দেশজুড়ে
পুলিশ কারো বাবার চাকর নয়: বোয়ালখালী থানার ওসি
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ডেঙ্গু বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির অংশ হিসেবে বোয়ালখালীর সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে অনুষ্ঠিত ওই সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য বোয়ালখালীর সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন আহ্বান করেন সাংবাদিকদের কাছে। এ সময় সংসদ সদস্য জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ’র স্থানীয় প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাব দিতে শুরু করলে বোয়ালখালী থানার ওসি নেয়ামত উল্লাহ দাঁড়িয়ে যান।
তিনি ঐ দৈনিকে বুধবার প্রকাশিত মাদকসংক্রান্ত একটি সংবাদকে অসত্য দাবি করেন বলেন, সংবাদে যাকে মাদক ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সাইদুল ইসলাম রাসেল যুবলীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক। পুলিশ রাসেলকে মদসহ ধরেনি। মদগুলো (বস্তাভর্তি চোলাই মদের বোতল) পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। তবে রাসেলের কাছ থেকে মাদক বিষয়ে পুলিশ অনেক তথ্য পেয়েছে।
এ সময় ঐ প্রতিনিধি ওসি নেয়ামত উল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দেন, কড়লডেঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মনছুর আহমদ ও ইউপি সদস্য মো. করিম দুজনই জানিয়েছেন, ‘রাসেল মদ ব্যবসায়ী’।
এ কথায় ওসি নেয়ামত উল্লাহ আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং চিৎকার করে বলেন, ‘পুলিশ কারো বাবার চাকর নয়।’ তাঁর এই আস্ফালনে পাশে বসা সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল নির্বাক হয়ে পড়েন।
এ সময় স্থানীয় সংবাদকর্মীরা সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান। বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বোয়ালখালী প্রেস ক্লাব ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম বোয়ালখালী শাখা এ ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত প্রসঙ্গে দৈনিক কালের কণ্ঠের ঐ প্রতিনিধি জানান, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সংসদ সদস্য বাদল জনগণকে বসতঘরের আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানান। পরক্ষণে তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকে প্রশ্ন আহ্বান করেন। তখন আমি দুটি প্রশ্ন করি। একটি ছিল, ‘আপনি ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বলেছিলেন বোয়ালখালীতে হয় সংসদ সদস্য বাদল থাকবে, না হলে মাদক। এখন তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আপনি। কিন্তু এখনও মাদক আছে। সম্প্রতি পুলিশ অবৈধ মদসহ একজনকে আটকের পর তাকে ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।’
সংসদ সদস্য মাদকসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় ওসি নেয়ামত উল্লাহ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁর ভাষ্য, রাসেল যুবলীগ নেতা। দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদটি মিথ্যা। তখন ঐ প্রতিনিধি ওসিকে বলেন, ‘যে রাসেলকে যুবলীগ নেতা বলছেন, সেই রাসেলকেই কড়লডেঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ মদ ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ পাঠিয়েছে। এ ছাড়া নিউজ অসত্য হলে আপনি অথবা রাসেল প্রতিবাদ করতে পারেন।’
একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রকাশ্যে সভায় ‘পুলিশ কারো বাবার চাকর নয়’ এমন বক্তব্য দিতে পারেন কি না—জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেছেন, ‘ওই সভায় আসলে কী হয়েছে, সেই বিষয়ে আমি জানি না। আমাকে কেউ কিছু বলেনি। আপনার (প্রতিবেদক) কাছেই শুনলাম। যদি ওসি এ ধরণের কিছু বলে থাকেন, তাহলে তা হবে খুবই খারাপ কথা। আমি এ বিষয়ে ওসির সঙ্গে কথা বলছি এক্ষুনি। ঘটনা সত্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সুত্রঃ কালের কণ্ঠ