দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
নারীঘটিত দ্বন্দ্ব, সাইফুলকে গলা কেটে হত্যা করেছে তারই বন্ধু শুভ
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে নারী সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের জের ধরেই ওষুধের দোকানের কর্মচারী সাইফুল ইসলামকে গলা কেটে করে হত্যা করেছে তারই বন্ধু শুভ। বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে আসামি শুভ সাইফুলকে হত্যার দায় স্বীকার করে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়।
নারায়ণগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের আদালতে শুরু এ জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
সন্ধ্যায় আড়াইহাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম আদালতে শুভ’র এ জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহত সাইফুল ইসলাম ও আসামি শুভ রায়ের মধ্যে নারীঘটিতসহ নানা বিষয়ে মনমালিন্য ছিল। ক্ষিপ্ত শুভ পরিকল্পিতভাবে একাই সাইফুলকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে পরে গলা কেটে হত্যা করে।
এর আগে বুধবার বিকেল চারটার দিকে আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী বাজার এলাকার বড় মসজিদ মার্কেটের ছাদ থেকে সাইফুলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার দিনগত রাতে নিহত সাইফুলের বোন লিজা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। রাতেই আড়াইহাজার থানা পুলিশ উপজেলার গোপালদী বাজার থেকে হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে সাইফুলের বন্ধু শুভ রায়কে (২০) গ্রেফতার করে।
পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি শুভ তার বন্ধু সাইফুলকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে এবং আদালতে জবানবন্দি দিতে সম্মত হলে পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে।
আসামির দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোপালদী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আজহারুল ইসলাম জানান, বুধবার বিকেলে সাইফুল ইসলামের গলা কাটা লাশ উদ্ধারের পরই সাইফুলের সহকর্মী মনির ফার্মেসির কর্মচারী শুভ রায়কে উপজেলার উলুকান্দি পূর্বপাড়া তার মামা বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুলিশের কাছে সে হত্যার কথা স্বীকার করে।
তার দেয়া তথ্যমতে, গোপালদী এলাকার একটি নর্দমা থেকে একটি রক্ত মাখা প্যান্ট উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার দুই দিন আগে শুভ সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি ছোরা কিনে রাখে।
তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, আসামি শুভ রায় কুমিল্লার মুরাদনগর থানার লাজৈর ইলিয়টগঞ্জ এলাকার শংকর রায়ের ছেলে। সে উলুকান্দী পূর্বপাড়া এলাকার শুশান্তর ভাগিনা। মামা বাড়িতেই থাকতো শুভ। আসামি শুভ ও তার বন্ধু নিহত সাইফুল গোপালদী বাজারে মনির ফার্মেসিতে চাকরি করতো। সেই সুবাদে দুইজনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়।
শুভ প্রায় সময়ই ফার্মেসি থেকে ঘুমের ট্যাবলেট নিয়ে সেবন করতো। এ বিষয়ে মালিককে বলে দিত সাইফুল। তাছাড়া টাঙ্গাইলের একটি মেয়ের সাথে সাইফুলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ বিষয়টি শুভ জানতো এবং ওই মেয়েকে কেন্দ্র করেও দুই সহকর্মীর মধ্যে ঝগড়াও হয়। এসব নানা কারণে শুভ ক্ষিপ্ত হয়ে সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত মঙ্গলবার রাতে সাইফুল ও শুভ মসজিদ মার্কেটের ছাদে যায়। সেখানে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শুভ তার সাথে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে সাইফুলের পেটে কয়েকটি আঘাত করে শুভ। এতে নাড়িভুড়ি বের হয়ে গেলে শুভ সাইফুলের গলা কেটে ফেলেন। পরে সাইফুলের মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে লাশ ছাদে ফেলে দিয়ে শুভ সেখান থেকে চলে আসে।
নিহত সাইফুল ইসলাম আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী নয়াপাড়া এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ওসমান গণির ছেলে ও গোপালদী পৌরসভার উলুকান্দি পূর্বপাড়া এলাকার বাতেন মুন্সির নাতি। সাইফুল ছোটবেলা থেকে মায়ের সাথে তার নানা বাড়িতে বসবাস করত। নরসিংদী শাটিরপাড়া কলেজে অনার্সে মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল সে।
/এন এইচ