ভ্রমন
পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিয়েছেন ৩০০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ভ্রমণ প্রতিটি মানুষেরই স্বপ্নের একটি অংশ। অনেকেই দেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দেন শুধুমাত্র ভ্রমণের জন্য। আবার কেউ কেউ দেশের প্রতিটি জেলায় ভ্রমণ করেন।
যানবাহন করে বেশিরভাগ মানুষ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা স্থানগুলোতে। তবে অনেকেই মোটরসাইকেল কিংবা সাইকেলে করে শত শত কিলোমিটার পাড়ি দেন। কিন্তু নতুন করে দেশ ভ্রমণের জন্য হাইকিং দিন দিন এ প্রজন্মের কাছে বেশ রোমাঞ্চকর বিষয় হয়ে উঠছে।
শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তি আর মনোবল থেকেই যে শত শত কিলোমিটার পাড়ি দেয়া যায় তাই প্রমাণ করলেন তিন তরুণ। পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিয়েছেন ৩০০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ।
সীমান্তে নির্বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ করা, বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ ও গৃহ নির্যাতন বন্ধ করা দাবি নিয়ে এই তিন তরুণ গত ৩১ আগস্ট জামালপুরে বকশীগঞ্জ উপজেলা লাউচাপড়া থেকে শুরু করেন তাদের এই হাইকিং মিশন। যা কিনা বুধবার বিকেলে সিলেটের তামাবিলে এসে শেষ হয়।
টানা ১০ দিন তারা হেঁটেছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড় বেষ্টিত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেষা রাস্তা দিয়ে। রোমাঞ্চকর এই যাত্রার মধ্য দিয়ে দেশের হাইকিং প্রেমীদের জন্য তৈরি হলো নতুন একটি স্পট। এর আগে সীমান্তঘেঁষা অসমতল এই পথ দিয়ে কেউই হাইকিং এর মত চ্যালেঞ্জিং এই যাত্রায় অংশ নেননি। কিন্তু সবার ধারণাকে পাল্টে দিয়ে সীমান্তের এই পথ ধরে পাহাড়, নদী ও হাওর পেরিয়ে তিনশ’ কিলোমিটারের হাইকিং মিশনের যাত্রার পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন উদ্যমী এই তিন তরুণ।
সীমান্ত এই পথে প্রথম হাইকিং মিশন সেই সঙ্গে তিন তরুণের এক সঙ্গে এটি ছিলো প্রথম কোনো হাইকিং মিশন তাই সব মিলিয়ে বিষয়টি ছিলো বেশ আনন্দের ও উত্তেজনাপূর্ণ। ৩১ই আগস্ট জামালপুরের লাউচাপড়া থেকে সকাল ৯ টায় শুরু করেন তাদের যাত্রা। দীর্ঘ ২৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পৌঁছান শেরপুরে রাংটিয়ায়। সেখান থেকে আবারো যাত্রা শুরু করে হালুয়াঘাট, দুর্গাপুর, পাঁচগাঁও, নীলাদ্রি লেক, মথুরাকান্দি,বাংলা বাজার, বিছানাকান্দি, জাফলং হয়ে বুধবার বিকেল চারটায় সিলেটের তামাবিল জিরো পয়েন্টে এসে তাদের হাইকিং মিশন শেষ হয়।
এই হাইকিং মিশনে তাদের সময় লেগেছে দশ দিন। এর মাঝে তারা মোট হেঁটেছেন ৮০ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। এদিকে পাহাড়-নদী হাওর ও ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটসহ মোট ছয়টি জেলাও অতিক্রম করেছেন তারা। হাইকিং মিশনে অংশ নেয়া ঢাকার ফার্মগেট এর বাসিন্দা বিডি রায়হান, রংপুরের বাসিন্দা আশরাফী আরাফাত আকাশ ও চাঁদপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ রাফি চ্যালেঞ্জিং এই যাত্রার গল্প শুনিয়েছে ডেইলি বাংলাদেশকে।
