কৃষিধামরাইপ্রধান শিরোনামস্থানীয় সংবাদ
ধামরাইয়ের বন্যা কেড়ে নিল ১০ হাজার কৃষকের সর্বস্ব
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ধামরাইয়ে সাম্প্রতিক বন্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার কৃষক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ধামরাই উপজেলা কৃষি অফিসার। বন্যার পানি পূর্বের তুলনায় কমলেও এখনো আবাদের পর্যায়ে আসেনি।
সোমবার (২৪ আগষ্ট) ঢাকা অর্থনীতিকে এই তথ্য জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল হাসান।
ধামরাইয়ে এ মৌসুমে মোট ৬০৩১ হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে ৩৭৯৫ হেক্টর কৃষি জমি। এসব জমিতে আউশ, রোপা আমন, বোনা আমন, বীজতলা, পাট, সবজি, কলা ও লেবুসহ সবধরনের ফসলই বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।
ধামরাই উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী উপজেলার ৭৫০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৭০ হেক্টর জমির লেবুর বাগানেই বন্যার পানি উঠেছিলো। লেবু বাগানে পানি উঠায় বাগান থেকে লেবু তোলা বিপজ্জনক হয়ে উঠে। লেবুর ফলন ভালো হলেও বন্যার পানিতে পঁচে গেছে বেশিরভাগ বাগানের লেবু। পানি উঠা লেবু বাগানের গাছ গুলোও অনেক মরে গেছে। লেবু গাছ রোপন করার কয়েক বছর পর ঐ গাছে ফল আসে। এতে ৮২০ জন লেবু চাষী প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
লেবু চাষী মতিউর রহমান জানান, আমি এ বছরে ১১২ শতাংশ জমিতে লেবুর চাষ করেছিলাম। আমার সব বাগানেই বন্যার পানি উঠায় লেবুর গাছ গুলো মরতে শুরু করেছে। বন্যায় প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হবে আমার।
অন্য চাষী মোঃ রিপন হোসেন জানান, আমি ১৭০ শতাংশ জমিতে লেবুর চাষ করেছি। সব বাগানেই বন্যার পানি উঠায় এখন আর লেবু তোলা যাচ্ছে না। লেবু পনিতে পঁচে যাচ্ছে। আর গাছ গুলো সব মরা শুরু করেছে। সব গাছ মরে গেলে তো আমার পরিবার নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। ধারদেনা করেই আমি এই লেবুর চাষ শুরু করেছিলাম। এখন মানুষের টাকা পরিশোধ করব কিভাবে। পরের জমি কয়েক বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়ে লেবু চাষ করি। লেবু গাছ নতুন করে রোপণ করলেও এর ফল পেতে কয়েক বছর সময় লাগে। পরিবার নিয়ে পথে বসা ছাড়া আর উপায় নেই এখন।
লেবুচাষীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল হাসান। তাদের জন্যে আলাদাভাবে এখনো কোন সহায়তার সুযোগ হয়নি বলেও জানান তিনি। তবে সকল কৃষককেই যথাসাধ্য সহায়তার প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। লেবুচাষীদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে লেবুচাষীদের প্রতিনিয়ত বুদ্ধি-পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
এছাড়াও ৮০২ হেক্টর জমির আউশ ধানের ৬০৩ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। রোপা আমন ও বোনা আমন চাষ হয়েছিল ৩১০৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৬৫০ হেক্টর জমির ফসল। ৪২৫ হেক্টর জমির বীজতলার মধ্যে ৩৭৫ হেক্টর জমির বীজতলাই বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
সবজি চাষ করা হয়েছিল ৮৫১ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৮২০ হেক্টর জমির সবজি। পাট চাষ করা হয়েছিল ৬০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে ৫০ হেক্টর জমির পাট পানিতে নষ্ট হইয়ে গেছে। এ ছাড়াও ধামরাইয়ে কলা চাষ হয়েছিল ৩৮ হেক্টর জমিতে এর মধ্যে বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে ২৫ হেক্টর জমির কলা।
কলা চাষী আবদুর লতিফ জানান, আমি নতুন এবার কলা চাষ শুরু করেছিলাম। খুব ভালো ফলও আসছিল। কিন্তু বন্যার পানিতে সব মরে গেছে। এতে আমার প্রায় দুই লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হবে।
এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল হাসান বলেন, ধামরাই উপজেলা একটি কৃষিনির্ভর উপজেলা। প্রায় ৮ ধরনের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে এই বন্যার পানিতে। আউশ ধানের বেশিরভাগ ফসলই নষ্ট হয়েছে, বীজতলার মধ্যে সমস্ত বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। ধানের বীজতলার জন্য ১ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছি। সেখানে বীজ উৎপাদন করে আমরা কৃষকের মাঝে সুষ্ঠভাবে বন্টন করে দেবো। ধামরাই এর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আমি যোগাযোগ করছি। আশা করি দ্রুতই কিছু সমাধানের পথ তৈরি হবে।
১০০০ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে সবজি বীজ দেয়া হবে। ধানের চারা লাগানোর জন্য ১৬৪০ কেজি বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
/আরএম