দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য আওয়ামী লীগ সবসময় যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগ সবসময় যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। যেভাবে জাতির পিতা তার রক্ত দিয়ে গেছেন, আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী প্রয়োজনে আবারো রক্ত দিতে প্রস্তুত।
রোববার দুপুরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ যৌথভাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভা এবং মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা পথ দেখিয়ে গেছেন। বক্তব্য, নির্দেশনা ও কাজের মাধ্যমে তিনি তার আদর্শ রেখে গেছেন। যদি সবাই সেগুলো মেনে চলি, এ দেশকে নিশ্চয়ই তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারবো।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বাবা-মা সব হারিয়ে আমাদের বিদেশে থাকতে হয়েছিল রিফিউজি হিসেবে। ১৫ আগস্টে যে কয়টা বাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছিল, তারাও কিন্তু ঢাকা শহরে টিকতে পারেনি। যারাই বেঁচে ছিল; সবাইকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল ভারতে। ছয় বছর পর আওয়ামী লীগ সভাপতি হওয়ার পর আমি দেশে ফিরে আসি। তখন জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিলাম, দলের নেতা-কর্মীদের সমর্থন পেয়েছিলাম। অনেক বাধা দেয়া হয়েছিল। তারপরও আমি ফিরে আসতে পেরেছিলাম। সামনে একটাই লক্ষ্য ছিল—যে আদর্শ নিয়ে আমার বাবা, তার সারাটা জীবন জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং নিজের জীবনটা দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাই; সেই আদর্শকে সামনে এগিয়ে নেয়া।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতিকে বিশ্বে মর্যাদার আসন দিতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতির জীবন উন্নত সমৃদ্ধশালী করতে চেয়েছিলেন। ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। সেটাই আমরা করতে চাই, সেটাই লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যেখানে ১৫ আগস্ট আমার ছোট্ট রাসেলকেও ছাড়ে নাই, যাদের উদ্দেশ্য ছিল- এই রক্তের কেউ যেন এসে দাঁড়াতে না পারে, আর সেই জায়গায় বাঙালি জাতি আমাকে বারবার ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমি সরকার গঠন করতে পেরেছি এবং মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি। এটাই তো সব থেকে বড়। কাজেই আমি আমার নিজের জীবনটা উৎসর্গ করেছি দেশের মানুষের কল্যাণে। একটাই লক্ষ্য দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলবো। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে— জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়ন করা। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেটা যেন কোনোভাবে ব্যর্থ না হয়; সেটাকে সফল করে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আর উন্নত করা।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি খুনির দল। তার নামটা মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছিল। যে স্বাধীনতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। তা মুছে ফেলার সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণ এই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল। বাংলাদেশে শেখ মুজিবের ছবি কোথাও দেখানো যেত না। এমনকি পরবর্তীতে আমরা দেখলাম, যে নৌকা মার্কায় জনগণ ভোট দিয়ে স্বাধীনতা এনেছিল, সেই নৌকার’ই অস্তিত্ব মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এই ঘৃণ্য চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র যারা করেছে; জনগণ তাদের চেনে। খুনিদের যারা পুরস্কৃত করেছে, তারা এ দেশের স্বাধীনতা কখনও চায়নি।
সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে হয়তো সাময়িক কারণে একটু বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু তারপরও তো আজকে ৯৭ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। মানুষের ঘরে খাবার আছে। আমরা বন্যা মোকাবিলা করেছি, ঝড় মোকাবিলা করেছি। করোনা মোকাবিলা করে চলছি। হয়তো প্রতিবন্ধকতা আছে। এভাবেই চলতে হবে। আর আওয়ামী লীগকে উজানে নাও ঠেলেই চলতে হয়। আমরা সেই প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে চলেই অভ্যস্ত। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমরা সবসময় যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। যেভাবে জাতির পিতা তার রক্ত দিয়ে গেছেন। আমরাও একইভাবে রক্ত দিতে প্রস্তুত বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির এবং দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন দক্ষিণের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী।
/এন এইচ