ভ্রমন
বাংলাদেশিরা যেসব দেশে বেশি যায়!
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বৈধ পথে প্রবাসে পাড়ি জমানো বাংলাদেশিদের হিসাব রাখে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব অনুযায়ী ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক কোটি ২৬ বাংলাদেশি কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বাইরে গেছেন। তবে কতজন ফিরে এসেছেন সেই পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর গন্তব্য সৌদি আরব, যেখানে এখন পর্যন্ত ৩৮ লাখ ৮৪ হাজার বাংলাদেশি পাড়ি জমিয়েছেন। ১৯৭৬ সালে মাত্র ২১৭ জন দিয়ে এই শ্রমবাজারের যাত্রা শুরু। ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৫১ হাজার কাজ নিয়ে গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে। চলতি আগস্ট পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছেন দুই লাখ ৩৪ হাজার জন।
তবে, শুরুর দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতই ছিল বাংলাদেশের বড় বাজার। ২০০৮ সালে দেশটিতে একবছরে সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ১৯ হাজার জন বাংলাদেশি গেছেন। তবে ২০১৩ সালের পর থেকে এই বাজারটিতে মন্দা চলছে। গতবছর মাত্র তিন হাজার ২৩৫ জন দেশটিতে পাড়ি জমানোর সুযোগ পেয়েছেন। তবু ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্য ছিল আরব আমিরাত, যা মোট জনশক্তি রপ্তানির প্রায় ১৯ ভাগ।
প্রবাসীদের গন্তব্যের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে পারস্য উপসাগরের দেশ ওমান। ১৪ লাখ ৭৭ হাজার বাংলাদেশি কাজ নিয়ে গেছেন সেখানে। তবে গত ৩ বছর ধরে এই বাজারটিতেও প্রবাসী যাওয়ার সংখ্যা কমছে। ২০১৬ সালে যেখানে এক লাখ ৮৮ হাজার জন ওমানে পাড়ি জমিয়েছেন, গেল বছর তা নেমে এসেছে ৪৭ হাজার ৭৮৭ জনে।
বাংলাদেশিদের কাছে মালয়েশিয়া আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে শুরু করে মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে। ২০০৭ সালে সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ৭৩ হাজার জনের বেশি শ্রমিক কাজের জন্যে গেছেন এশিয়ার এ দেশটিতে। মাঝে এই প্রবণতা কমলেও সম্প্রতি আবার বেড়েছে। গত বছর দেশটিতে গেছেন এক লাখ ৭৬ হাজার জন। সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছেন সাড়ে ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি।
২০০৬ সাল পর্যন্তও কাতারের বাজার বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানিতে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিও এখন বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন সেখানে অনেক বাংলাদেশির জন্যেই কাজের সুযোগ তৈরি করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় আট লাখ বাংলাদেশি দেশটিতে কাজ নিয়ে গেছেন।
দেশের দক্ষ শ্রমিকদের জন্য পছন্দের এক গন্তব্য সিঙ্গাপুর। এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৭ লাখ ৬৫ হাজার বাংলাদেশি পা রেখেছেন, যা মোট প্রবাসীর ছয় ভাগের কিছু বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০ হাজার জন গেছেন ২০১৩ সালে।
তবে, বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক শ্রমবাজার প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল বলা চলে। ২০০৮ থেকে ২০১৩- এই সময়ে মাত্র ৪১৪ জন দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে তা বাড়তে শুরু করলেও গত দুই বছর ধরে আবার পড়তির দিকে। সব মিলিয়ে ছয় লাখ ২৪ হাজার বাংলাদেশি গেছেন কুয়েতে, যা মোট প্রবাসীর প্রায় ৫ ভাগ।
চার লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্যের দেশ বাহরাইন। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৭২ হাজার মানুষ কাজ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পারস্য উপসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছে ইটালিতে। ২০০২ সাল থেকে সেখানে পাড়ি জমানোর তথ্য আছে বিএমইটির কাছে। সে অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫৫ হাজার বাংলাদেশি বৈধ পথে গেছেন পশ্চিম ইউরোপের দেশটিতে।
বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে মাত্র ২৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৩৬ কোটি টাকার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। সেই তুলনায় বর্তমানে রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে।
এখন দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসীদের আয়। এর কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের অঙ্কটাও এখন বেশ শক্তিশালী। শুধু গত বছরই এসেছে ১ হাজার ৫৫৫ কোটি ডলার বা এক লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ৩৭৪ কোটি ডলার বা ১৪ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
/আরকে
সূত্র: ডয়েচে ভেলে