দেশজুড়েপ্রধান শিরোনামসাভারস্থানীয় সংবাদ
সাভারে দূর্যোগসহনীয় ঘর পানিতে থৈ থৈ
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বংশী নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার নীচ দিয়ে। এর পরেও এই নদী এলাকায় দুর্যোগ সহনীয় প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৪৯টি ঘর পানিতে থৈ থৈ করছে। প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও তা এখনো শেষ হয়নি।
এই চিত্র দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের সংসদীয় আসন ঢাকা-১৯(সাভার) এর। সাভার পৌর এলাকার রূপনগরের ‘উত্তরণ পল্লীতে’ গৃহহীন মানুষের জন্য এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুর্যোগ সহনীয় প্রকল্পের আওতায় ঢাকার সাভারে ৬৮টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রূপনগরের ‘উত্তরণ পল্লীতে’ দেওয়া হয় ৪৯টি ঘর, যার ৪০টি বেদে সম্প্রদায়ের এবং ৯টি হিজরাদের জন্য। কাবিখা কর্মসূচী থেকে প্রতিটি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এই টাকায় একটি রান্না ঘর ও একটি শৌচাগাড়সহ দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করার কথা। এছাড়া মাটি ভড়াটের জন্য আলাদা করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সাভার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। দরপত্র আহবান ছাড়া সরাসরি বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একরামুল হক।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৯৮৮ সালের সর্বোচ্চ বন্যাস্তর পরিমাপ ধরে দুর্যোগ সহনীয় প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করার কথা, যাতে বন্যার পানি ঘরে না ঢুকে। আর প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে। কিন্তু উত্তরণ পল্লীতে ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম মানা হয়নি।
গত শনিবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাভারের বংশী নদীর তীরে পাঁচটি সারিতে ৩১টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ১৮টি ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি। রান্না ঘর ও শৌচাগার নির্মাণের কাজও অসমাপ্ত রয়েছে। প্রতিটি ঘরের ভেতরেই রয়েছে দুই থেকে চার ফুট করে পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী শনিবার(২৫ জুলাই) সাভারে বংশী নদীর পানি বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা ১৯৮৮ সালের সর্বোচ্চ বন্যাস্তরের চেয়ে অনেক কম।
উত্তরণ পল্লীতে ৪৯টি ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন মানা হয়নি বলে মনে করেন সুবিধাভোগী পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের মতে প্রজ্ঞাপন মেনে ঘর নির্মাণ করা হলে নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পরেও ঘরে পানি ঢোকার কথা নয়।
প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন পৌর এলাকার পোড়াবড়ির মোকছেদ আলী। তিনি বলেন, ঘরগুলো তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এই অবস্থায় আরও উঁচু করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। উঁচু করা না হলে এখানকার বাসিন্দাদের প্রতি বর্ষাতেই কষ্ট করতে হবে।
পাশের কাঞ্চনপুর গ্রামের সামসুল হক বলেন, প্রতিটি ঘরের ভেতরে দুই থেকে চার ফুট করে পানি। নিয়ম মেনে ঘর নির্মাণ করা হলে এ অবস্থা হতো না।
বেদে সম্প্রদায়ের মাতবর আব্দুস সাত্তার বলেন, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যায় সাভার পৌর এলাকার সব পথ-ঘাট ছিল পানির নীচে। মানুষ নৌকায় চলাচল করেছেন। কিন্তু এবারের বন্যায় পৌর এলাকায় এখনও বানের পানি ঢুকেনি। এর পরেও উত্তরণ পল্লীর সব ঘর পানিতে থৈ থৈ করছে।
ঢাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালন ও রক্ষনা বেক্ষণ বিভাগ-২-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাহাত রাশেদী বলেন, ১৯৮৮ সালে তুরাগসহ ঢাকার আশপাশে বিভিন্ন নদীর পানি বিপদসীমার ২০০ থেকে ২৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এবার তুরাগ ও বংশী নদীর পানি এখনও বিপদসীমার অনেক নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানতে চাইলে সাভার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একরামুল হক বলেন, প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ বিলম্বিত হওয়ায় ঘর নির্মাণের কাজ এখনও শেষ করা সম্ভব হয়নি।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৯৮৮ সালের সর্বোচ্চ বন্যাস্তর পরিমাপ ধরে ঘর নির্মাণ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
যোগাযোগ করা হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রতিটি ঘরের মেঝে সর্বোচ্চ বন্যাস্তরের উপরে থাকার কথা। ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় হয়ে থাকলে অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। – প্রথম আলো
/আরএম