প্রধান শিরোনামস্বাস্থ্য
নমুনা টেস্ট না করায় আতঙ্ক বাড়ছে
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রাজধানীর একটি গার্মেন্ট কারখানার নিরাপত্তাপ্রহরী শহীদুল আলম সম্প্রতি নিজ এলাকা রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর গেছেন। সেখানে বেশ কয়েক দিন হলো সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। দিন দুয়েক বাড়িতে থেকে ওষুধ-পথ্য চালিয়ে গেছেন। এতেও জ্বর না কমলে চিকিৎসার জন্য তিনি যান স্থানীয় হাসপাতালে। তবে নভেল করোনাভাইরাস সন্দেহে শুধু ওই হাসপাতালই নয়, অন্য কোনো হাসপাতালও তার চিকিৎসা দেয়নি। করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য নির্ধারিত রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) হটলাইনে কল দিয়ে বহু চেষ্টায়ও সংযোগ পাওয়া যায়নি। নিরুপায় হয়ে ফিরে এলেও করোনার সব উপসর্গ আছে, এমন দাবি করে স্থানীয়রা তাকে নিজ বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকেও মেলেনি কোনো সহায়তা। সিভিল সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এর পর থেকে খোঁজ মিলছে না শহীদুল আলমের। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে তার মতো একই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে অনেককেই, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়ে তুলছে।
আইইডিসিআরের হটলাইনে এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি কল এলেও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৩৮টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ভাইরাসের বিস্তার রুখতে নমুনা পরীক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বাংলাদেশে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে সে তুলনায় অনেকটাই কম। নমুনা পরীক্ষার পরিসর বাড়ানো না হলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিদেশ ভ্রমণের পূর্ব ইতিহাস না থাকায় অধিকাংশই নমুনা পরীক্ষার সুযোগ পান না। এক্ষেত্রে জেলায় জেলায় পরীক্ষাগার স্থাপন করা যেতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সংক্রমণ ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. ফজলে রাব্বী চৌধুরী বলেন, সমস্যা হলো আমরা খুব বেশি পরীক্ষা করতে পারছি না। ফলে হঠাৎই সংক্রমণের ভয়াবহতা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে লকডাউনের মতো কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া, আরো বেশি বেশি পরীক্ষা করে শনাক্তকৃত রোগীদের আইসোলেশনে রাখতে পারলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। তা না হলে আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরবর্তী সময়ে চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পাঁচ লাখ প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। এ ভাইরাসটির সংক্রমণ বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৩৩১ জনকে। হটলাইনে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ফোন এসেছে এক লাখেরও বেশি। এর বিপরীতে পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ৩৩৮টি নমুনা। দেশে এখন পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত মোট ৪৯ জন শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৯ জন। আর মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের।
এ বিষয়ে বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ৬৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার পরিসর আরো বাড়াতে হবে। কারণ আমরা জানি না কী পরিমাণ করোনা আক্রান্ত রোগী আমাদের দেশে রয়েছে। আইইডিসিআরের হটলাইনে কল করেও সাড়া মিলছে না। অনেকের ফোন রিসিভ করলেও নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। যদি হটলাইনই সেবা দেয়ার একমাত্র মাধ্যম হয়, তাহলে এর পরিসরও বাড়াতে হবে। বগুড়া ও খুলনায় করোনা সন্দেহে দুই ব্যক্তি মারা গেছেন। এসব ঘটনায় অনেকের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। জেলায় জেলায় পরীক্ষাগার স্থাপন করা প্রয়োজন। জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত নন—এমনটি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে এ ধরনের আতঙ্ক রোধ করা যাবে।
এরই মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, করোনা শনাক্তের পরীক্ষার পরিসর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সারা দেশের ১১টি স্থানে পরীক্ষাগার স্থাপন করা হবে। তিন স্থানে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আরো কিছু ভেন্টিলেটর স্থাপনের কাজ চলছে। জেলায় জেলায় পরীক্ষাগার স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। করোনা চিকিৎসায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ৭১০ জন চিকিৎসককে এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বিকেও পরীক্ষার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
/আরএম