দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
পাবনার সুজানগরে অবৈধ বালু উত্তোলন, ভাঙ্গনের কবলে নদী পাড়ের মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা: পাবনার সুজানগরে পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে বসতভিটা সহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদীপাড়ের মানুষ এবং নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত বিঘা আবাদী জমি। স্থানীয়রা নদী ভাঙনের জন্য অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে দায়ী করেছেন। তাদের অভিযোগ, সরকারিভাবে এসব বালু উত্তোলন নিষেধ থাকলেও অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন পয়েন্টে নির্বিঘ্নে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
নাজিরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান খান জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ফকিরপুর, নরসিংহপুর, মানিকহাট ইউনিয়নের বিলমাদিয়া, তিল মাদিয়া, মামুদিয়া, নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের চর বরখাপুর, বিজলীচর, রাণীনগর, বালিয়াডাঙ্গি ও সাদারচর সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম।
নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের বরখাপুর গ্রামের বাসিন্দা খালেক হোসেন কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, তার প্রায় ৫০ বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে, যে বাড়িতে বসবাস করছি সেটাও বর্তমানে ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। বুলচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা মাজেদা খাতুন বলেন নদী ভাঙ্গনের ফলে তার নিজের বসতভিটাটি এরই মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায়, পরিবার নিয়ে বাধের পাশে অবস্থান নিয়েছেন ।
সাতবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাছেত বাচ্চু বলেন, নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য মায়া কান্না না করে প্রশাসন যদি নদী ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নিত, তবে অনেক মানুষের ভিটেমাটি বাঁচত। অবিলম্বে এসব অবৈধ বালুখেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
সরেজমিনে, সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ, সাতবাড়ীয়া, ভায়না ইউনিয়নের ও পৌরসভার সীমান্তবর্তী এবং জৌকুড়া, ধাওয়াপাড়া, কালুখালী প্রস্তাবিত সেনানিবাস এলাকায় পদ্মা নদীর তীরবর্তী পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে বালু তোলা হচ্ছে। ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে বুলচন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান । হুমকিতে পড়েছে নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কোথাও বালুর ইজারা নেই। কিন্তু, আইনের কোন তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে বালু ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলন করছে এবং রাস্তার পাশে স্তুপ করে বালু বিক্রি করছে। স্থানীয়রা জানান, অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা এতটাই শক্তিশালী যে তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বললেই নির্যাতনের শিকার হতে হয়। প্রাণভয়ে তারা কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। স্থানীয়দের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করেছেন, সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন প্রকাশ্যে এভাবে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট জড়িত। বার বার অনুরোধের পরও তাদেরকে থামানো যাচ্ছেনা। এরা এতটাই শক্তিশালী যে আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের পক্ষে তাদের প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজিৎ দেবনাথ জানান, ইতিমধ্যে কয়েকবার মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হয়েছে। বালু উত্তোলনকারীরা অনেক সময় আমাদের আসার খবর শুনে পালিয়ে যায়। অবৈধভাবে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।