দেশজুড়েপ্রধান শিরোনামবিনোদন

নুহাশপল্লীতে নানা আয়োজনে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামে নুহাশপল্লীতে কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করা হয়েছে। আজ ১৯ জুলাই সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে নিহতের ভাই-বোন, শ্বশুর, নুহাশপল্লীর কর্মচারী ও ভক্তবৃন্দ লেখকের কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এদিন সকাল ১০টার দিকে হুমায়ুন আহমদের শ্বশুর প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী ও নুহাশপল্লীর কর্মচারীরা কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং হুমায়ূনের কবর জিয়ারত করেন। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রয়াত লেখকের ছোট ভাই মাসিক উন্মাদের সম্পাদক ও প্রকাশক মো. আহসান হাবীব, তার স্ত্রী আফরোজা আমিন, বোন সুফিয়া হায়দার, রোকসানা আহমেদ ও অভিনেতা সৈয়দ হাসান সোহেল লেখকের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন।

প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ছোটভাই আহসান হাবিব জানান, হুমায়ূন আহমেদের সকল স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে তার অনেক স্বপ্নই বাস্তবায়িত হয়েছে। ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণসহ অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। তিনি প্রকাশক ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি হুমায়ূন আহমেদের লেখাগুলো নির্ভুলভাবে প্রকাশের অনুরোধ করেছে।

তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে পারিবারিকভাবে একটি মিউজিয়ম স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। তাকে নিয়ে একটি আর্কাইভ নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে গবেষণা করছেন। এ আর্কাইভ গবেষণা কাজে সহায়তা করবে।

হিমু পরিবহনের সভাপতি মো. আসলাম হোসেন জানান, তারা সকালে ঢাকা, ফরিদপুর, নরসিংদী ও গাজীপুর থেকে ৬০ জন হিমু নুহাশপল্লীর কর্মসূচিতে যোগ দেন। হিমুরা একযোগে ৪০ জেলায় একযোগে তাদের প্রিয় লেখকের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালন করছে। তার মধ্যে বৃক্ষরোপণ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, বইমেলা রয়েছে। হিমুদের উদ্যোগে ইতোমধ্যে ১০টি জেলা পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে।

লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তার দুই ছেলে নিশান ও নিনিদ দেশের বাইরে থাকায় লেখকের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূসিতে তারা যোগ দিতে পারেননি।

শাওনের বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী জানান, শাওন চলচ্চিত্র বিষয়ক ছয় মাসব্যাপী এক প্রশিক্ষণ নিতে নিশাদ ও নিনিদকে সঙ্গে গত মে মাসে আমেরিকা গেছেন। এজন্য তারা এ কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেননি। তবে শাওন নিউইয়র্কে একটি স্মরণসভায় যোগ দেবেন।

২০১২ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, দিনটি উপলক্ষ্যে সকাল থেকে কোরআনখানির আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া স্যারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার এতিম শিশু ছাড়াও অতিথিদের দুপুরের খাওয়ার আয়োজন করা হয়।

তিনি জানান, হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও বটে। ১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হয়। এর পরপরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মরণব্যাধি ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের জুলাই মাসের ১৬ তারিখে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সেই অবস্থাতেই ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নিউইয়র্ক থেকে ২০১২ সালের ২৩ জুন দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। ২৪ জুন তাকে সমাহিত করা হয় তার গড়ে তোলা গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোটো ভাই। ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোটো আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close