ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ কাতার সরকার আর বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ কর্মী নেবে না। তবে দক্ষ শ্রমিকের কোটা বাড়াবে। এ মুহূর্তে দেড় হাজার দক্ষ বাংলাদেশি গাড়িচালক নিতে আগ্রহী দেশটি। তবে তাদের হতে হবে অনলাইনে নিবন্ধিত। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব সেলিম রেজা।
তিনি জানান, গত ৩-৪ ফেব্রুয়ারি দোহায় দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয় কাতার। দেশটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে, তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে চায়। তবে অনলাইন নিবন্ধন ছাড়া কোনও কর্মী নেবে না কাতার।
সেলিম রেজা বলেন, কাতার সরকার বাংলাদেশ থেকে দেড় হাজার দক্ষ গাড়িচালক নিতে আগ্রহী। এর পাশাপাশি অন্য পেশার দক্ষ কর্মীও নেবে বলে জানিয়েছে তারা। আমরা কাতার সরকারকে এবছর বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি সংখ্যক দক্ষ ও আধা দক্ষ কর্মী নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।
তিনি বলেন , কাতারে অনুষ্ঠিতব্য ‘ফিফা ২০২২’ এবং কাতারের ‘ভিশন ২০৩০’ উপলক্ষে সিকিউরিটি সার্ভিস, সেবা খাত ও অন্যান্য খাতে দেশটিতে ব্যাপক কর্মী চাহিদা রয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীদের সুনাম ও চাহিদাও ব্যাপক।
যৌথ কমিটির বৈঠকের পাশাপাশি কাতার সফরকালে প্রবাসীকল্যাণ সচিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল কাতারের বিভিন্ন কোম্পানি ও বাংলাদেশি কর্মীদের ক্যাম্প ও কর্মস্থল পরিদর্শন করেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, কাতার তাদের বৃহত্তম পরিবহন সেবা প্রতিষ্ঠান মোয়াসালাতে গাড়িচালক, বিশেষ করে ভারীযানের চালকের দরকার রয়েছে বলে জানিয়েছে।
সেলিম রেজা বলেন, আমরা তাদের জানিয়েছি, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই কর্মীদের নাম নিবন্ধন শুরু করেছে। মাঠ পর্যায়ে দক্ষতা দেখতে শিগগিরই কাতারের একটি টিম বাংলাদেশ সফর করবে। আমরা পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ঢাকা জেলায় বিদেশ যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন শুরু করেছি। সেখানে এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার কর্মী নিবন্ধন করেছেন। আগামী মাস থেকে সারাদেশে কর্মীদের নিবন্ধন শুরু হবে।
কাতার নিজ খরচে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আগ্রহী উল্লেখ করে সচিব বলেন, কোনও কোনও কোম্পানি কর্মীর যাবতীয় খরচ বহন করবে। তবে যেসব কোম্পানি খরচ বহন করবে না, সেখানে সরকার নির্ধারিত ১ লাখ ৭৮০ টাকায় কর্মী পাঠাতে হবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে।
যৌথ কমিটির সভায় বাংলাদেশি কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং তাদের স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণে দুদেশ একমত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ সময় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, সারা বিশ্বে অদক্ষ কর্মীদের চাহিদা কমে যাচ্ছে। সবাই দক্ষ কর্মী নিতে চায়। কাতারও বলেছে আর অদক্ষ কর্মী নেবে না। আমরা যত বেশি কর্মী দক্ষ করতে পারবো, তত বেশি কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারবো।
উল্লেখ্য, উপসাগরীয় অঞ্চলে কাতার বাংলাদেশের অন্যতম বড় একটি শ্রমবাজার। তবে ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য দেশটির শ্রমবাজার সংকুচিত হতে থাকে। সেই সংকুচিত বাজার গত কয়েক মাস থেকে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কারণ হিসেবে বলা হয়, কাতারে ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা কমে যেতে থাকে। কারণ, সেখানে ৮০ শতাংশ বাংলাদেশি কর্মী ছিল অদক্ষ। আর এই প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি।