প্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদন
ডেঙ্গু ঠেকাতে দেশে নামছে বিশেষ মশা
রিফাত মেহেদী, বিশেষ প্রতিনিধি: ডেঙ্গুর ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন উদ্ভাবিত এসআইটি পদ্ধতি দেশে নতুন আশার আলো যুগিয়েছে। পুরুষ এডিস মশাকে বন্ধ্যাত্বকরনের মাধ্যমে এডিস মশার বিস্তার রুখে দেয়া যাবে, এমন দাবী করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সীর (আইএইএ) সহযোগিতা ও সরকারের অনুমতি পেলে তবেই মাঠে বিশেষ মশা অবমুক্তকরনের প্রাথমিক কাজ শুরু হবে।
বন্ধ্যাত্বকরন বা এসআইটি পদ্ধতি কি: পুরুষ এডিস মশাকে গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে বন্ধ্যাত্বকরণ করা হয়। পরে সেই পুরুষ মশা স্ত্রী এডিস মশার সঙ্গে মিলিত হলেও নির্গত ডিম বা লার্ভা নিষিক্ত হয় না। এতে করে এডিস মশার বংশ বিস্তার হয় না। এমন স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক’ এসআইটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশের পরমানু শক্তি কমিশনের সাভারের খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের কীট জীবপ্রযুক্তি বিভাগের বিজ্ঞানীরা।
ভিডিও দেখুন: (উধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মো. আবদুল বারী)
এমন খবর জানতে ও জানাতে শনিবারে এই গবেষণাগারে কাযক্রম পরিদর্শন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী।
কাজের পক্রিয়া: দেশের মধ্যে পর্যায়ে এই প্রক্রিয়া শুরু করতে রয়েছে দীর্ঘ সময়ের ফারাক। প্রয়োজন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমানু শক্তি সংস্থা ’আইএইএ’র পর্যবেক্ষন। প্রথমে এই সফলতার পর পরীক্ষামুলকভাবে দেশের মাটিতে এই পদ্ধতি শুরু করতেও আইএইএর সহযোগিতা নিতে হবে বিজ্ঞানীদের। আর পরীক্ষামুলক কাজের সফলতা পেলে, তবেই পরিপূর্ণ ভাবে কাজ শুরু করতে পারবেন তারা।
সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. আফতাব হোসেন জানান, বিজ্ঞানীদের হাতে এখন ৫ হাজার বন্ধ্যা এডিস পুরুষ মশা ও ডিম বা লার্ভা রয়েছে ১৫ হাজার। যা থেকে প্রায় ৭ হাজার পুরুষ মশা সংগ্রহ করা যাবে। আইএইএ প্রতিনিধি দল কাজ করছেন। আইএইএ নীতিমালা ও সরকারের নির্দেশনা মেনে আমরা পরবর্তী কাজ শরু করবো। ২০০৮ থেকে শুরু হলেও ৬ জন বিজ্ঞানীসহ ১২ সদস্যের দল গত ৩ বছরে এসিড মশা বন্ধ্যাত্বকরনের এই সফলতা পান। এদিকে পরুষ এডিস মশা মানুষকে কামড়ায় না। এরা গাছের রস ও প্রাকৃতিক খাবার খেয়েই বেঁচে থাকে।
খাদ্য ও বিকিরন জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার মাহফুজা মোমেন জানান, এই পদ্ধতিটা শুধু এই মশাটাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। পরিবেশের অন্য কোন কিছুতেই প্রভাব ফেলবে না বা ক্ষতি করবে না। এটা সফল একটি পদ্ধতি, চায়না ইতিমধ্যেই সফলতা পেয়েছে।
উধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মো. আবদুল বারী জানান, আইএইএ সমন্বয়ে ২০০৮ থেকে এডিস মশাকে বন্ধ্যাত্বকরন কাজ শুরু হয়। সম্প্রতি এ বিষয়ে আমরা সফলতা পেয়েছি। আগামী এক-দুই বছরের মাধ্যমে ছোট পরিসরে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামুলক ভাবে কার্যক্রম চালাতে পারবো। প্রয়োজনীয় জনবল ও বাজেট পেলে আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে বড় পরিসরে কাজ শুরু করা যাবে।
খাদ্য ও বিকিরন জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও চীফ সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মাহ্ফুজা খান জানান, দেশের বাইরে থেকে দক্ষ জনবল ও যন্ত্রপাতিসহ প্রযুক্তিগত জিনিসপত্র লাগবে। এক্ষেত্রে সরকার ও আইএইএ এর সহযোগিতা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক জানান, আমাদের বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে সফলতা পেয়েছেন। এখন সরকারের নির্দেশনা ও সহযোগিতার অপেক্ষা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, বিজ্ঞানী তাদের কাজ করেছেন, এখন সরকারের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে দ্রুত এই কাজটি শুরু করবে। বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও জানান প্রযুক্তিমন্ত্রী।