শিক্ষা-সাহিত্য

তিন দাবিতে এখনো অচল বুয়েট

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পাঁচ দিন হয়ে গেলেও অভিযুক্ত ছাত্রদের স্থায়ী বহিষ্কার করেনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাকি দুটি দাবিও পূরণ হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে এখনো বিরত রয়েছেন। প্রায় দেড় মাস ধরে বুয়েটের অচলাবস্থা চলছে।

বুয়েটের দায়িত্বশীল একাধিক শিক্ষক বলেছেন, শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসন কাজ করছে। কিন্তু কবে নাগাদ সমাধান আসবে, সে বিষয়ে তাঁরাও স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না।

১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এর পরদিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেন, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রে নাম আসা ছাত্রদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ তিন দফা দাবি মানা হলেই কেবল তাঁরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন। শিক্ষার্থীদের অন্য দুটি দাবি হলো বুয়েটের আহসানউল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলে এর আগে ঘটে যাওয়া র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে। এ ছাড়া সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র‍্যাগিংয়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে শাস্তির নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন করে বুয়েটের অধ্যাদেশে সংযোজনের জন্য পরবর্তী ধাপে পাঠাতে হবে।

কিন্তু গতকাল রোববার পর্যন্ত এসব দাবি পূরণ হয়নি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রথম দুটি দাবি পূরণ হলে তাঁরা আসন্ন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার তারিখ মেনে নেবেন। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হওয়ার অন্তত সাত দিন আগে তৃতীয় দাবিটি পূরণ হলে পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম মুখপাত্র ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহমুদুর রহমান বলেন, দাবির বিষয়ে বুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই সপ্তাহ ধরে একই বক্তব্য পাচ্ছেন। এসব বক্তব্যে তাঁরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তাঁদের দাবি না মেনে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হলে সেই তারিখ তাঁরা ‘অগ্রাহ্য’ করবেন।

এদিকে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ে গতকালও সভা করেছে বুয়েট প্রশাসন। সভা শেষে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাঁদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে এর আগে গত শুক্রবার ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেছিলেন, এ সপ্তাহেই শিক্ষার্থীদের প্রথম দুটি দাবির বিষয়ে একটি সমাধান আসবে। আর শাস্তির নীতিমালা প্রণয়নের যে দাবি শিক্ষার্থীরা করেছেন, তার বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। প্রথম দুটি দাবি মানলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এরপর একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণের কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তিনটি দাবির কোনোটিই পূরণ হয়নি।

গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এরপর থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। আর তখন থেকেই বুয়েটে অচলাবস্থা চলছে।

এদিকে বুয়েটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ বেলা আড়াইটায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close