শিক্ষা-সাহিত্য
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক পদাসীনের অভিযোগে ক্ষুদ্ধ ডঃ মোস্তাফিজার
গবি প্রতিবেদকঃ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমানের বিরুদ্ধে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পদাসীন থাকার অভিযোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২১ অক্টোবর) অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের বিষয়ে তার স্বচ্ছতার প্রমাণাদি প্রদর্শন সাপেক্ষে তিনি এ প্রতিবাদ জানান।
জানা যায়, গত ১৮ অক্টোবর শুক্রবার ইংরেজি জাতীয় দৈনিক দ্য ডেইলী স্টারে ”One man holds 2 vital posts in 2 universities” শিরোনামে একটি নিউজ প্রকাশিত হয়। এতে অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমানকে হাবিপ্রবির অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান বলার পাশাপাশি সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের ডীন হিসেবে দাবি করা হয়।
ডীনের দায়িত্ব পালনের অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমি হাবিপ্রবি থেকে ৩ বছরের জন্য লিয়েন (পূর্বস্বত্ব) নিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে ঐ ৩ বছরে আমি বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি, যার মধ্যে ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের ডীন হিসেবেও কর্মরত ছিলাম। লিয়েন শেষে আমি ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাবিপ্রবিতে ফিরে আসি। এরপর থেকে আমি এখানকার (হাবিপ্রবি) অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকাকালীন আমার কিছু কাজ অসম্পূর্ণ ছিল। এজন্য আমি হাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে বন্ধের দিনগুলোতে (শুক্র ও শনিবার) সেখানে যাই এবং উপাচার্যের অনুরোধে কিছু কাজ করছি। বর্তমানে আমি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পদে আসীন নই।’
এ প্রেক্ষিতে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা: লায়লা পারভীন বানু বলেন, ‘তিনি হাজী দানেশের অনুমতি সাপেক্ষে এখানে পার্টটাইম (শুক্র ও শনি) অফিস করেন। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার ২ দিন পরই আমরা উক্ত অনুষদে অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনকে নতুন ডীন নিয়োগ দিয়েছি।’
গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সের অনুষদীয় সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান হাবিপ্রবিতে ফিরে যাওয়ার ২ দিন পর অর্থাৎ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনকে উক্ত অনুষদের ডীনের দায়িত্ব দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দেয়া এই আদেশ এখনো বলবৎ রয়েছে। এছাড়া গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের ফ্যাকাল্টি মেম্বার্স তালিকাতেও ডীন হিসেবে অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের নাম সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত আছে।
শুক্র ও শনিবার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিস করার বিষয়ে হাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা: মো. ফজলুল হক বলেন, ‘ ছুটির দিনে কে কি করবেন সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। এটা নিয়ে কথা বলা অযৌক্তিক এবং কারো ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল। আমি নিজেও ছুটির দিনে বিভিন্ন কাজ করে থাকি, তাহলে সেটা কি অন্যায়?’
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমানের বিরুদ্ধে ঢাকায় গত ২৭ আগষ্ট ভেটেরিনারি বিভাগভুক্ত সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীনদের গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঐদিন হাবিপ্রবির প্ল্যানিং ডিরেক্টর হিসেবে ঐ মিটিংয়ে যোগদানের জন্য আমি ঢাকাতে অবস্থান করি। কিন্তু তখন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ডীন অসুস্থ থাকায় উপাচার্যের অনুরোধে আমি সেখানে গিয়েছিলাম।’
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) এর একটি প্রজেক্টে গণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালনেরর অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। ঐ প্রজেক্টে ডিরেক্টর হিসেবে ডীন অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের স্বাক্ষর রয়েছে। এ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় প্রমাণাদি সংশ্লিষ্ট বিভাগে রয়েছে।
দ্য ডেইলী স্টারে প্রকাশিত নিউজের ব্যাপারে অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘নিউজে মো. জসিম উদ্দীন নামের এক ব্যক্তির বক্তব্য নেয়া হয়েছি যিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা। একাডেমিক কোনো বিষয়ের সাথে তিনি সংশ্লিষ্ট নন। এছাড়া প্রচারিত সংবাদে কিছু বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, সেটা অত্যন্ত দু:খজনক।’
এদিকে অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমানের মতো স্বনামধন্য ও প্রথীতযশা শিক্ষাবিদের বিরুদ্ধে আনীত সকল মিথ্যা অভিযোগের নিন্দা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক- কর্মকর্তাবৃন্দ। তারা বলেন, উনার মত একজন নামকরা শিক্ষাবিদের বিরুদ্ধে এ ধরণের নিন্দনীয় মিথ্যা অভিযোগ খুবই দু:খজনক বিষয়। আমরা মনে করি, বিশেষ কোনো মহল উনার ব্যক্তি সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং কোনো দুরভিসন্ধিমূলক স্বার্থ হাসিলের জন্য এরকম কাজ করে থাকতে পারে।’