প্রধান শিরোনাম
তিনি নেতা টাকা থাকতেই পারে: ক্যাসিনো খালেদের আইনজীবী
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ গ্রেফতার হওয়া যুবলীগের সেই নেতা খালেদের পক্ষে আদালতে তার আইনজীবী মাহমুদুল হাসান শুনানিতে বলেছেন, তার (খালেদ) বাড়িতে যে অস্ত্র পাওয়া গেছে- তা বৈধ। ২০১৭ সালে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অবৈধ বলা হচ্ছে। তাছাড়া যে টাকা পাওয়া গেছে বলা আছে, তা কোনো অবৈধ নয়। তিনি নেতা, টাকা থাকতেই পারে।
বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্র ও মাদকের দুই মামলায় মোট সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার পৃথক দুটি আদালত। আদালতে খালেদের পক্ষে জামিন আবেদন করেন আইনজীবী মাহমুদুল হাসান।
রাজধানীর ফকিরেরপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনো মালিক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ বর্তমানে সারা দেশে ব্যাপক আলোচিত।
এদিকে জামিন আবেদনের বিরোধিতা ও রিমান্ডের আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান।
যুবলীগ নেতা খালেদের আইনজীবী আরও বলেন, খালেদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাকে পলিটেক্যালি ভিকটিমাইজ করা হয়েছে। তিনি হজ করে এসেছেন। তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতে শুনানিতে বলেন, আসামির কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে। তার বাসা থেকে ইয়াবা ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ পাওয়া গেছে। এই ইয়াবা ও মদের উৎস কোথায়, তার সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত- এসব বিষয় উদঘাটনের জন্য তাকে জিজ্ঞাবাদের জন্য রিমান্ড প্রয়োজন।
উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে অস্ত্র ও মাদকের দুই মামলায় খালেদকে পর্যায়ক্রমে ৪ ও ৩ দিন করে মোট সাতদিনের রিমান্ডে পাঠিয়ে দেন।
এর আগে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ‘ক্যাসিনো খালেদকে’ জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালতে হাজির করে পুলিশ ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত অস্ত্র মামলায় ৪ দিন ও মাদক মামলায় ৩ দিনসহ মোট তার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনো মালিক যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের হয়েছে।
অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশান থানায় ৩টি ও বিকালে মতিঝিল থানায় মাদক আইনে আরও একটি মামলা করা হয়।
এর মধ্যে র্যাব-৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে গুলশান থানায় অস্ত্র, মাদক ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তিনটি মামলা দায়ের করেন। আর মতিঝিলি থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন র্যাবের ওয়ারেন্ট অফিসার চাইলা প্রু মার্মা।
বুধবার রাতে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের সময় অস্ত্র ও ইয়াবা পাওয়া যায়। এ ছাড়া তার ক্যাসিনো থেকে নারী, মদসহ নিষিদ্ধ বস্তু উদ্ধার করে র্যাব।
বুধবার রাতে দীর্ঘ অভিযান শেষে গুলশানের বাসা থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় অস্ত্র, গুলি, মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়। এর পর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত র্যাব-৩ এর হেফাজতে ছিলেন খালেদ।
বৃহস্পতিবার মামলা দায়েরের পর খালেদকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বুধবার খালেদকে গ্রেফতারের আগে ফকিরাপুলের ইয়াংমেন ক্লাবে নিষিদ্ধ ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায় র্যাব। এখান থেকে দুই নারীসহ ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনোতে মদ আর জুয়ার বিপুল সরঞ্জামের পাশাপাশি প্রায় ২৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ক্লাবটির সভাপতি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। অনেক দিন ধরে এখানে জুয়াসহ নানা অপকর্ম চলছিল। সাম্প্রতিককালে অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার পর বুধবার অভিযান পরিচালিত হয়। ইয়াংমেন্স ক্লাবের পর ওই রাতেই ঢাকার আরও তিনটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ইয়াংমেন্স ক্লাব থেকে মাদক এবং জুয়ার সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। ক্লাবের কাউন্টার থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, এদিন মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এবং বনানী এলাকার একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হয়। ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে মাদক, জালটাকা, বিপুল পরিমাণ টাকা ও ক্যাসিনো সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।
এর পর ক্যাসিনোটি সিলগালা করে দেয়া হয়। বনানীর আহমেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামে ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের নেতৃত্বে আছেন মমিনুল হক সাঈদ এবং আবু কাউসার মোল্লা নামে দুই ব্যক্তি।
দুজনই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এদিকে বুধবার রাতেই গুলিস্তানে পীর ইয়েমেনী মার্কেটসংলগ্ন একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব। স্থানীয় কয়েকজন জানান, এ ক্যাসিনোর নেতৃত্বে আছেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট।
খালেদ মাহমুদের সন্ধানে বুধবার দুপুরের পর থেকে তার গুলশান-২ এর ৫৯ নম্বর রোডের ৫নং বাসা ঘিরে রাখে র্যাব। প্রিমোরোজ গার্ডেন নামে ৬ তলাবিশিষ্ট এ ভবনের তিনতলায় পরিবার নিয়ে থাকেন যুবলীগ নেতা খালেদ।
বাড়ির ব্যবস্থাপক জানান, প্রথমে ডিবি পরিচয়ে একদল লোক বাসায় আসে। এর পর আসে র্যাব। রাতে এখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় বাসার লকার ও দেয়াল আলমিরা থেকে অবৈধ অস্ত্র, ইয়াবা, টাকা, ডলার উদ্ধার করা হয়।
/আরএম