আমদানি-রপ্তানীদেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
পেঁয়াজের দামে সেঞ্চুরি
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। এতে করে গত ২৪ ঘণ্টায় রান্নায় অতি প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। এতে করে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মতিঝিল, মুগদা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, পাইকারি বাজারেও ২৪ ঘণ্টায় ব্যবধানে ১৫-২০ টাকা বেড়ে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মুগদার মুদি ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, গত কয়েক সপ্তাহ দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা ও ভারতের পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু কালকে (রোববার) শ্যামবাজারে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দেখি, সেখানেই বিক্রি করছে ৮০ টাকা। ভারতের রফতানি বন্ধের খবরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে খুচরা বিক্রি করি। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে আমাদের কিছু করার থাকে না।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ও আলহাজ ভান্ডারের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজের রফতানি মূ্ল্য তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়। পরে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩৫-৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ দাম বেড়ে ৬০-৬৫ টাকায় ওঠে। এতদিন এ দরেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল। গতকাল সকালেও ওই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। কিন্ত বিকেলে যখন বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর আসল ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে, তারপর থেকেই দাম বাড়তে থাকে।’
তিনি বলেন, আজকে আমদানি করা পেঁয়াজ (ভারত) পাইকারি বিক্রি করছি ৭৭-৮২ টাকা, বার্মা পেঁয়াজ ৭৫-৭৭ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৮০-৮৫ টাকা। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দাম ২০-২৫ টাকা বেড়েছে বলে স্বীকার করেন এই পাইকারি ব্যবসায়ী।
খিলগাঁওয়ে পেঁয়াজ কিনতে আসা কবির আহমেদ নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘প্রতিদিনই পেঁয়াজ লাগে। গতকাল শুনলাম ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে। পেঁয়াজের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু একদিনে এত বাড়বে? আজকে দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকা চাচ্ছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ক্রেতা বলেন, ‘কাল ঘোষণা দিল আর আজ ৩০ টাকা দাম বেড়ে গেল? একদিনে এত কেন বাড়ল? সরকার কেন এটির তদারকি করে না?’
তিনি বলেন, কোনো পণ্যের দাম বাড়লে খরচ বাড়ে আমাদের। কিন্তু আমাদের তো বাড়তি আয় নেই। তাই পণ্যের দাম বাড়লে বিপাকে পড়ি আমরা সাধারণ ভোক্তারা। আমাদের দেখারও কেউ নেই।
এদিকে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীর খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। প্রথমে পাঁচটি স্পটে এ কার্যক্রম শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে আজ সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) থেকে ৩৫টি ট্রাকে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। একজন ডিলার কেজি ৪৫ টাকা দরে প্রতিদিন এক হাজার কেজি (এক টন) পেঁয়াজ বিক্রি করবে।’
তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজের পাশাপাশি দুর্গাপূজা উপলক্ষে ন্যায্যমূল্যে তেল, চিনি ও মসুর ডাল বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে তেল লিটার ৮৫ টাকা, চিনি কেজি ৫০ টাকা এবং মসুর ডাল ৫০ টাকায় বিক্রি করছে টিসিবি।
এদিকে ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে দেশের উৎপাদন হয় ১২-১৩ লাখ মেট্রিক টন। বাকি ১০-১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যার অধিকাংশই আসে ভারত থেকে।
বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ভারতের বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হওয়ায় চলতি বছরে মৌসুমি পেঁয়াজ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশটি পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণ বিষয়ক মুখপাত্র সীতাশু কর বলেন, ‘রফতানি নীতির সংশোধন করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের পেঁয়াজ রফতানিতে এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।’
ভারত হলো গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রফতানিকারক দেশ। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের বেশকিছু শহরে সবজির মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। উৎপাদন কম এবং বছরের শেষে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচন। তাই ভোগ্যপণ্য বিষয়ে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানাচ্ছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত জুনে ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করলে সরকার তখন রফতানি ১০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেয়। মূলত আগের বছরের মজুত থেকে এ বছরে পেঁয়াজ সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বপনে বিলম্ব হওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে দেশটি।
/আরএইচ