ধামরাইপ্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদনস্থানীয় সংবাদ
ধামরাইয়ে সড়ক জুড়ে বানভাসীদের স্বপ্ন ভাঙ্গার গল্প
রিফাত মেহেদী, বিশেষ প্রতিনিধি: ঢাকা জেলার অন্তর্গত ধামরাই থানার কুল্লা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামই বন্যার পানিতে ডুবেছে। জীবন বাঁচাতে বানভাসীরা বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে রাস্তার দুপাশে। বিশেষ করে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে ধামরাই এর কুল্লা ইউনিয়নের রুপনগরের(ফোর্ডনগর) শত শত পরিবার। সড়কের দুই পাশে পলিথিন বা বস্তা দিয়ে ছাউনী বানিয়ে গৃহপালিত পশুপাখিসহ আশ্রয় নিয়েছে তারা।
ঘুরে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে বন্যার পানি ছুঁই ছুঁই। ফ্রিজ , টিভিসহ নানা আসবাবপত্র সড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে রেখে দিয়েছেন। কেউ পলিথিন, কেউবা টিন দিয়ে অস্থায়ী ছাপড়া তুলেছেন। আবার কেউ রিকশা-ভ্যানের মধ্যে পলিথিন দিয়ে বসবাস করছেন। সেখানেই গবাদি পশু বেঁধে রেখেছেন। খাবার পানির খোঁজে বোতল হাতে ছুটছে কেউ কেউ। সব মিলিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন এখানকার মানুষগুলো।
স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার শুধু কয়েক কেজি চাল দিয়েছে। আর কোন সহায়তা পাননি তারা বলে মন্তব্য করেন রুপনগরের ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা। তার উপর খাবার পানির সংকট। নেই বিদ্যুৎ, নেই শৌচ ব্যবস্থা।
রুপনগরের বাসিন্দা আনিসুর রহমান মিঠু জানান, প্রায় ১৫-২০ দিন ধরে রাস্তায় এসে আশ্রয় নিয়েছেন। রুপনগরের মাঝ দিয়ে যে সড়ক আছে তা ব্যতীত রুপনগর এখন পানির নিচে। সেই সড়কের দুপাশ দিয়েই যতটুকু জায়গা পেয়েছে যে যার মত করে আশ্রয় বানিয়ে নিয়েছে। যতটুকুই সহায়তা এসেছে তাও কেউ পেয়েছেন কেউ বা পাননি।
গরু ছাগল সহ একই ছাউনির নিচে বাস করছেন তারা। এক বেলা খেয়ে-না খেয়েই দিন পার করছেন অনেকে। বেসরকারীভাবে বা ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে চাল ডাল পিঁয়াজ দিয়ে গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এভাবে যা সাহায্য আসে, তা দিয়ে একদিনও চলেনা অনেকের। শুধু রুপনগর নয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ধামরাই এর কুল্লা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামবাসী। তাদের একটাই আবেদন তারা যেন খেয়ে পরে বাঁচতে পারেন। তারা চান সরকারী সহায়তা।
কুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কালিপদ সরকার বলেন, কুল্লা ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড ব্যতীত বাকি ৮ টি ওয়ার্ডে বন্যার পানিতে দুর্ভোগে রয়েছে মানুষ। বানভাসী এই মানুষগুলোর জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে সরকার। থাকার জায়গা নেই, তাই বাধ্য মানুষ সড়কে বসবাস করছে। যদিও তাদের পাশ্ববর্তী স্কুলে আশ্রয় নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তবে তারা যেতে নারাজ। এদিকে সড়কগুলোও ভেঙ্গে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪ টন চাল আমরা দুভাগে বিতরণ করেছি পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে। আমরা আরো বরাদ্দ আনার চেষ্টা করছি ৷ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে ১ টন চাল পেয়েছি। সেটা আগামীতে বিতরণ করা হবে৷ গোখাদ্য যা বরাদ্দ পেয়েছি তা বিতরণ শুরু করবো। ধামরাইয়ের প্রায় ২ হাজার ৭৯৫ পরিবারের এখন বন্যাকবলিত অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলার নির্বাহী অফিসার সামিউল হক জানান, সরকারের তরফ থেকে ত্রাণ ইতমধ্যে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাঝে দেয়া হয়েছে। যাতে করে তারা বন্যাকবলিত মানুষের কাছে পৌছে দেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নিয়মিত খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
/আরএম