প্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদন
তৃণমূল রাজনীতিবিদ তিনি
আবদুল কাইয়ূম, নিজস্ব প্রতিবেদক: কোন দখলবাজি নেই, নেই চাঁদাবাজি। ক্ষমতার ধমক? এমন চেহারাও দেখা মেলেনি। তবে মিছিলে মিটিং দলের প্রয়োজনে সবাইকে এক সাথে আগলে রাখার চেষ্টা। কখনো মায়া মুখে হাসি দিয়ে, কখনো ভুল স্বীকার করে হন ক্ষমাপ্রার্থী। রাত-বিরাতে ছুটে যান যেখানে প্রয়োজন। তিনি জনবহুল আশুলিয়ার তৃণমূলের শ্রমিকলীগের নেতা।
কথার শুরুতেই অভিমানী কন্ঠে বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, ‘তৃণমূল রাজনীতিবিদরা কত দু:খ-কষ্ট ও জীবন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে’, এটা শুধু তারাই জানে’। আশেপাশে অনেকেই সহজেই সমালোচনা করেন। তাদের প্রতি অনুরোধ, একবার নিজেকে এই অবস্থানে একটু ভেবে দেখবেন। নিজের পরিবার, বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানের চোখের জল আর মায়া ভরা আত্নচিৎকারের পিছুটান ফেলে দলের জন্য নির্যাতন সইতে পারা? মামলার আসামী হয়ে এক পোশাকে গ্রামের পর গ্রাম, এক শহর ছেড়ে অন্য শহরে পালিয়ে থাকা। তারপর নিজের ঘাম জড়ানো উপার্জিত টাকা কর্মীদের প্রয়োজনে খরচ করা! ভেবে দেখুন কতটা পারবেন? দলকে শুধু ভালোবাসলেই এমনটা করা সম্ভব।
মানবিক এই মানুষটির শৈশব কেটেছে জন্মস্থান নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। পুরোনো দিনের পরিবর্তন ঘটলেও রাজনৈতিকভাবে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত অঞ্চল হিসেবেই খ্যাত। বিএনপির চেয়ারপার্সান বেগম খালেদা জিয়ার গ্রাম ফেনী থেকে এই দলের বিসৃত পুরো নোয়াখালীজুড়েই। এমন অঞ্চলে অন্যদল বিশষে করে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে অংশগ্রহন ছিলো সাপের মাথায় মনি আনার মতো। ফলে অনেকের মতো মনে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে নিজেকে মেলে ধরেছেন বেগমগঞ্জের আমানুল্লাহপুর ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের মোল্লার বাড়ির ছেলে ইমাম হোসেন।
চাচা লুৎফর রহমান আদমজী পাটকলের শ্রমিক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ছিলেন। চাচার মুখে বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর অবদান ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে শুনতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রেমী হয়ে উঠেন।
১৯৯৭ সালে মাধ্যমিক পাসের পর ঢাকার দনিয়া কলেজে ভর্তি হন। যুক্ত হন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। ২০০০ সালে কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ডেমরা থানায় মাদ্রাসা ও গাড়ি পোড়ানোসহ একাধিক মামলা তাকে আসামী করা হয়।
তবে চাচার মতো নারায়নগঞ্জের আদমজী পাটকলের শ্রমিকনেতা বাবার রাজনীতি থেকেও শক্তি জোগায় তরুণ এই নেতাকে। নানা ধাপ পেড়িয়ে ২০০৪ জীবন-সংগ্রামে এক সময় বসতি গড়েন জনবহুল আশুলিয়ায়। জীবিকার তাগিদে নামমাত্র ব্যবসা কাজ শুরু করেন। তবে লালন করা রাজনীতি ভুলতে পারেননি। এলাকা পরিবর্তন হলেও আওয়ামীলীগের রাজনীতি বুকে ধারন করেন। বিএনপির শোষণ ও হামলার মধ্যেও বিশেষ দিনে মাইকে বঙ্গবন্ধুর ভাষন প্রচার করতেন। খেসারতও দিয়েছেন। তবে দমে যাননি। শত প্রতিবন্ধকতার মাঝে নিজেকে সামলে জাতীয় শ্রমিকলীগের আশুলিয়া অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে পরিবার, আবার জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই। সবকিছুর মাঝে গুরুত্ব তার রাজনীতির। এখন নামে মাত্র ঠিকারদারি করে জীবন-সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। যতটুকু আয় হয়, নিজের পরিবার ও রাজনীতির পরিবারের মধ্যে ব্যয় করে। কখনো কর্মীদের মন যোগাতে পারেন, কখনো হতাশ। তবে নাছোরবান্দা মানবিক ব্যক্তি অভিমান ভুলাতে ছুটে কর্মীর কাছে।
শুধু তাই নয়, এই রাজনীতিবিদের মনের ভিতরে আরেকটা মনের বসতি রয়েছে। এই এলাকার পথশিশুদের মুখে হাসি ফুটাতে ব্যক্তিগত ভাবে নানা উদ্যোগ নেন। তাদের নিয়ে কোন বিনোদন কেন্দ্রে বেড়ানো, ঈদে নতুন পোশাক। পথশিশুরাও যেন খুঁজে পেয়েছে নতুন অভিভাবক। অধিকার নিয়ে খুঁজে ফিরে ইমাম হোসেনকে।
ইমাম হোসেন জানান, রাজনীতি প্রাণের একটি অংশ। স্ত্রী ও দুই ছেলের বায়না অনেক সময়ই মেটাতে পারি না। কিন্তু কর্মীদের বায়না যেন কিছুতেই ভুলতে পারি না। আমার আরেকটা পরিবার। বিশেষদিন গুলোতে নিজের জন্য কিছু না হলেও চলে, তবে কর্মীদের জন্য কিছু করতে পারে যেন পরম আত্নতৃপ্তি।
আমি আওয়ামীলীগের রাজনীতিবিদ, এই পরিচয়টাই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। না, এটা ব্যবহার করে কোন ফয়দা লুটতে চাই না। আমার অহংকার, ‘আমার সততা। আর দলের প্রতি ভালোবাসা’।
এমন তৃণমূলের হাত ধরেই তৈরি হবে জাতীয় নেতা। যাদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে লাল-সবুজের বাংলাদেশ।