কৃষিশিল্প-বানিজ্য
ধানের ভাল মূল্য পাচ্ছে কৃষক
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বোরো ধানের বাম্পার ফলনে গোলা ভরার পাশাপাশি ভাল মূল্যও পাচ্ছে কৃষক। শুরু থেকে সরকারের নানা উদ্যোগে দেশের প্রধান ফসল বোরো নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত মানুষ। করোনার কারণে সম্ভব্য খাদ্য সঙ্কটে এই উৎপাদন আশার আলো দেখিয়েছে। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ধান কৃষক ঘরে তুলে ফেলেছে। বাকি যা রয়েছে ধান খুব বেশি প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে নিরাপদেই ঘরে উঠবে। কিছু এলাকা ছাড়া এবার প্রান্তিক কৃষকরা ধানের দামও পাচ্ছে গত বারের তুলনায় অনেক ভাল। ধান কাটায় যান্ত্রিক ব্যবহারে খরচও কম হয়েছে। তবে কিছু কিছু এলকায় ধান ক্রয়ে জটিলতায় মূল্য কিছুটা কম বলে জানা গেছে।
উত্তরবঙ্গসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকায় এখনও পুরোপরি ধান বাজারে আসেনি। ধান উঠতে দেরি থাকলেও বোরো সংগ্রহের জন্য কৃষকের তালিকা ধরে লটারির কার্যক্রম চলছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম পূর্ণোদমে শুরু হলে এইসব এলাকায়ও তখন আর মূল্য কম থাকবে না। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের কিছুদিন ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমরা ৬০ শতাংশ কৃষকের তালিকা হাতে পেয়েছি। এই তালিকা ধরে লটারির কার্যক্রম চলছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে বাকি তালিকা ধরে লটারির কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারব বলে আশাকরি। কিছু মিডিয়ায় ধানের মূল্য কম এমন সংবাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ধানের দাম কোথায় কম ? নওগাঁয় ভেজা ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের পূর্বাঞ্চলে বিশেষ করে হাওড় এলাকার ধানের দাম কিছুটা কম। সেখানে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। তাও গত বছরের তুলনায় বেশি। অন্যান্যবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় ব্যবসায়ীরা হাওড় এলাকার আগাম বোরো ধান কিনতে যেতেন। এবার ফড়িয়ারা কম যাওয়ায় ধানের দাম অপেক্ষাকৃত কম।
খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সারওয়ার মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে হাওড় এলকায় বোরো ধান সবার আগে ওঠে। এটি সাধারণত হাইব্রিড জাতের ধান। এই হাইব্রিড ধানের মানও অপেক্ষাকৃত খারাপ। চালটা মোটা হয়। বাজারে এর দাম কম। এছাড়া বোরো ধান সংগ্রহ করা যায় না। তাই কৃষকরা ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বেশি পরিমাণ ধান বিক্রি করে দেয়। এতে বাজারের ওপর ভিন্ন প্রভাব পড়ে। সরবরাহ বেড়ে গেলে দাম কমে যাবে এটাই স্বাভাবিক। অন্যান্যবার হাওড়ের আগাম এই বোরো ধান কিনতে দেশের বিভিন্ন এলাকার বড় বড় মিল মালিকরা যেতেন। এতে ধানের বাজার চাঙ্গা থাকে। এবার ট্রাক ভাড়া অনেক বেশি। এছাড়া অনেকেই ব্যাংক থেকে যেমন লোন নিতে পারেনি, তেমনি অনেকে ঝুঁকিও নিতে চাননি। সে কারণে এবার হাওড় এলাকায় ধানের দাম অপেক্ষাকৃত কম। বেশি মিলাররা কিনলে দাম বেড়ে যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাই ধান কিনছে না। এই পরিস্থিতি থাকবে না। ধান বিক্রির জন্য তিনি কৃষকদের ধৈর্য ধরে কিছুদিন অপেক্ষা করার আহ্বান জানান।
চলতি বোরো মৌসুমে সারাদেশ থেকে আট লাখ মেট্রিক টন ধান কিনবে সরকার। প্রতি মণ ধানের দাম এক হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে চলতি বোরো মৌসুমে সরকার প্রায় দুই হাজার ৮০ কোটি টাকার ধান কিনবে। সরকারের ধান কেনা কার্যক্রম ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলার কথা। তবে অনেক জেলায় তালিকা ও লটারি জটিলতার কারণে এখনও শুরু করতে পারেনি ধান সংগ্রহ কার্যক্রম। সরকারের ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে দেরির সুযোগ নিচ্ছেন ফড়িয়া ও চাতাল ব্যবসায়ীরা। টাকার জন্য সরকার ঘোষিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে হাওড় এলাকার কৃষককে। এই এলাকার কৃষকরা এখন ধান বিক্রি করছেন ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ দরে। পুরোদমে ধান ক্রয় শুরু হলে অবস্থার পরিবর্তন হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাজমানারা খানম বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গা গোডাউন ভিজিট করেছি। তারা হয়ত আগামী সপ্তাহ থেকে ধান কেনা শুরু করবে। বরাবর আমাদের যে নীতিমালা আছে সে অনুযায়ী কাজ করছি। চেষ্টা করছি স্বচ্ছভাবে যেন কৃষক ধান দিতে পারেন এবং যেন মধ্যস্বত্বভোগী এটার ভেতরে আসতে না পারে।
তিনি বলেন, করোনার প্রেক্ষাপটে গোডাউনে হয়ত কৃষকরা নাও আসতে চাইতে পারেন। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসন, খাদ্য অধিদফতর ও কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তারা সব জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছেন। তালিকা বিষয়ে ড. নাজমানারা খানম আরও বলেন, আমি তো মনে করি এ তালিকাটা ধান কাটার আগেই দেয়া উচিত। কারণ তালিকা করার জন্য তো ধান পাকা পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার নেই। ধান রোপণ করার পরেই তো তারা তালিকাটা করে ফেলতে পারেন। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসকদের বলে দেয়া হবে তালিকা পেতে যদি দেরি হয়, তাহলে আগে আসলে আগে কেনার ভিত্তিতে ধান কিনে ফেলবেন। তালিকার জন্য বসে থাকবেন না।
/আরএম