প্রধান শিরোনামরাজস্বশিল্প-বানিজ্য
পোশাক খাতের অস্বস্তি ইআরকিউ ফান্ডের উৎসে কর
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রফতানি উন্নয়নের লক্ষ্যে এক্সপোর্টার রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) ফান্ড থেকে বিভিন্ন ব্যয়ের বিপরীতে ২০ শতাংশ উৎসে আয়কর কেটে রাখছে ব্যাংক। এটি পোশাক খাতের রফতানি উন্নয়নের জন্য বড় বাধা হিসেবে দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
এ কারণে ইআরকিউ ফান্ড থেকে রফতানি উন্নয়নের জন্য যেসব ব্যয় হয় তার বিপরীতে উৎসে আয়কর না কাটার দাবি জানিয়েছেন পোশাক রফতানিকারকরা। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) থেকেও সম্প্রতি একই দাবি জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেয়া হয়েছে। যার অনুলিপি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকেও দেয়া হয়েছে।
পোশাক রফতানির সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, ইআরকিউ ফান্ডের অর্থ ব্যয় হয় রফতানি উন্নয়নের লক্ষ্যে। কোনো ব্যক্তিগত খরচের জন্য ইআরকিউ ফান্ডের অর্থ ব্যয় হয় না। কমপ্লায়েন্স অডিট ফি, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ইআরকিউ ফান্ড থেকে অর্থ পরিশোধ হয়।
রফতানি উন্নয়নের লক্ষ্যে এসব ব্যয় হলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, এ ব্যয়ের বিপরীতে ব্যাংক ২০ শতাংশ উৎসে আয়কর কেটে রাখে, যা পোশাক খাতের রফতানি উন্নয়নের জন্য একটি বড় বাধা। বর্তমান পরিস্থিতিতে রফতানিুমখী একটি শিল্পকে টিকিয়ে রাখাই কষ্টকর। সেখানে এ ধরনের বাড়তি ব্যয় সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এদিকে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে রফতানির বৃহৎ স্বার্থে ইআরকিউ ফান্ড থেকে রফতানি উন্নয়নের জন্য যে ব্যয় হয়, তার বিপরীতে উৎসে আয়কর না কাটার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বিজিএমইএ।
বিজিএমই’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালামের সই করা এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের রফতানি কার্যক্রম থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার একটি নির্দিষ্ট অংশ ইআরকিউ ফান্ডে জমা রাখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে রফতানি উন্নয়নের জন্য ইআরকিউ ফান্ড থেকে বিভিন্ন ব্যয় সম্পাদন হয়।’
‘যেমন- বিদেশি ব্র্যান্ড ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের মনোনীত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রতি বছর কারখানা প্রতিষ্ঠানের কমপ্লায়েন্স অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয় এবং অডিট ফি ইআরকিউ ফান্ড থেকে বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে পরিশোধ হয়। এসব অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন না হলে ক্রেতা কর্তৃক রফতানি আদেশ প্রদান করা হয় না’ বলে চিঠিতে উল্লখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ইআরকিউ ফান্ড থেকে কমপ্লায়েন্স অডিট ফিসহ অন্যান্য ফি পরিশোধের সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক উৎসে আয়কর বাবদ ২০ শতাংশ কেটে রাখে। রফতানি সংশ্লিষ্ট সব ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের জন্য ইআরকিউ ফান্ড থেকে যা ব্যয় হয়, তার বিপরীতে উৎসে আয়কর কর্তন কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। ফলে দেশের রফতানি শিল্পের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।’
‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে এমনিতেই দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের রফতানিকারকরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মাঝে টিকে থাকার নিমিত্তে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তৈরি পোশাক শিল্পের রফতানি সক্ষমতা ধরে রাখার লক্ষ্যে সরকার নানামুখী প্রণোদনা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে’ বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বিজিএমইর সাবেক সভাপতি এবং ইভিন্স টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘ইআরকিউ ফান্ডের অর্থ ব্যক্তিগত কাজে খরচ করা হয় না। বিদেশ থেকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়, কমপ্লায়েন্স অডিট কার্যক্রমের ফি পরিশোধসহ রফতানি উন্নয়নের জন্য ব্যয় হয় এই ফান্ড থেকে। সুতরাং এই ফান্ডের অর্থের ওপর থেকে উৎসে আয়কর কাটা কিছুতেই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না।’
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতির দায়িত্ব পালন করা এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, এখন এক ডলার সেভ করাই আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখন কেউ মুনাফার চিন্তা করে না। কীভাবে আগামী মাসগুলোতে সার্ভাইব (টিকে থাকা) করা যাবে— এটাই হচ্ছে বড় বিষয়। এমন পরিস্থিতিতে এক পয়সা আননেসেসারি (অপ্রয়োজনীয়) ব্যয়ও ক্ষতিকর।
/এন এইচ