বিশ্বজুড়ে
তুমুল সমালোচিত হচ্ছেন কমলার বর্ণপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলা ট্রাম্প
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের বর্ণপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এ বিষয়ে এই রিপাবলিকান প্রার্থীর উত্তেজনামূলক মন্তব্য ও আচরণের দীর্ঘদিনের ইতিহাস সম্পর্কে যাঁরা অবগত আছেন, তাঁরা ট্রাম্পের এ আক্রমণে নতুন কিছু দেখছেন না।
অতীতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্মপরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তুলে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন। ওবামার বাবা ছিলেন একজন কেনীয়। অথচ ট্রাম্প মিথ্যা দাবি করেছিলেন, ওবামার জন্ম বিদেশে।
ট্রাম্প বর্ণবাদী মন্তব্য করে সর্বশেষ ঝড় তোলেন গত বুধবার। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় বার্ষিক সম্মেলনে ‘রাজনৈতিকভাবে সুবিধা পেতে কমলা নিজেকে হঠাৎ কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন’ উল্লেখ করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, কমলা আগে তাঁর কৃষ্ণাঙ্গ পরিচয় সামনে আনতেন না।
ক্তরাষ্ট্রের আনুমানিক ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মতো কমলা হ্যারিসও একজন মিশ্র বর্ণের মানুষ। নির্বাচনী প্রচারে তিনি তাঁর কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশীয় পরিচয় তুলে ধরছেন।
বিশ্লেষকেরা বলেন, ৭৮ বছর বয়সী রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কমলার সমর্থক কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের নিজ দলে টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর কমলা নির্বাচনী লড়াইয়ে আসেন। এরপর থেকেই ট্রাম্পের জনসমর্থন কমে আসছে। কিন্তু সম্মেলনে কমলাকে নিয়ে ট্রাম্প যেভাবে বর্ণবাদী বক্তব্য দিলেন, তা তাঁকে নিয়ে বিতর্কই উসকে দিয়েছে। এ বক্তব্য কৃষ্ণাঙ্গ নারী সাংবাদিকদের নিয়ে অতীতে তাঁর করা অসম্মানজনক মন্তব্যকেও সামনে নিয়ে এসেছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের একসময়ের সহযোগী ও খ্যাতনামা কৌশলবিদ স্কট জেনিংস ইঙ্গিত দেন, ‘এ কেলেঙ্কারি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে আসা উচিৎ। কিন্তু কোনো না কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিনদের সঙ্গে কমলার আনন্দ উদ্যাপনের ছবি শেয়ার করে সাবেক প্রেসিডেন্ট কেলেঙ্কারিকে দ্বিগুণ করছেন।’
জুলাইয়ে এক হত্যাচেষ্টা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ঘটনায় তাঁর প্রতি জনসমর্থন বাড়লেও কমলা ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়ার পর নিজের নির্বাচনী প্রচার ক্রমেই বিশৃঙ্খলার মুখে পড়তে দেখছেন ট্রাম্প।
টেক্সাস ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটির রাজনীতি–বিষয়ক অধ্যাপক কিথ গ্যাডি বলেন, ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা নিয়ে এখন আর কেউ কথা বলছেন না। তাই বর্ণবাদ ইস্যুকে সামনে এনে সাম্প্রতিকতম মন্তব্য করে নিজের প্রতি ভোটারদের মনোযোগ ফিরিয়ে আনা তাঁর জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে।
অধ্যাপক কিথ বলেন, ‘(সম্মেলনে) নারী কৃষ্ণাঙ্গ সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কের লড়াইয়ে নেমে ট্রাম্প মূলত তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর (কমলা) সঙ্গে প্রক্সি লড়াই চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
১৯৮৯–৯৩ মেয়াদে ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যান কুয়েলের চিফ অব স্টাফ বিল ক্রিস্টল গতকাল বৃহস্পতিবার এক নিউজ লেটারে লেখেন, ‘ট্রাম্পের কোনো শিষ্টাচারবোধ নেই। খুব ভালো হবে যদি তাঁর এসব মন্তব্য রাজনৈতিক সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে ব্যর্থ করে তোলে।’
উল্লেখ্য, বুধবার সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘কমলা হ্যারিস সব সময় ছিলেন ভারতীয়। তিনি শুধু ভারতীয় ঐতিহ্যকে মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। কয়েক বছর আগে তিনি নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করার আগপর্যন্ত আমি জানতাম না যে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ। এখন তিনি কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে গেছেন ও এ পরিচয়ে পরিচিত হতে চান।’
ট্রাম্প যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন সম্মেলনে উপস্থিত এক হাজার দর্শকের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিমা করছিলেন।
এ সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি আসলে জানি না, তিনি (কমলা হ্যারিস) কি ভারতীয়, নাকি কৃষ্ণাঙ্গ? তবে আপনারা জানেন, আমি দুই পরিচয়কেই শ্রদ্ধা করি। কিন্তু নিশ্চিতভাবে তিনি সেটি করেন না। কারণ, তিনি শুরু থেকেই ভারতীয় ছিলেন। হঠাৎ করেই তিনি সুর পাল্টে একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত হলেন।’
যদিও ট্রাম্পের কথাটি সত্য নয়। পারিবারিক পরিচয়ের জায়গা থেকে কমলা হ্যারিস ভারতীয় ও জ্যামাইকান ঐতিহ্য বহন করেন। লম্বা সময় ধরেই তিনি নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় বলে পরিচয় দিয়ে আসছেন। তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় আমেরিকান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।