দেশজুড়ে

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে সনদ পাচ্ছে না উবার-পাঠাও!

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ দেশে রাইডশেয়ার অ্যাপ উবারে চলাচল করছে ২০ হাজারের বেশি মোটরযান। অথচ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে মাত্র ১০০টি মোটরযানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও জমা দিতে পারছে না উবার বাংলাদেশ। ফলে রাইডশেয়ার কোম্পানি হিসেবে অনুমোদন পেলেও তাদের এনলিস্টমেন্ট সনদ দেয়নি বিআরটিএ।

মোটরসাইকেল-প্রাইভেট কার মিলিয়ে প্রায় ২২ হাজার যানবাহন চলাচল করছে আরেক রাইডশেয়ার অ্যাপ পাঠাওয়ে। তার পরও প্রতিষ্ঠানটি ১০০টি মোটরযানের কাগজ বিআরটিএতে জমা দিতে পারেনি। তাই উবারের মতো পাঠাওয়ের এনলিস্টমেন্ট সনদ ঝুলে আছে।

মোটরযানের সংখ্যার হিসাবে দেশের সবচেয়ে বড় রাইডশেয়ার কোম্পানি সহজ লিমিটেড। প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল মিলিয়ে সহজে চলাচল করছে ৩২ হাজারের বেশি মোটরযান। তার পরও ন্যূনতম ১০০ মোটরযানের কাগজপত্র বিআরটিএতে জমা না দেয়ায় সহজও পায়নি এনলিস্টমেন্ট সনদ।

শুধু উবার, পাঠাও বা সহজ নয়, ন্যূনতম মোটরযানের কোটা পূরণে ব্যর্থ হওয়ার তালিকায় রয়েছে আরো সাতটি কোম্পানি। এগুলো হলো ওভাই, চালডাল, ইজিয়ার, আকাশ টেকনোলজি, সেজেস্টো লিমিটেড, বাডি লিমিটেড ও আকিজ অনলাইন লিমিটেড। ফলে কোম্পানি হিসেবে বিআরটিএ তাদের অনুমোদন দিলেও শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় আটকে রেখেছে এনলিস্টমেন্ট সনদ। এখন পর্যন্ত কেবল পিকমি লিমিটেড ও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড (সিএনএস) বিআরটিএর ন্যূনতম মোটরযানের তালিকা পূরণ করে এনলিস্টমেন্ট সনদ নিতে সক্ষম হয়েছে।

সরকারের রাইডশেয়ার নীতিমালার ৪ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না, যদি না তা ন্যূনতম সংখ্যক মোটরযানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকে। এলাকাভেদে ন্যূনতম মোটরযানের সংখ্যাও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে নীতিমালায়। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এলাকায় ন্যূনতম ১০০, চট্টগ্রাম মহানগরে ৫০ ও দেশের অন্যান্য মহানগর/শহর এলাকায় ন্যূনতম ২০টি মোটরযানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে এতে।

কোম্পানি হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার এক মাস পরও ন্যূনতম ১০০টি মোটরযানের তথ্য বিআরটিএতে জমা দিতে পারেনি ১০ রাইডশেয়ার কোম্পানি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যমে বলেন, এমনিতেই কোম্পানিগুলোয় হাজার হাজার মোটরযান চলাচল করে। কিন্তু অনেক কোম্পানির ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সঠিক নিয়ম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক না থাকা সত্ত্বেও অ্যাপে চলার জন্য নিবন্ধন দিয়েছে। কিন্তু বিআরটিএ তো সেসব দেখবে না। সঠিক নিয়ম অনুসরণ ও প্রয়োজনীয় কাগজ ঠিকঠাক না থাকলে সেই যানবাহনকে বিআরটিএ কখনই কোনো কোম্পানির তালিকাভুক্ত হিসেবে দেখাবে না। এ জায়গায় এসে অনেক রাইডশেয়ার কোম্পানি আটকে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

তবে রাইডশেয়ার কোম্পানিগুলো বলছে ভিন্ন কথা। তাদের অভিযোগ, মোটরযানের সঙ্গে কোম্পানির চুক্তির ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম আরোপ করা হয়েছে, যার কয়েকটি নিয়ে আপত্তি তুলেছে রাইডশেয়ার কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ রাইডশেয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন (বিআরএসএ)।

বিষয়টি নিয়ে বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) লোকমান হোসেন মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংবাদমাধ্যমে জানান, রাইডশেয়ার নীতিমালার বাইরে কোম্পানি ও মোটরযানকে এনলিস্টমেন্ট সনদ দেয়ার ক্ষেত্রে বিআরটিএ নতুন করে কোনো শর্ত আরোপ করেনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি ‘রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা-২০১৭’ অনুমোদন করে সরকার। কার্যকর হয় একই বছরের ৮ মার্চ থেকে। নীতিমালা প্রণয়নের দীর্ঘ ১৮ মাস পর গত ১ জুলাই থেকে রাইডশেয়ার কোম্পানিগুলোকে নিবন্ধন দিতে শুরু করেছে বিআরটিএ। রাইডশেয়ার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিআরটিএতে এখন পর্যন্ত ‘এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেটের’ জন্য আবেদন করেছে ১২টি কোম্পানি।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close