ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) টানা প্রায় ৩০ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর আলাদা করা হলো জোড়া মাথার রাবেয়া ও রুকাইয়াকে। চূড়ান্তভাবে আলাদা করার পর দুই বোনের অবস্থা স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শুক্রবার চিকিৎসক দলের প্রধান আন্দ্রেস কসোকে জানান, ৩৫ জন বিশেষজ্ঞ হাঙ্গেরিয়ান সার্জনকে নিয়ে রাবেয়া-রুকাইয়ার খুলি ও মস্তিষ্ক আলাদা করার অস্ত্রোপচারে অংশ গ্রহণ করেন। আলাদা করার পর চিকিৎসকরা দুই বোনের মাথার ক্ষত এরিয়া সফট টিস্যুতে ঢেকে ফেলতে শুরু করেন। হাঙ্গেরিতে এই টিস্যু এক্সপানসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল।
এর আগে শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে ঢামেকের বার্ণ ইউনিটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম শিশু দুই পরিবারের হাতে হাঙ্গেরি যাওয়ার বিমানের টিকিট তুলে দেন। গত এক বছর ধরে মাথা জোড়া লাগানো শিশু দুইটি বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ সময় জার্মান এবং হাঙ্গেরির দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দুই দফায় এনজিওগ্রামের মাধ্যমে শিশু দুইটির ব্রেইনের প্রধান রক্তনালী আলাদা করা হয়। পরবর্তীতে তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য হাঙ্গেরি নিয়ে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম জানান, ‘বাংলাদেশে তাদের চিকিৎসার দুই ধাপ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন তৃতীয় ধাপ সম্পন্ন করার জন্য তাদের হাঙ্গেরি পাঠানো হচ্ছে। সেখানে পাঁচটি বিশেষজ্ঞ টিম চিকিৎসা পরিচালনা করবে। আনুমানিক তিন-চার মাস তারা সেখানে চিকিৎসা নেবে।’
হাঙ্গেরিতে শিশু দুইটির চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ইনজেকশনের মাধ্যমে তাদের মাথার খুলি ফুলিয়ে ভেতরে কিছুটা ফাঁকা করা হবে। পরে ফাইনাল অস্ত্রোপচার হবে বাংলাদেশে’। হাঙ্গেরিতে শিশু দুটির চিকিৎসা তত্ত্বাবধান করবে জার্মান ভিত্তিক ‘ফর বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন’ নামের একটি সংগঠন।
এরপর চূড়ান্ত অস্ত্রোপচারের জন্য গত জুলাইয়ের শেষ দিকে রাবেয়া-রুকাইয়াকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। তাদের সঙ্গে আসেন হাঙ্গেরিয়ান বিশেষজ্ঞরাও। অস্ত্রোপচারের আগে চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, ‘দুই বোনের বাঁচার সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি’।
তবে শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচারে কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেন রাবেয়া-রুকাইয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররা আমার দুই সন্তানকে আলাদা করেছেন। আমি নিজের চোখে তাদের দেখেছি। তারা এখন ভালো আছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৬ জুন পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের আটলংকা গ্রামে জন্ম নেয় যমজ রাবেয়া ও রুকাইয়া। বাবা স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ও মা তাসলিমা দম্পতির ঘরে জন্ম নেওয়া নবজাতকদ্বয়ের মাথা জন্মগতভাবেই সংযুক্ত ছিল। পরবর্তীতে একই বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয় এই দুই শিশুকে।
/আরএম