তারা জানান, শুরুর দিকে এই হাইকিং মিশন অনেক চ্যালেঞ্জিং ভাবেই নিয়েছি। দীর্ঘ আট মাস পরিকল্পনার পর এমন একটি মিশনে বের হয়েছি আমরা। দেশে হাইকিংয়ের জন্য অনেক পথ আছে। তারপরও আমরা সীমান্তঘেঁষা এই পথ বেছে নিয়েছি। কারণ এর আগে এই রুটে কখনোই হাইকিং হয়নি। তাই আমরা এই প্রথম এই পথে যাত্রা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
শুরুতে অনেকেই প্রতিবন্ধকতা ও নানামুখী বিপদের সম্মুখীন হতে হবে বলেও ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। তবে সব ভয়-ভীতি কে দূরে ঠেলে মনোবলের প্রত্যয়ে আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করেছি এবং ইনশাল্লাহ সফল ভাবে শেষ করেছি।
তারা আরো জানান, দেশের মানচিত্রের উত্তরে ভারতের মেঘালয়ের তীর ঘেষে বর্ডার রোডে হাইকিং করাটা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। অন্যান্য হাইকিং পথের মত এই হাইকিং পথ সমতল পাকা রাস্তা ছিল না। কখনো ছোট টিলা, কখনো কাদা রাস্তা, কখনো খাল, কখনো নদী পার হতে হয়েছে। ২৫ টি নদী পার হয়েছি যার মধ্যে অনেকগুলোতে নৌকা ছিল না বলে গলা সমান পানিতে ভিজে পার হয়েছি। কখনো বৃষ্টিতে ভিজে, কখনো রোদে পুড়ে, কখনো আহত পা নিয়ে রাত ১১ টা পর্যন্ত হাইকিং করেছি।
জীবনের প্রথম হাইকিং ছিল তার ওপর সম্পূর্ণ নতুন পথ। খুব কম মানুষের এই এডভেঞ্চারাস অ্যামেজিং পথ সম্পর্কে ধারণা আছে। মানুষের সহযোগিতা না পেলে কখনোই এই মিশন সফল হতো না। বিভিন্ন রাত কাটিয়েছি অপরিচিত মানুষের বাসায়, কখনো তাবু করে কিংবা ডাক বাংলোতে। বর্ডার এলাকার মানুষ অসচ্ছল হতে পারে কিন্তু আন্তরিকতায় সবার সেরা। পথিমধ্যে বিভিন্ন বাজারে, পথে-ঘাটে, আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের ৩ টি স্লোগান সম্পর্কে ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে মানুষের মাঝে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়ার৷
অনেকেই আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন তারা যেভাবে আমাদের অতিথি আপ্যায়ন করেছেন তা অতুলনীয় । সর্বোপরি আমাদের দাবি এটাই থাকবে বেশি যেন আর কোনো সীমান্তে মানুষ হত্যা না। সেই সঙ্গে মানসিক চাপে পড়ে বা গৃহে নিজেদের শিকার হয়েও যেন আত্মহত্যার দিকে কেউ পা না বাড়ায়। এদিকে তাদেরই মিশন কে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশ প্রেমিকা।
তারা জানান, সুস্থ থাকার জন্য যেমন হাজার প্রয়োজন তেমনি ভ্রমণ ও মানুষকে সব ক্লান্তি কাটিয়ে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। আর যখন হাঁটার মতো দীর্ঘ ভ্রমণ যাত্রা কথা উঠে তখন নিঃসন্দেহেই বলা যাবে এটি দেহ-মনের জন্য খুবই উপকারী একটি দিক। আর এই এডভেঞ্চারাস অংশ নেয়া তরুণরা যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন তার বাস্তবিক অর্থেই যুক্তিযুক্ত।
তরুণদের এই উদ্যোগ দেশের মানুষকে আরো উৎসাহিত করল হাইকিং মিশনে অংশ নেয়া সেই সঙ্গে সীমান্ত ঘেঁষে অঞ্চলগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল করে গেলে দেশের অর্থনীতিতে যেমন পর্যটনশিল্প অবদান রাখবে তেমনি ভ্রমণপিপাসু হাইকমিশনের মত নানা রকম অ্যাডভেঞ্চাররা সহজে অংশ নিতে পারবেন।
/এন এইচ