দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
পিছিয়ে যাচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন
মার্চে নয়, রমজানের পর ভোট করার চিন্তা ইসির
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ পিছিয়ে যাচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। আগামী মার্চে দেশব্যাপী বড় পরিসরে ইউপি নির্বাচন শুরু করার কথা থাকলেও তা পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে ঈদের পর এ ভোট শুরুর চিন্তা করছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। ২ মার্চ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা এবং মধ্য এপ্রিলে রমজান শুরু হওয়ার কারণে এ নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে এপ্রিলের মধ্যে মেয়াদ শেষ হবে এমন ২০-২৫টি ইউপিতে রমজানের আগে ভোট হতে পারে। এ ছাড়া ২১ মার্চের মধ্যে ৭৫২ ইউপিতে ভোট করার আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। নির্বাচন আইন অনুযায়ী ‘দৈব-দুর্বিপাকজনিত বা অন্যবধি কোনো কারণে নির্ধারিত পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে, সরকার লিখিত আদেশ দ্বারা, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিংবা অনধিক ৯০ দিন পর্যন্ত, যা আগে ঘটবে, সংশ্লিষ্ট পরিষদকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্ষমতা দিতে পারে।’ বর্তমানে সারা দেশে ইউপি সংখ্যা ৪ হাজার ৪৮৩টি। এর মধ্যে ছয় ধাপে ভোট হয়েছে ৪ হাজার ৩২১টিতে এবং অন্যান্য সময়ে ভোট হয়েছে ১৬২টিতে। ২১ মার্চের মধ্যে নির্বাচনী সময় শেষ হবে ৭৫২ ইউপির, ৩০ মার্চ সময় শেষ হবে ৬৮৪ ইউপির, ২২ এপ্রিল সময় শেষ হবে ৬৮৫ ইউপির, ৬ মে সময় শেষ হবে ৭৪৩ ইউপির, ২৭ মে সময় শেষ হবে ৭৩৩ ইউপির এবং ৩ জুন শেষ হবে ৭২৪ ইউপির মেয়াদ।
জানা গেছে, চলতি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তফসিল দিয়ে মার্চের মাঝামাঝি ৭ শতাধিক ইউপিতে ভোট করার কথা ছিল। কিন্তু ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হবে ২ মার্চ। তাই তালিকা চূড়ান্ত না করে এ নির্বাচনের তফসিল দিতে চাইছে না কমিশন। কেননা তালিকা চূড়ান্ত না হলে নতুন ভোটাররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোটদান করতে পারবেন না। তাই আইনি জটিলতা এড়াতেই ইসি এ নির্বাচন পিছিয়ে দিচ্ছে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে রমজানের আগে বড় পরিসরে ইউপি নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না। এক চিঠিতে বলা হয়েছে, রমজানের আগে ইউপি নির্বাচন কতটুকু করা যাবে তা সন্দিহান। কর্মকর্তারা বলেছেন, এপ্রিলের মধ্যে যেসব ইউপির মেয়াদ শেষ হবে সেগুলোর নির্বাচন করা যায় কিনা সে চিন্তা করা হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রেও সবকটির নির্বাচন সম্ভব হবে না। রমজানের আগে ২০-২৫টিতে নির্বাচন হতে পারে।
ইউপি ভোটের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেছেন, ‘২ মার্চ ভোটার তালিকার সিডি হওয়ার কথা। ওই কাজটা যদি আমরা সঠিকভাবে করতে পারি তাহলে মে মাসে যেগুলোর মেয়াদ শেষ হবে সেগুলোর নির্বাচন হতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন সভা করে সে সিদ্ধান্ত নেবে।’
তিনি বলেন, ‘হালনাগাদ ভোটার তালিকা ও আগের ভোটার তালিকা (কমফাইল) একসঙ্গে করে যদি আমাদের হাতে সময় থাকে তবে আমরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করব। ইউপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা দুটি বিষয় দেখব। প্রথমত রমজান, দ্বিতীয়ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত আছে কিনা। হালনাগাদ তালিকা ও আগের তালিকা একসঙ্গে করে যদি ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে পারি তবে রমজান দেখে আমরা কিছু নির্বাচনের তফসিল দিতে পারি।’ তফসিল কবে হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যদি হয় তবে মার্চে হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে ৪ শতাধিক ইউপি নির্বাচন-উপযোগী হবে। তবে সবকটিতে একসঙ্গে নির্বাচন করতে পারব কিনা সন্দেহ আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তো রমজানে নির্বাচন করতে পারব না। আবার ভোটার তালিকা যদি প্রস্তুত না হয় তা হলেও নির্বাচন করতে পারব না। এ দুটি বিষয়ে যদি বাধা না হয় তবে যতগুলো পারব নির্বাচন করব।’ তিনি বলেন, ‘যদি রমজান এসে যায় এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে না পারি তবে (নির্ধারিত পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে) একটা বিধি আছে আমরা তার প্রয়োগ করব।’ স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে পরিষদের মেয়াদের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘কোন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, …সংশ্লিষ্ট পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠানের তারিখ হতে পাঁচ বছর সময়ের জন্য উক্ত পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন।’ পরিষদের নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘পরিষদ গঠনের জন্য কোন সাধারণ নির্বাচন ওই পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ হতে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।’ আইনে উল্লেখ রয়েছে, ‘দৈব-দুর্বিপাকজনিত বা অন্যবধি কোন কারণে নির্ধারিত পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে, সরকার লিখিত আদেশ দ্বারা, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিংবা অনধিক ৯০ দিন পর্যন্ত, যা আগে ঘটবে, সংশ্লিষ্ট পরিষদকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্ষমতা দিতে পারে।’ এ বিষয়ে ১০ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তৎকালীন সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেছিলেন, আগামী ২১ মার্চ বেশ কিছু ইউপির মেয়াদ শেষ হবে। তাই এর ৪৫ দিন আগেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার চিন্তা করা হচ্ছে। এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যালট-ইভিএম দুই পদ্ধতিতেই ভোট গ্রহণ হবে। ইসির কর্মকর্তারাও বলেছিলেন, প্রথম ধাপের ভোট মার্চের মাঝামাঝি হতে পারে। দ্বিতীয় ধাপের ভোট মার্চের শেষে এবং এপ্রিলে তৃতীয় ধাপের ভোট হতে পারে। এ জন্য ফেব্রুয়ারির শুরুতে তফসিল ঘোষণা করবে কমিশন। এবার ব্যালট পেপারের পাশাপাশি উপজেলার সদর ইউপিগুলোয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনাও রয়েছে। আইন অনুযায়ী ২১ মার্চের মধ্যে প্রথম ধাপের নির্বাচন করতে হবে কমিশনকে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে মোট ছয় ধাপে ৪ হাজারের বেশি ইউনিয়নে ভোট আয়োজন করে কমিশন। প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপির ভোট হয় ২২ মার্চ। এরপর ৩১ মার্চ, ২৩ এপ্রিল, ৭ মে, ২৮ মে ও ৪ জুন ভোট হয়। তবে এবার ইউপি সংখ্যা কিছু বেড়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে কমিশন। গতবারের মতো এবারের ইউপি ভোটও হবে দলীয় প্রতীকে।
/এন এইচ