দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
বন্যায় ত্রাণ বিতরণে রাজনৈতিক বিবেচনা ও স্বজনপ্রীতি হয়েছে: টিআইবি
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: এ বছর বন্যার সময় ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক বিবেচনাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রোববার (২৯ সেপ্টম্বর) রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে টিআইবি’র কার্যালয়ে ‘বন্যা ২০১৯ মোকাবিলায় প্রস্তুতি এবং ত্রাণ কার্যক্রমে শুদ্ধাচার পর্যবেক্ষণ প্রকাশ’ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
পর্যবেক্ষণে টিআইবি বলছে, বন্যার ঝুঁকি যথাযথ চিহ্নিত না করা, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে উদ্যোগের ঘাটতি, পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র না থাকা, মেরামতের অভাবে বাঁধ নষ্ট হওয়া এবং বন্যা মোকাবিলায় পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির তুলনায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ অপ্রতুল হওয়ায় অসংখ্য মানুষ ত্রাণ পায়নি। রাজনৈতিক বিবেচনায় ত্রাণ বিতরণ, স্বজনপ্রীতি, ত্রাণের চাল কম দেওয়া, একই পরিবারকে একাধিকবার ত্রাণ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া চিকিৎসা,স্যানিটেশন, নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা এবং গবাদি পশু ও গৃহস্থালির সম্পদ সুরক্ষা হয়নি। বন্যা মোকাবিবেলায় প্রশাসনের সার্বিক তদারকিতে দুর্বলতা দেখা গেছে।
মিশ্র পদ্ধতির গবেষণায় গুণগত ও পরিমাণগত তথ্য ব্যবহারসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে টিআইবি এ গবেষণা করেছে। এতে দেশের পাঁচটি জেলার ১০টি উপজেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে বন্যা মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। তবে পর্যাপ্ত ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়নি। বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় ছিল না। এনজিওগুলো নিজেদের সুবিধাভোগীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছে।
ত্রাণ থেকে এক মন্ত্রীর সফরে খরচ করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মন্ত্রী দুর্যোগপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করবেন এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ এবং তাদের কর্তব্য। তবে ত্রাণের বরাদ্দ থেকে মন্ত্রীর খরচ ধরা নিয়ম বহির্ভূত।’
জরিপে দেখা গেছে, সরকার ঘোষিত ৪৩ শতাংশ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় রাতে থাকার সুযোগ-সুবিধা ছিল না। ৬৫ শতাংশ কেন্দ্রে নারীদের থাকার জন্য পৃথক ব্যবস্থা ছিল না। ৪১ শতাংশ কেন্দ্রে টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল না। ৭৯ শতাংশ কেন্দ্রে নারীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল না। ৫৩ শতাংশ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুপেয় পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ সামগ্রীর সরবরাহ ছিল না। ৮২ শতাংশ আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ ছিল না। ৮৬ শতাংশ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাদ্য ছিল না। ৭৬ শতাংশ এলাকায় প্লাবিত মানুষকে কেন্দ্রে নিতে জনপ্রতিনিধদের ভূমিকা ছিল না।
ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ জায়গায় ত্রাণ পরিমাণে কম দেওয়া হয়েছে। ৩২ শতাংশ শতাংশ জায়গায় স্বজনপ্রীতি হয়েছে। ২৬ শতাংশ জায়গায় পরিবারের সদস্য সংখ্যা বিবেচনা না করে ত্রাণ বিতরণ হয়েছে। ২৩ শতাংশ জায়গায় রাজনৈতিক বিবেচনায় ত্রাণ বিতরণ হয়েছে। ১৭ শতাংশ জায়গায় তালিকায় না থাকার পরও অনেকে ত্রাণ পেয়েছেন। ১৭ শতাংশ জায়গায় ত্রাণ আত্মসাৎ হয়েছে। ৯ শতাংশ জায়গায় সাবাই সমান ত্রাণ পায়নি। কোথাও পচা চাল দেওয়া হয়েছে। ৭ শতাংশ জায়গায় নিয়মবহির্ভূত অর্থ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরে বন্যায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৮ জেলা। ৯৮ হাজার পরিবার সম্পূর্ণ এবং ১৩ লাখ ৬০ হাজার পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বছর বন্যায় সরকারি হিসেবে ১০৮ জন এবং বেসরকারি হিসেবে ১১৯ জন মারা গেছে।