দেশজুড়ে
বাংলাদেশকে জবাবদিহিতায় আনতে অ্যামনেস্টির বিবৃতি
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবাধিকার পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়েছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এ জন্য জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে জবাবদিহি চাইতে বলেছে সংস্থাটি।
শনিবার (১২ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
জেনেভায় জাতিসংঘে মানবাধিকার সংস্থার চতুর্থ সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনা (ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউ-ইউপিআর) সোমবার শুরু হবে। বাংলাদেশকে জবাবদিহির আওতায় আনতে এই পর্যালোচনাকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে বলেছে অ্যামনেস্টি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপ আঞ্চলিক পরিচালক লিভিয়া স্যাকার্দি বলেন, ‘চতুর্থ ইউপিআর এমন সময়ে হচ্ছে যখন নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে মানবাধিকার, প্রতিষ্ঠান, বিরোধী নেতা, স্বাধীন গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ বাধার মুখে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ইউপিআর পর্যালোচনার সুযোগ কাজে লাগিয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি যাচাই, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের জন্য দেশটির সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে পারবে।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, আগামী জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো মানবাধিকার চর্চার জন্য যাদের আটক করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে ও নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে।
অ্যামনেস্টি আরও বলছে, ২০১৮ সালের মে মাসে হওয়া সর্বশেষ ইউপিআর-এ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে যেসব সুপারিশ করা হয় বাংলাদেশ সরকার তা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে দেশটিতে ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন আইনের সংস্কার এবং অনেক আইন ব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছে। নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩- এ আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কঠোর বিধিগুলো রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারকে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে হবে। একইসঙ্গে এই আইনের লক্ষ্যবস্তু যেন মানবাধিকারকর্মী, সরকারের সমালোচক ও ভিন্নমতাবলম্বী না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
অ্যামনেস্টি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, স্কুলছাত্র, শ্রমিক এবং রাজনৈতিক কর্মীদের দ্বারা সংগঠিত সহ বিভিন্ন নাগরিক সমস্যায় পুলিশ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন অব্যাহত রেখেছে। কর্তৃপক্ষ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট, লাঠিসোটা, স্টান গ্রেনেড এবং জলকামান এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই অবিলম্বে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, নিরপেক্ষভাবে, কার্যকরভাবে এবং স্বচ্ছভাবে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের তদন্ত করতে হবে এবং কমান্ডের দায়িত্ব সহ সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং অবিলম্বে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক সকলকে মুক্তি দিতে হবে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউপিআর প্রতি চার বছরে একবার জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রের মানবাধিকার রেকর্ড পর্যালোচনা করার সুযোগ দেয়। বাংলাদেশের ইউপিআর-এর জন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য জমা দেয়া তার পূর্ববর্তী ইউপিআর-এ বাংলাদেশকে দেয়া সুপারিশ বাস্তবায়নের মূল্যায়ন করে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অ্যাসোসিয়েশন এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং অন্যান্য মানবাধিকার বিষয় যেমন বলপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা, সংখ্যালঘুদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।