দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

“প্রথম আলো তুমি কার? আজ শাহ সিমেন্টের, কাল বসুন্ধরার!”

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশের একটি প্রথম সারির পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রধান শিরোনামের উপরে পরপর দুইদিন দুটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। বিজ্ঞাপনে একটি প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে নির্মিতব্য মেট্রোরেল প্রকল্পে তাদের সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে পরের দিন আরেকটি প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে ওই মেট্রোরেল প্রকল্পে একমাত্র তাদের সিমেন্টই ব্যবহৃত হচ্ছে। একই পত্রিকায় একই স্থানে একই প্রকল্পে পরপর দুদিন ছাপা হলো ভিন্ন দু’রকমের তথ্য সম্বলিত বিজ্ঞাপন!

বিজ্ঞাপনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে কে সত্য? কোন কোম্পানির প্রচার করা তথ্যটি সত্য? আর কে সরাসরি প্রতারণা করেছে বিজ্ঞাপন দিয়ে? এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষুদ্ধ মত প্রকাশ করেছেন অনেকেই। একে প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরাও।

রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রথম আলো’র প্রথম পাতার প্রধান শিরোনামের উপরে আট কলাম জুড়ে আবুল খায়ের গ্রুপের শাহ সিমেন্ট কোম্পানির একটি বিজ্ঞাপন প্রচার হয়। বিজ্ঞাপনে ‘শাহ সিমেন্ট লেগো দিয়ে লেখা হয়- ‘মেট্রোরেলে ব্যবহার হচ্ছে’। ডান পাশে মেট্রোরেলের একটি ছবি।

এর পরের দিন সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) একই স্থানে ছাপা হয় বসুন্ধরা গ্রুপের সিমেন্ট বসুন্ধরা সিমেন্টের বিজ্ঞাপন। একই ভাবে তারাও ৮ কলাম জুড়ে বিজ্ঞাপন দেয়। সেখানে বাম পাশে মেট্রোরেলের ছবি দিয়ে লেখা হয়- ‘একমাত্র বসুন্ধরা গ্রুপের সিমেন্ট দিয়ে নির্মিত হচ্ছে মেট্রোরেল।’

পরপর দুই দিন দুই কোম্পানির একই প্রকল্প নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচারের ঘটনায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। সেই সাথে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনগণের সাথে কিভাবে প্রতারণা হচ্ছে সেই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। প্রশ্ন উঠেছে বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও বিজ্ঞাপন নীতিমালার বিষয়েও। অনেকেই মন্তব্য করেছেন প্রথম সারির একটি পত্রিকায় এমন প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করে নিজেদের ভাবমূর্তিই শুধু ক্ষুণ্ণ হয়নি, সেই সাথে কোম্পানিগুলোর প্রতারণায় সহায়ক হিসেবেও কাজ করছে গণমাধ্যমগুলো।

২০১৩ সালে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালার ৪.২.২ ধারায় বলা হয়েছে ‘বিজ্ঞাপনে এমন কোন বর্ণনা বা দাবি প্রচার করা যাবে না যাতে জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতারিত হতে পারে।’

ফেসবুকে প্রকাশিত বিজ্ঞাপন দুটির কাটিং তুলে ধরে- সাইদুর রহমান সাগর নামে একজন মন্তব্য করেন- এটি ‘বাটপারি’।

শুধু পত্রিকার বিজ্ঞাপনই নয় শাহ সিমেন্ট এবং বসুন্ধরা সিমেন্টের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েব সাইটেও এই তথ্য পাওয়া গেছে। তবে পাঠকের অভিযোগের তীর বসুন্ধরা সিমেন্টের দিকে, তাদের ‘একমাত্র’ শব্দ ব্যবহারে।

এ ব্যাপারে শাহ সিমেন্টের সিনিয়র মার্কেটিং এন্ড সেলস বিভাগের মহসিন সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘মেট্রো রেলের নির্মাণ কাজে আমাদের সিমেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে কেউ একমাত্র দাবি করলে আমাদের কিছু করার নাই।’

এ বিষয়ে মতামত জানতে বসুন্ধরা সিমেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মুঠোফোনে সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে ফোন করা হলেও ফোনটি রিসিভ হয়নি।

প্রথম আলোর বিজ্ঞাপন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘বিজ্ঞাপনতো বিজ্ঞাপনের মত যাবে।’ বিজ্ঞাপন নীতিমালা কি বলছে সেটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে জানতে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন। তবে বিজ্ঞাপন নিয়ে যদি সমস্যা হয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিব।’

এ ব্যাপারে জানতে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানকে ফোন দেয়া হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের দেশে বিজ্ঞাপন যেগুলো প্রচার হচ্ছে সেটা টেলিভিশন চ্যানেল হোক, রেডিও হোক আর পত্র পত্রিকায় হোক নীতিমালাগুলো দেখার জন্য কোনো সংস্থা নাই। তবে যখন একটা পক্ষ বলছে তাদেরটা ব্যবহৃত হচ্ছে, সঙ্গে অন্য একপক্ষ যদি বলে একমাত্র তাদেরটা ব্যবহৃত হচ্ছে। তখন বুঝতে হবে কোনো একটা পক্ষ মিথ্যা বলছে।’

বিজ্ঞাপন শিল্প নিয়ে সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের দেশে বিজ্ঞাপন শিল্প অনেক বিস্তার লাভ করেছে। এখন যারা এটা পরিচালনা করেন, যারা বিজ্ঞাপন দেবেন, যারা বিজ্ঞাপন তৈরি করবেন তাদের সবারই দায়িত্বশীল আচারণ আমাদের কাম্য। যদি এই ধরণের মিথ্যাচার ঘটে থাকে তাহলে এটা দেখার জন্য আমাদের একটা কমিশন দরকার। তবে বিজ্ঞাপনটা দেখার পর আমি পাঠক হিসেবে নিজেকে প্রতারিত মনে করছি।’

সোমবার ফেসবুকেও অনেকেই পত্রিকার কাটিং তুলে ধরে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। তানিয়া এ্যানি নামে একজন লিখেছেন, একটা স্থাপনা তৈরীতে বিভিন্ন কোম্পানির সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়, হতেই পারে। তাই দাবিদার অসংখ্য কোম্পানি হতেই পারে। কিন্তু কেউই নিজেকে ‘একমাত্র’ দাবি করাটাই অযৌক্তিক।

মিরাযুল ইসলাম বলেছেন, প্রশ্নটা একটু ভিন্ন হতে পারে, প্রথম আলো তুমি কার? আজ শাহ সিমেন্টের, কাল বসুন্ধরার!

সঞ্চারি সাবিহা লিখেছেন, দোষ বসুন্ধরার, সেতু/ব্রিজ এসব তৈরি করতে গেলে বিভিন্ন ধরণের সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। বসুন্ধরা সেখানে একমাত্র বলেই ভুল করেছে। আর পত্রিকার দোষ দিয়ে লাভ নেই,তারা টাকা পেলেই যেন চোখ বুজে বিজ্ঞাপন ছাপাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Jeho zdání klamu: tuto hádanku rozluští jen ti nejpozornější lidé Jak lidé s nadlidským zrakem zachrání psa v optickém Jak připravit lahodné palačinky s Nutellou: rychlá Co se v parku děje špatně: pouze skutečný „Sherlock Záhadné hádanky: najděte správné číslo v rovnici Hledání citronu: rychlá
Close
Close