করোনাবিশ্বজুড়ে

নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, বাদ পড়ছে তরুণ ও প্রবীণ কর্মীরা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ কভিড-১৯ মহামারী থেকে পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটছে বিশ্ব অর্থনীতি। এক্ষেত্রে কভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম সহায়তা করছে। ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরুদ্ধার হওয়ায় বাড়ছে কর্মসংস্থানও। সংস্থাগুলো নতুন করে নিয়োগ দিচ্ছে এবং বেশির ভাগ উন্নত অর্থনীতির দেশে বেকারত্বের হার কমছে। তবে উন্নত অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান দ্রুত বাড়লেও স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় বাড়ছে ধীরগতিতে। পাশাপাশি কভিড-পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থানে নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মহামারীটি তরুণ ও প্রবীণ কর্মীদের বেকার করেছে এবং অসমতা আরো গভীর হওয়ায় কম মজুরির কর্মীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। খবর ব্লুমবার্গ।

যুক্তরাষ্ট্র: টিকাদান কার্যক্রমের সঙ্গে দ্রুত পুনরুদ্ধার হচ্ছে মার্কিন অর্থনীতি। পাশাপাশি অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত বাড়ছে দেশটির কর্মসংস্থানের হার। মার্চে অর্থনীতিবিদরা ৬ লাখ ৬০ হাজার কর্মসংস্থান যুক্ত হওয়ার পূর্বাভাস দিলেও সংস্থাগুলোয় নতুন করে ৯ লাখ ১৬ হাজার মানুষ যুক্ত হয়েছে। যদিও সেখানে বড় ব্যবধান থেকে গেছে। মহামারীর আগের তুলনায় মার্কিন শ্রমশক্তিতে এখনো প্রায় ২০ লাখ নারী কম রয়েছেন। বিশেষত কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা অন্যান্য গোষ্ঠীর চেয়ে পিছিয়ে পড়েছেন। ব্লুমবার্গ ইকোনমিকস বলছে, সূচকে চলমান প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) দেশটিতে বেকারত্বের হার ৬ শতাংশের নিচে রয়েছে এবং চতুর্থ প্রান্তিকে ৫ দশমিক ১ শতাংশে নামবে।

জাপান: বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান খাত দুর্বলতার মুখোমুখি হয়েছে। হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বারগুলোয় নতুন কর্মী না নেয়ায় প্রাক-মহামারী স্তরের চেয়ে কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে কমেছে। ফোরলগ স্কিম কিংবা ছুটিতে থাকা লোকদের চেয়ে বেকারদের সংখ্যা বেশি এবং সংস্থাগুলোয় কর্মিবাহিনী কমানোর প্রবণতা বাড়ছে। ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের প্রত্যাশা, জাপানে নতুন করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির বেকারত্বের হার ৩ শতাংশে উন্নীত হবে।

জার্মানি: ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় জার্মানিতে চাকরির বাজার দ্রুত পুনরুদ্ধার হচ্ছে। যদিও হাজার হাজার ব্যবসা-বাণিজ্য সাম্প্রতিক প্রসারিত মহামারীজনিত বিধিনিষেধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম এ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান খাত পুরোপুরি পুনরুদ্ধারে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। ব্লুমবার্গ ইকোনমিকস আশা করছে, চতুর্থ প্রান্তিকে জার্মানিতে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশে নেমে যাবে এবং ২০২২ সালের শেষ দিকে ৪ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে।

যুক্তরাজ্য: চার মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো মার্চে সংস্থাগুলোয় বেতন কমে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজার অপ্রত্যাশিতভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। মার্চে নতুন করে অনেক কর্মী চাকরি থেকে বাদ পড়েছিলেন। এটিকে দীর্ঘমেয়াদি যুব বেকারত্বকে একটি বিশেষ উদ্বেগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সামগ্রিক কর্মসংস্থানের সংখ্যা এখনো আট লাখের নিচে রয়েছে। ব্লুমবার্গ ইকোনমিকস আশা করছে, মহামারীতে যুক্তরাজ্যের বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ থেকে ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে যাবে।

ফ্রান্স: প্রথম লকডাউনে বেকারত্বের হার সর্বকালের সর্বোচ্চ থেকে কমে গেছে। যদিও এখনো সেটি প্রাক-মহামারীর চেয়ে নিচে রয়েছে। দেশটিতে প্রশিক্ষণের জন্য নিবন্ধন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ফরাসি কর্মীরা শ্রমবাজারের মৌলিক পরিবর্তনগুলো প্রত্যাশা করছেন।

ইতালি: মহামারী শুরুর পর থেকে ইতালিতে প্রায় নয় লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। মহামারীতে অন্যতম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশটিতে মার্চে কর্মসংস্থানের হার ১০ দশমিক ১ শতাংশে নেমেছে। যেখানে আগের মাসে ১০ দশমিক ২ শতাংশ ছিল। নারী, যুবক ও দেশটির পরিষেবা খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্লুমবার্গ ইকোনমিকস আশা করছে, ২০২০ সালের শেষ দিকে ইতালির বেকারত্বের হার ৮ দশমিক ৯ শতাংশে নামবে।

দক্ষিণ কোরিয়া: চাকরির বাজার পুনরুদ্ধার সবে শুরু হয়েছে পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে। বেশির ভাগ অস্থায়ী কর্মী ও দৈনিক কর্মীর মাধ্যমে পুনরুদ্ধার চালিত হচ্ছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় সব বয়সী কর্মীর বেতন বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে এবং বেকারত্বের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছেন তরুণরা। চলতি বছর দেশটিতে বেকারত্ব ৪ শতাংশে নামবে বলে প্রত্যাশা করছে ব্লুমবার্গ ইকোনমিকস।

বণিক বার্তা/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close