দেশজুড়েপ্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদন
ফের রাজধানীতে মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ফের রাজধানীতে মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। গ্যাংস্টার থেকে এখন পাড়ি জমাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতারা এই কিশোরদের ক্ষমতা ও পদের প্রলোভন দেখিয়ে যুক্ত করছে খুন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি থেকে মাদক ব্যবসায়। এর সুযোগে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের স্বপ্ন এখন ‘বড় ভাই’ হওয়া।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৪ মাসে কিশোর গ্যাংদের হাতে ১৩টি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ১০টি থানা এলাকায় ৩২টি কিশোর গ্যাংয়ের প্রায় ৫শ’ সন্ত্রাসী অপরাধকর্মে তৎপর। অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের মদদে তারা এখন সমাজে বড় ভাই হওয়ার দৌড়ে। এসব কিশোর অপরাধীরা ব্যবহার করছে দেশি-বিদেশি ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র। আবার এদের বেশিরভাগই নেশাগ্রস্ত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কিশোর সন্ত্রাসীদের তৎপরতা সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্যকেও হার মানায়। ধারালো অস্ত্র হাতে নৃশংস কাজ তাদের নিত্যদিনের ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, গত ৪ মাসে ১৩টি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এই কিশোর গ্যাং। সামাজিক সংগঠন কিংবা খেলাধুলার নামে তুরাগের দিয়াবাড়ি এলাকায় প্রকাশ্যে গড়ে উঠেছে কিশোরদের কিছু সংগঠন ও ক্লাব। নামে-বেনামে এসব ক্লাবের সদস্যদের গড় বয়স ১৭ থেকে ২০ বছর।
সম্প্রতি রাজধানীর চকবাজারে মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ায় এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে পুরান ঢাকার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ন্যাডা বাবু ও পিচ্চি হান্নান। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা জানান, চকবাজার, শহীদনগর ও আশপাশ এলাকায় মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে এ চক্রটি।
অপরদিকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এক ব্যবসায়ীর কারখানার সামনে ফেনসিডিল রাখতে নিষেধ করার জেরে গতকাল সোমবার দুপুরে লিটন নামে ওই ব্যবসায়ীকে পিচ্চি হান্নান ও ন্যাডা বাবুসহ ১০ থেকে ১২ জন মিলে পিটিয়ে আহত করে।
আহত লিটন বলেন, আমার কারখানার সামনে তারা ইয়াবা বিক্রি করে। আমি তাদের নিষেধ করলে হুমকি ধামকি দেয়। এক পর্যায়ে বেদম মারধর করে তারা। এ ঘটনায় পিচ্চি হান্নানকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করা হয়েছে।
পুরান ঢাকার স্থানীয়রা জানান, তাদের কিছু বললেই মারধর করে। ন্যাডা বাবু আগে নিউমার্কেট এলাকায় চাঁদাবাজি করতো। সরকার পরিবর্তনের পর এখানে আস্তানা গেড়েছে। সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এখানে সে সংগঠিত ।
উত্তরার স্থানীয়দের অভিযোগ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল ও বিআরটিএতে আধিপত্য বিস্তারকে টিকিয়ে রাখতেই এসব কিশোরদের দিয়ে তৈরি করা হয় ক্লাব ও ইউনিটি। ভবিষ্যতে দলের পদ-পদবীর লোভ দেখিয়ে এই কিশোরদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে রাজনৈতিক কিছু অসাধু নেতাকর্মীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজউকের কোটি কোটি টাকার খালি জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে কিশোর ক্লাব। এই কিশোরদের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি থেকে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীও আছে। অনেকেই এরইমধ্যে ঝরে পড়েছে পড়াশোনা থেকে, জড়িয়ে পড়ছে অপকর্মে। এতে উদ্বিগ্ন কিশোরদের অভিভাবক; পাশাপাশি তাদের নানারকম অপকর্মে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানীরা।
তুরাগের স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে কিশোর গ্যাং নির্মূলে র্যাবের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে ভাসমান কিশোর ক্লাব, কিশোর ইউনিটি, কিশোর সংঘ বন্ধে র্যাবের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
এদিকে কীভাবে একজন কিশোর সন্ত্রাসীতে রূপ নেয় তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান।
অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, কিশোর গ্যাং আধুনিকায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিশোর সংশোধনাগারে কোনোভাবেই এসব সন্ত্রাসীদের সংশোধন করা সম্ভব নয়। কারণ সেখানে যে শিক্ষা দেয়া হয় সংশোধন হওয়ার ছিটে ফোটাও নেই।
এ বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলছেন, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের টার্গেট এখন কিশোর গ্যাং। বিভিন্ন অভিযানে দেখা যায়, গ্যাং সদস্যরা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছে। এছাড়াও এলাকার বড় ভাইদের ক্ষমতায় তাদের অপরাধে জড়ানো আরেকটি কারণ।
তিনি জানান, সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে ১২ দফা সুপারিশ করেছে। এরমধ্যে অন্যতম সুপারিশ হলো- কিশোরদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেয়া, তাদের নিয়মিত কাউন্সিলিং করা। প্রতিবেদনটি এরইমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
/এন এইচ