দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
দেশের বেচা-বিক্রির ২০ শতাংশ দখল করেছে অনলাইন
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ যাঁরা দোকানে পণ্য বিক্রি করেন, তাঁদের জন্যও অনলাইনে বেচা-বিক্রি উন্মুক্ত রাখতে হবে। ফলে সবাই সব ধরনের ব্যবসা করতেই সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলবেন। এরই মধ্যে বড় ব্যবসায়ীরা অনলাইনে চলে গেছেন। ক্ষতি যা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরই হচ্ছে।
দেশের অনলাইন বেচা-বিক্রি বা ই-কমার্স দোকান বা আউটলেটগুলোর ২০ শতাংশ বাজার দখল করে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জে রয়েছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষুদ্র বিক্রেতারা। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন হারের ছাড়সহ বিক্রির কৌশল বদলে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার চেষ্টা করছেন তাঁরা। বিক্রেতারা বলছেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন দোকানপাট ও বিপণিবিতানগুলো বন্ধ ছিল। এখনো করোনা পরিস্থিতি রয়েছে। ফলে বেচা-বিক্রি খুব বেশি বাড়েনি। করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইন খাতটি বড় একটি বাজার তৈরি করেছে, যা মূলত দোকানগুলোরই ছিল। এখন সব কিছু খুললেও সেই বাজার পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। ফলে চ্যালেঞ্জটা রয়েই গেছে।
তবে চ্যালেঞ্জ রয়েছে অন্যদিক থেকেও। অনলাইনে বেচা-বিক্রির তেমন কোনো নীতিমালা নেই। সরবরাহকৃত পণ্যের মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। ব্যবসার জন্য লাগে না কোনো ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স সার্টিফিকেট কিংবা কারো কোনো অনুমোদন। ফলে যে কেউ যেকোনো সময় অনলাইনে পণ্য বিক্রি করতে পারে। কিন্তু দোকান মালিকদের ক্ষেত্রে সেটা হয় না। বড় পুঁজি ছাড়াও পণ্য রাখার স্থান দরকার হয়, ট্রেড লাইসেন্স দরকার হয়, ট্রেড লাইসেন্স করতে আরো আনুষাঙ্গিক কাগজের দরকার হয়। সব কিছু ঠিক থাকলেই ব্যবসা করা যায়।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন দোকান মালিকরা। সবাইকে ব্যবসার সমান সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে ব্যবসা করার জন্য দোকান মালিকদের মতো ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য অনুমোদনের নিয়ম করার দাবি তুলেছেন তাঁরা। এ ছাড়া ক্ষুদ্র দোকানগুলোর জন্যও অনলাইনে বেচা-বিক্রির অনুমোদন দেওয়ার কথাও বলছেন। এতে দুপক্ষই সমানভাবে ব্যবসা করতে পারবে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘অনলাইনের কারণে দোকান মালিকদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বিক্রি কমেছে বলে আমাদের হিসাব বলছে। যেহেতু অনলাইনে পণ্য কেনার কিছু সুবিধা রয়েছে, সেহেতু এর বিস্তার দিন দিন বাড়বে। দখল হয়ে যাওয়া বাজার আর পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়, তাই দুই ব্যবসার মধ্যে একটা সমন্বয় আনা প্রয়োজন। এ জন্য অনলাইনে ব্যবসার একটা নীতিমালা করা দরকার। পণ্যের পরিমাণ, মান, লোকবলের সংখ্যা, ব্যবসা শুরুর শর্ত ইত্যাদি এই নীতিমালায় থাকবে। এতে অনলাইনে পণ্য কিনে মানুষ প্রতারিত হবে না। মানুষ প্রতারিত হলে ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হয়। এ ছাড়া যাঁরা দোকানে বিক্রি করেন তাঁদের জন্যও অনলাইনে বেচা-বিক্রি উন্মুক্ত রাখতে হবে। ফলে সবাই সব ধরনের ব্যবসা করতেই সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলবেন। এরই মধ্যে বড় ব্যবসায়ীরা অনলাইনে চলে গেছেন। ক্ষতি যা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরই হচ্ছে।’
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগে মানুষ অনলাইনে কিনত বই, ইলেকট্রনিকের জিনিস যেমন কম্পিউটার। কিন্তু কম্পিউটার তো মানুষ রোজ কেনে না। খাবার বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সব সময় কেনে। ফলে অনলাইনে কেনাকাটার ধরন গত কয়েক বছরে অনেক বদলেছে। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় নয়, বিক্রেতারা নানা ধরনের পণ্যসম্ভার নিয়ে এসেছেন অনলাইনে, যা মানুষকে আকৃষ্ট করেছে এবং ইন্টারনেটে কেনাকাটায় উদ্বুদ্ধ করেছে। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ অনলাইন কেনাকাটায় বেশি ঝুঁকেছে। এতে দোকান বা বিপণিবিতানগুলোর চ্যালেঞ্জটা আরো বেড়েছে। অনেক দোকান মালিকই এখন নানা অঙ্কের ছাড় দিয়ে আবার ক্রেতাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। অনেকে আবার নিজেরাও অনলাইনে বিক্রি শুরু করেছেন। যদিও আগোরা, স্বপ্নসহ সুপারশপগুলো আগে থেকেই অনলাইনে বিক্রি করত। এ ছাড়া বড় উৎপাদন কম্পানিও করোনার সময় সরাসরি অনলাইনে বিক্রির উইন্ডো খুলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। এর পাশাপাশি ছোট ও ক্ষুদ্র দোকানিরাও অনলাইনে না হলেও টেলিবাণিজ্যের মাধ্যমে ব্যবসার প্রসারতা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
রাজধানীর ভাটারা ঢালিবাজারের নিত্যপণ্যের দোকান বিসমিল্লাহ জেনারেল স্টোরের মালিক আবু সিদ্দিক বলেন, ‘আমার অনেক খরিদ্দার আর দোকানে আসেন না। করোনার সময় তাঁরা টেলিফোনে বাজারের ফর্দ দিতেন, আমি মাল পাঠিয়ে দিতাম। সেই ধারা এখনো রয়েছে। সেভাবেই চলছে বেচা-বিক্রি। এটি আমার মোট ব্যবসার ১০ শতাংশের মতো হবে। তবে দোকানে ঘুরে সরাসরি পণ্য দেখে দাম-দর করে কেনার আবেদন কোনো কালেই শেষ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।’
/এন এইচ