প্রধান শিরোনামস্বাস্থ্য

বন্যায় ছড়াচ্ছে পানিবাহিতসহ নানা রোগ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ কুড়িগ্রামে বন্যার ধকল এখনো কাটেনি। এরমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিতসহ নানা রোগ। মানুষের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে গবাদিপশুও। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রোগব্যাধি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বানভাসিরা।

জানা গেছে, বানভাসিরা ঘরবাড়ি মেরামত করা, ভেঙে পড়া নলকূপ ও ল্যাট্রিন সংস্কার নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। এ অবস্থায় সহযোগিতা পেলেও ছিল অপ্রতুল।

চলতি বন্যায় তিন হাজার ৮৯২টি গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া বন্যার আগে ২৬ হাজার ৩শ’ গরুকে টিকা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মকবুল হোসেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, বন্যায় জেলার নয় উপজেলার ৫৬ ইউপির ৪৭৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী। নদীভাঙন ও পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা আড়াই লাখ। বন্যায় প্রায় ৬৩ হাজার ঘরবাড়ি পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে শত গবাদিপশু। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪২ হাজার ২৩৭টি নলকূপ।

তিনি জানান, বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ২৩ জন। এরমধ্যে শিশুর সংখ্যা ১৮ জন। বন্যার পানি বিপদসীমার ওপর থেকে কমতে শুরু করার পর থেকে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। চরাঞ্চলের মানুষের হাত-পা ও আঙুল ফেটে যাচ্ছে। শরীরে বাসা বাঁধছে নানা জটিল রোগ।

জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউপির মশালের চরের মেম্বার সিদ্দিক আলী বলেন, আমার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ২৫০ পরিবার রয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতে গরুর রোগ দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া বাড়ির পুরুষ ও নারীর হাত-পায়ের চর্মরোগে এবং শিশুরা সর্দি, কাশি ও পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হয়েছে।

পার্শ্ববর্তী ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবু বক্কর খান বলেন, আমার বতুয়াতুলি ও ফকিরেরচর গ্রামে ১৯৭ পরিবারের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পরিবারে গরুর রোগ দেখা দিয়েছে। এছাড়া দেখা দিয়েছে নারী-পুরুষের চর্মরোগ। প্রতিটি গরুর চিকিৎসা বাবদ আড়াই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কর্মহীন মানুষ।

জেলা অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মকবুল হোসেন বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ মূলত ভাইরাল ডিজিজ। মশা-মাছি থেকে এটি ছড়ায়। এতে গরু মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে চিকিৎসায় অবহেলা করলে মারাও যেতে পারে। এখনো যেসব চর এলাকায় আমাদের লোকজন যেতে পারেনি। দ্রুত সেখানে ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, বন্যায় গবাদিপশুর খাদ্যের জন্য এবার ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ৯ লাখ টাকা উপ-বরাদ্দ ও বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য রোগের সেভাবে প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি। তবে বন্যা পরবর্তীতে পানি নেমে যাওয়ার পর পানিবাহিত রোগগুলো বিস্তার লাভ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য প্রস্তুত রয়েছে আমাদের ৮৫টি মেডিকেল টিম।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close