দেশজুড়ে
প্রস্তুত উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদগাহ, তবে…
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ দিনাজপুর জেলা শহরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ নামাজের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ৫২ গম্বুজের এই ঈদগাহ মাঠে এবার একসঙ্গে ৮ লক্ষাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ঈদের নামাজে বাগড়া দিতে পারে বৃষ্টি। ইতমধ্যে মাঠে বৃষ্টির পানি জমেছে। শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই ঈদগাহ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রতিবছর দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। তবে গত বছর ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে দিনাজপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত। এই গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানের আয়তন সাড়ে ১৪ একর। আর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ময়দানের আয়তন সাড়ে সাত একর।
দিনাজপুরবাসী আশা করছে, ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মাঠে এবার গত বছরের চেয়ে বেশি মুসল্লির আগমন ঘটবে। এবারও সকাল সাড়ে ৮টায় সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে এই ময়দানে।
জানা গেছে, উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। এই মাঠের মিনারটি ইরাক, কুয়েত, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার ইসলামী স্থাপনার আদলে তৈরি করা হয়েছে। ৫২ গম্বুজবিশিষ্ট মিনারের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে এবং প্রধান মিনারের উচ্চতা ৫৫ ফুট। সব মিনার ও গম্বুজের প্রস্থ ৫১৬ ফুট। সৌন্দর্য বাড়াতে গম্বুজগুলো মার্বেল পাথরে মুড়ে দেয়াসহ রঙ-বেরঙের বৈদ্যুতিক বাতি লাগানো হয়েছে।
এছাড়া খতিব যেখানে দাঁড়িয়ে বয়ান করেন সেই মেহরাবের উচ্চতা ৫০ ফুট। ২০ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে ৫২টি গম্বুজ। দুটি গেটের উচ্চতা ৩০ ফুট। ঈদগাহ মিনারটি সিরামিক ইটে আচ্ছাদিত। নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে মাঠের মাঝ বরাবর দক্ষিণ পাশে অবস্থিত শত বছরের স্টেশন (অফিসার্স) ক্লাব অন্য প্রান্তে সরিয়ে দিতে প্রাথমিক পর্যায়ে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা আলাদা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মাঠের দক্ষিণ পাশে এককোণে স্টেশন (অফিসার্স) ক্লাবের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। মাঠের খানাখন্দও ভরাট করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম জানান, গত বছর প্রথমবারের আয়োজনে এই মাঠে সাত লক্ষাধিক মুসল্লির একসঙ্গে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। এবার মাঠে আরো কিছু সংস্কার করা হয়েছে। সেই সুবাদে এবার একসঙ্গে ৮ লক্ষাধিক মানুষের ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকছে।
ঈদ জামাতের নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। মেটাল ডিটেক্টরে তল্লাশির পর মাঠে জামাতে প্রবেশ করানো হবে মুসল্লিদের। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরাও সক্রিয় থাকবেন। মাঠে স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। মুসল্লিদের জন্য রয়েছে ওজুর ব্যবস্থা ও ভ্রাম্যমাণ টয়লেট।
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মিনার নির্মাতা ও দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় এই ঈদ জামাতের উদ্যোক্তা দিনাজপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ ইকবালুর রহিম।
তিনি জানান, এই উপমহাদেশে এত বড় মিনার সংবলিত ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। এখানে আট লক্ষাধিক মানুষের একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকছে যা শোলাকিয়াকেও ছাপিয়ে গেছে। একসঙ্গে নামাজ আদায়ে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলার বিভিন্ন স্তরের জনগণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও জেলা শহরের মহল্লাভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঈদগাহ মাঠ পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তারাও বড় জামাতে একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে সম্মত হয়েছেন।
আবহাওয়া অফিসের অফিস সহকারী তোফাজ্জুর রহমান জানান, আগামী কয়েকদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। ঈদের দিনও বৃষ্টির পূর্ভাবাস রয়েছে। সকল আয়োজন সম্পন্ন হলেও বৃষ্টির কারণে এতসব আয়োজন ব্যাহত হতে পারে।