দেশজুড়ে

প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে ওরা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, চাকরি ও পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও তা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে প্রশ্ন ফাঁসের একটি চক্র।

চক্রের সদস্য ২ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও দুদকের সাবেক এক কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, অবৈধ সম্পদ আড়াল করতে চক্রের সদস্যরা পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের নামে করেছেন ব্যাংকে সঞ্চয়। কিনেছেন গাড়ি-বাড়ি। বেনামে খুলেছেন প্রতিষ্ঠান। তাদের সম্পদ শত কোটি টাকাও পার হয়ে যেতে পারে বলেছে সিআইডি।

২০১৮ সালে তেজগাঁও থানার একটি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলে জবানবন্দিতে উঠে আসে ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা, মাধ্যমিক পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মানিক কুমার প্রামাণিক, জনতা ব্যাংকের অফিসার রকিবুল হাসান এবং দুদকের উপপরিদর্শক মফিজুর রহমানের নাম। গত বছর গ্রেপ্তার করা হয় এ তিন জনকে।

প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্য-অগ্রণী ব্যাংকের বরখাস্ত কর্মকর্তা মানিক কুমার প্রামাণিকের বেতন মাত্র ২৪ হাজার টাকা হলেও তার ৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। মানিকের আছে, নিসান ব্র্যান্ডের গাড়ি ও ৪ কোটি টাকার আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি। অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থের তথ্য আড়াল করতে রেবা ট্রেডার্স নামের ব্যাংক হিসাব খুলে টাকা লেনদেন করেন তিনি।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, বিলাসী জীবনযাপন করার জন্য যা কিছু দরকার তার সব কিছু আছে। গাড়ি, বাড়ি সঞ্চয়পত্র ও জমি সবকিছু পাওয়া গেছে।

চক্রের আরেক সদস্য- দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক উপপরিদর্শক মফিজুর রহমান। সিআইডির করা মামলায় বলা হয়, মফিজুর রহমান ঢাকার ডিআইটি প্রজেক্ট মেরুল বাড্ডায় স্ত্রী ও শ্যালকের নামে কেনেন জমি। আছে দামি গাড়িও। তবে গাড়ির তথ্য আড়াল করতে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করেন ভায়রার নামে। আর মফিজুরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রীর নামে আছে, লাখ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, রকিবুল হাসান নামে জনতা ব্যাংকের এক বরখাস্ত কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে অর্ধকোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব কর্মকর্তার আয়ের সঙ্গে তাদের অর্জিত সম্পদের বিপুল ব্যবধান রয়েছে। তারা অর্থ পাচার করেছেন বলেও তথ্য রয়েছে।

তিনি বলেন, তার পরিবারের তথ্য দেখেন, তার পরিবার পরিজনের পরিচয় দেখলে বুঝতে পারবেন। তারা কিন্তু ততটা উন্নত জীবন যাপন পালনের লোক নয়। কিন্তু তাদের জীবন যাপনটা হঠাৎ করে উন্নত হয়ে গেছে। তাদের সম্পদটার যখন মূল্য ধরা হবে তখন পরিমাণটা অনেক অনেক হয়ে যাবে। শত কোটি টাকাও পার হয়ে যেতে পারে।

মানিক কুমার প্রামাণিকের জব্দ করা ডায়েরি থেকে প্রশ্নফাঁস ও তা বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থের হিসাব পাওয়া গেছে। এ তিনজনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বাড্ডা থানায় অর্থ পাচার আইনে আরও একটি মামলা করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close