জীবন-যাপনতথ্যপ্রযুক্তি
দলিল জাল কি না কিভাবে পরীক্ষা করবেন?
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ দলিল জালিয়াতি করে অন্যের সম্পত্তি ভোগদখল করার ঘটনা এবং এ নিয়ে আদালতে মামলা-মোকদ্দমা করার বহু ঘটনা নিত্যদিন প্রত্যক্ষ করা যায়। জাল দলিল চেনার সঠিক উপায় জানা ভুক্তভোগীকে আইনি প্রতিকার পেতে সহযোগিতা করে থাকে। প্রতারকেরা জমিজমার জাল দলিল সৃষ্টি করতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। কীভাবে দলিল জাল হতে পারে, জেনে রাখুন এ সম্পর্কে।
দেখা যায়, প্রকৃত নয় কিন্তু মালিক সেজে কাউকে মালিক বানিয়ে জমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করে নেয়।
সহ-শরিকদের অজান্তে ভুয়া বণ্টননামা করে দলিল জাল করতেও দেখা যায় বণ্টননামার ক্ষেত্রে। দলিল জালের সম্ভাবনা থাকে তখনই যখন আদালত থেকে বণ্টননামা সম্পন্ন করা হয় না। স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনাও ঘটছে হরহামেশা।
ঘষামাজা করে এবং ওভাররাইটিং বা কাটাছেঁড়া করেও দলিল জাল করার ঘটনাও পরিলক্ষিত হচ্ছে সমাজে। আবার মূল তারিখ ঠিক রেখে দলিলের বিষয়বস্তু জাল করতেও দেখা যাচ্ছে।
মালিক বিদেশে থাকলে মূল দলিল থেকে জালিয়াতিও করা হচ্ছে।
দলিল জাল কি না কিভাবে পরীক্ষা করবেন?
১. দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভলিউমে লেখা হয়ে থাকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। যদি কোনো দলিল নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে রেজিস্ট্রি অফিসে থাকা দলিলের প্রকৃত সাল মিলিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য দরখাস্ত করতে হবে। দরখাস্তে দলিলটির যাবতীয় তথ্য সংযুক্ত করতে হবে।
২. এক জমির মালিকের যদি একাধিক হয় তবে দলিলটি জাল করা সহজ হয়ে যায়। এ কারনে মূল মালিক নির্ণয় করতে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হতে হবে।
৩. দলিলদাতা বা গ্রহীতার সাজাড় ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায়। এ ক্ষেত্রে স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাই করিয়ে নেওয়া যেতে পারে স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে। এ ছাড়া জালিয়াতি নির্ণয় করার আরেকটি পন্থা ভূমি অফিস থেকে বিভিন্ন সিল পরীক্ষা করা। দেখতে হবে, আগের চিহ্নিত কিছু সিল ব্যবহারই থাকে আগের পুরাতন দলিলে। দলিল আগের কিন্তু সিল যদি নতুন হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, দলিলটি জাল। একই সঙ্গে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে তারিখটি। দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ কোনো সরকারি বন্ধের দিন থাকলে বুঝে নিতে হবে দলিলটি জাল। অনেক সময় মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি জীবিত দেখিয়ে জাল করা হয়।
৪. জমির মিউটেশন বা নামজারি সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে। সুচারুভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে নামজারিতে ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না। যদি এমন হয়, বিক্রেতার খতিয়ানের কোনো গরমিল আছে সিএস জরিপে, তাহলে বুঝবেন, দলিল জাল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, জরিপ খতিয়ানে জমির পরিমাণ পরবর্তী সময়ে যতবার বিক্রি হয়েছে, তার সঙ্গে জমির পরিমাণ মিল আছে কি না, তা যাচাই করে দেখা। দেখতে হবে দাগ নম্বর, ঠিকানা এসব ঠিক আছে কি না।
৫. যাচাই করতে হবে জমির মালিকানা। বিক্রেতার কাছ থেকে ভায়া দলিল চেয়ে নিতে হবে। জানতে হবে সব দলিলের ক্রমিক নম্বর, দলিল নম্বর ঠিক আছে কি না।
৬. সম্প্রতি কোনো আমমোক্তারনামা দলিল থাকলে তাতে উভয় পক্ষের ছবি ব্যবহার হয়েছে কি না যাচাই করতে হবে।
৭. দান করা জমির ক্ষেত্রে দলিলে সম্পাদনের তারিখ দেখে কবে জমিতে গ্রহীতা দখলে গেছে তা যাচাই করা প্রয়োজন। দলিলদাতার সঙ্গে গ্রহীতার সম্পর্ক কী এবং দলিলটি রেজিস্ট্রি করা কি না তা যাচাই করতে হবে।
৮. সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া কোনো বিক্রীত দলিলের দলিলের ক্ষেত্রে লেখকের নাম ঠিকানা জেনে নিয়ে সরেজমিন কথা বলার পরে নিশ্চিত হতে হবে।
৯. দলিল সম্পাদনের সময় ব্যবহূত স্ট্যাম্পের পেছনে কোন ভেন্ডার থেকে স্ট্যাম্প কেনা হয়েছে এবং কার নামে কেনা হয়েছে সেটা খেয়াল করতে হবে। একটি ক্রমিক নম্বর উল্লেখ থাকে প্রতিটি স্ট্যাম্পের পেছনে।