দেশজুড়ে
ফেসবুকে অস্ত্র হাতে ছবি, আলোচনায় এমপি বাবলু
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছবির পোজ দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। শুক্রবার ছবিটি ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। একজন এমপির অস্ত্র প্রদর্শনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রদর্শন অত্যন্ত অশোভন ও হীন অভিব্যক্তির প্রতিফলন বলে মতপ্রকাশ করেন অনেকে।
বগুড়ার নন্দীগ্রামের এবি বারিক নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক বলেন, ‘হঠাৎ এমপি তাই, এর বিচার চাই।’
বগুড়ার সিনিয়র সাংবাদিক চপল সাহা লিখেছেন, ‘একজন সংসদ সদস্যের কেনা অস্ত্র প্রদর্শন কতটা শোভনীয়? ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় হঠাৎ করেই রেজাউল করিম বাবলুকে সমর্থন দেয়া হয়। ফলে তিনি হয়ে যান সংসদ সদস্য। তিনি একটি অস্ত্র কিনেছেন তার নিজের সুরক্ষার জন্য। এই অস্ত্রটি তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। একজন সংসদ সদস্যর জন্য জানা উচিত অস্ত্র প্রদর্শন করা আইনত অপরাধ। তাহলে তিনি কি…?’
তবে সংসদ সদস্য রেজাউল করিম দাবি করেছেন, নিরাপত্তার জন্যই তিনি অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন। সপ্তাহখানেক আগে ঢাকার একটি অস্ত্রের দোকান থেকে তিনি ৮০ হাজার টাকায় একটি বিদেশি পিস্তল কিনেছেন। দোকানে বসে পিস্তল নাড়াচাড়া করার সময় তার সঙ্গে থাকা কোনো কর্মী মুঠোফোনে ছবি তুলে তা তাদের ফেসবুক ওয়ালে আপলোড দিয়েছেন।
তিনি বলেন, লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্রের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড দিতে আইনি কোনো বাধা নেই। তার সঙ্গে থাকা কোনো কর্মী তাকে না বলেই ফেসবুকে দিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আর তাকে অপছন্দ করা কিছু সাংবাদিক এই ছবি ভাইরাল করে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, সংসদ সদস্য রেজাউল করিমের নামে কয়েক মাস আগে একটি পিস্তুলের লাইসেন্স প্রদানের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন তাকে পিস্তুলের লাইসেন্স দিয়েছে কি না তা জানা নেই।
রেজাউল করিম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ আসন থেকে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচনে রেজাউল করিম তার হলফনামায় পেশা সাংবাদিকতা ও ব্যবসায় বলে উল্লেখ করেছেন। তবে সাংবাদিকতা থেকে তিনি কত টাকা আয় করেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য তার হলফনামায় এবং আয়কর বিবরণীতে নেই।
তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। তবে কৃষি ও ব্যবসা থেকে তার আয় উল্লেখ করেছিলেন যথাক্রমে তিন হাজার ও দুই হাজার টাকা। তার নির্বাচনী খরচ সাড়ে ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে নিজের ব্যবসা থেকে আয় ৫০ হাজার টাকা আর তার দুই জামাতার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা এবং দান হিসেবে আরেক জামাতার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ধার নেয়ার কথা তিনি উল্লেখ করেছিলেন।
হলফনামায় মাসিক আয় ৪১৭ টাকা দেখালেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যে তিনি অঢেল ধন-সম্পদের মালিক হন। সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বক্তব্যেই নিজ এলাকার ইটভাটার বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখলেও ইতোমধ্যেই ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
নির্বাচিত হওয়ার দুই মাসের মধ্যে ৩৩ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের গাড়ি ব্যবহার শুরু করলে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে আলোচনার আসেন এই এমপি। এখন তিনি কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। যার অনুকূলে প্রায় কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়েছে। এছাড়া নিজ গ্রামের বাড়িতে বহুতল ভবন নির্মাণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তিনি।
অপরদিকে নির্বাচনী হলফনামায় নিজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তথ্য গোপন করে গেছেন এই সংসদ সদস্য। নির্বাচন কমিশনের বিধি মোতাবেক হলফনামা ফরমের ৩ এর ক ধারায় বলা হয়েছে, অতীতে কোনো মামলা থাকলে তার ফলাফল উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু এমপি বাবলু তার নির্বাচনী হলফনামা ফরমের ওই ধারায় উল্লেখ করেছেন অতীতে তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়নি।
অথচ ২০০৭ সালে তার নিজের কারিগরি স্কুলে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা উৎকোচ নেয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শাজাহানপুর থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের করেন আবু হায়াত খান নামে এক শিক্ষক। এমপি বাবলু ওই মামলার চার্জশিটভুক্ত একমাত্র আসামি।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, তথ্য গোপনের মধ্য দিয়ে এই সংসদ সদস্য গণপ্রতিধিত্ব আদেশের ধারা লঙ্ঘন করেছেন। বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিলে তিনি এই পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন।
এমপি বাবলুর জন্ম গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায়। ছোটবেলা থেকেই বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইউনিয়নের একটি গ্রামে অন্যের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করেন। শিক্ষাজীবনে বেশিদূর এগুতে না পারলেও উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের মানিকদিপা গ্রামে বিয়ে করে মাঝিড়া ইউনিয়নের ডোমনপুকুর গ্রামে বসতবাড়ি নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
/এন এইচ