প্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য
বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার প্রথমবারের মতো ছাড়াল ১ ট্রিলিয়ন ডলার
ঢাকা অর্থনিতি ডেস্কঃ ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার প্রথমবারের মতো চলতি মাসে হাজার বিলিয়ন ডলার বা ১ ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক পেরিয়েছে বলে প্রক্ষেপণ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
জানা গেছে, বিশ্বের যেকোনো দেশের অর্থনীতির আকার মূল্যায়নের মাপকাঠি হলো মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)। দুটি পদ্ধতিতে জিডিপির আকার মূল্যায়ন করা হয়। এগুলো হলো চলতি মূল্যের ভিত্তিতে (বেজ অন কারেন্ট প্রাইস) এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (বেজ অন পারচেজ পাওয়ার)। এ দুই পদ্ধতিতেই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতো বিশ্বের প্রভাবশালী সংস্থাগুলো। দুইটি পদ্ধতির মধ্যে চলতি মূল্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৪১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আর সরকার আগামী অর্থবছরে জিডিপির আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করার পরিকল্পনা করেছে।
আইএমএফের তথ্য বলছে, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে পিপিপির ভিত্তিতে দেশের অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ২৬৭ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৫০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে প্রায় এক দশক সময় লাগে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অর্থনীতির আকার ছিল ৫২০ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।
সংস্থাটির প্রক্ষেপণ বলছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল ৯৬৬ দশমিক ৪৮৫ বিলয়ন ডলার, যা ২০২২ সালে ১ হাজার ৬১ দশমিক ৫৭১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া ২০২৩ সালে ১ হাজার ১৬৪ দশমিক ৮২৫ বিলিয়ন ডলার, ২০২৪ সালে ১ হাজার ২৭৬ দশমিক শূন্য ২২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৫ সালে ১ হাজার ৩৯৫ দশমিক ৪০৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। তবে দেড় ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অর্জন করবে ২০২৬ সালে। এ সময়ে পিপিপির ভিত্তিতে অর্থনীতির আকার হবে ১ হাজার ৫২২ দশমিক ৪৭৮ বিলিয়ন ডলার।
লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) ২০১৯ সালের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩০তম। বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ ছাড়িয়েছিল ৮০০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা আরো এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের গবেষণার তথ্য বলছে, চলতি মূল্যের ভিত্তিতে জিডিপির আকারে ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬০তম। এখন ৪১তম অবস্থানে এসেছে বাংলাদেশ। ২০৩৬ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ১০০ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করতে স্বাধীনতার প্রথম ৩৮ বছর সময় লেগেছিল। তার বিপরীতে মাত্র ১২ বছরে অর্থনীতির আকার চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪১১ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করেছে।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনীতিতে বাংলাদেশের গত ১২ বছরের অভাবনীয় অর্জন, রূপকথার গল্পগাঁথাকেও হার মানায়। করোনার আগের ১০ বছরে ১৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এমনকি করোনায় যখন বিশ্বের অর্থনীতি ৩ দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে; সে সময়ও বাংলাদেশের অর্থনীতির সব সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্বব্যাংক বলছে, দেশের প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো অবস্থানে থাকবে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সুযোগ কম। দেশের অর্থনীতি একটি টেকসই ও গতিময় অবস্থানে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের অর্থনীতির আঙিনায় অসীম সাহস ও দূরদর্শিতার প্রতীক। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় উন্নয়ন অভিযাত্রায় পর্যায়ক্রমে একের পর এক লক্ষ্য অর্জন করতে গোটা জাতি আজ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ এবং ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ।
/এন এইচ