চৈত্রের তাতানো বালুর মধ্য দিয়ে হাঁটা দিলাম। নদীতে পানি নেই। বালু উত্তোলনের মহাসমারোহ চলছে। নদী পার হয়ে শিবগঞ্জ থেকে বিজয়পুরের দিকে রওনা দিলাম।

পথের দুধারে অনাদরে ফুটে থাকা ভাঁটফুলের সৌরভে দুচোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। ইজিবাইকযোগে বিজিবি ক্যাম্পের কাছে সীমান্তে নামলাম। নদীর ওপারেই কাঁটাতারে আটকানো। পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে মানুষ চলাচল করছে। নদীতে ছোট ছোট নৌকায় দলবেঁধে জিরো পয়েন্টে যাচ্ছে। আবার কোনো দল নীল পানির রানীর গুহা দেখতে যাচ্ছে। আমি একা। মাঝিকে জানালাম। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এক কিশোরসহ দম্পতি এলেন। নৌকায় উঠবেন কি না। এই নিয়ে সংশয়! অবশেষে উঠলেন। আমাকেও তারা উঠতে বললেন। নৌকা চলছে। অর্ধ কি.মি. নৌপথ। নীল পানির গুহার কাছে নৌকা গিয়ে থামল। সুউচ্চ পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে।

এটা নিয়ে দম্পতিদের মনে নানান কৌতূহল। বাতাসে ভেসে আসছে পাখির সুমিষ্ট সুর। কোকিলের কুহুতানে মনপ্রাণ উচাটন। স্বচ্ছ নীল জল ছুঁয়ে নিলাম। চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে ফিরলাম ঘাটে। রোমাঞ্চকর এক যাত্রা। এখন যেতে চাইলাম মিশনে। শুক্রবার মিশন বন্ধ। মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই। একজন অটোওয়ালাকে নিয়ে গেলাম সাদা মাটির পাহাড়ে।

দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়ে সাদা পাহাড় যেন লজ্জায় জবুথবু। যাই হোক পাহাড়ে উঠলাম। ঝাঁঝাঁ রৌদ্র ছুটে বেড়াচ্ছে দিক থেকে দিগন্তে। আকাশের দিকে তাকাই একবার। পাহাড় থেকে নিচের দিকে তাকাই একবার। মন প্রশান্তিতে ভরে উঠল পাহাড়ের পাদদেশের নীল সবুজ পানির লেক। ছবি তুলে ফিরলাম। মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে যাওয়া সোমেশ্বরী নদী ও নদী তীরবর্তী চিত্রবিথী ও তরুলতার ছায়ায় মনপ্রাণ জুড়িয়ে আসতে পারেন এই গ্রীষ্মে।

কীভাবে যাবেন

মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দুর্গাপুরে সরকার এবং জিন্নাত পরিবহনের বাস যায়। ভাড়া ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। থামে সুকী নগর। সেখান থেকে নৌকায় নদী পার হয়ে রিকশা, বাস বা মোটরসাইকেলে দুর্গাপুরে যেতে হয়। বাস ভাড়া ২০ টাকা, রিকশায় যেতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং মোটরসাইকেলে ২ জন ১০০ টাকা ভাড়ায় দুর্গাপুর যাওয়া যায়।

ঢাকা থেকে ১১টা ৫০ মিনিটে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্যামগঞ্জ স্টেশনে নেমে বাস বা সিএনজি ভাড়া করে বিরিশিরি বাজারে যাওয়া যায়। বিরিশিরি বাজার থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় ভাড়া নিয়ে সবগুলো স্থান ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায় দেখে ফেলতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

সুসং দুর্গাপুরে রাতযাপনের জন্য জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, বেশকিছু গেস্ট হাউস এবং মাঝারি মানের হোটেল পাবেন। জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর ফোন নম্বর ০১৫৫৮৩৮০৩৮৩। ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএর রেস্ট হাউসের ফোন নম্বর ০১৮১৮৬১৩৪৯৬ ও ০১৭১৬২৭৭৬৩৭। ওয়াইডাব্লিউসি-এর রেস্ট হাউস- ফোন নম্বর ০১৭১১০২৭৯০১। নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমির গেস্ট হাউস ০১৮১৫৪৮২০০৬। হোটেল সুসং ০১৯১৪৭৯১২৫৪। হোটেল জবা ০১৭১১১৮৬৭০৮। হোটেল গুলশান ০১৭১১১৫০৮০৭। এসব হোটেল ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

ঘোরার সময় হালকা খাবার সঙ্গে রাখতে হবে। কারণ যত্রতত্র খাবার পাওয়া যায় না। খাবার হোটেলে ভাত, ডাল, মাছ এবং মাংস খেতে পারবেন। হোটেলে বকের মাংসও পাওয়া যায়। দুর্গাপুর বাজারে নেত্রকোনার বিখ্যাত বালিশ মিষ্টিও খেতে ভুলবেন না।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close