স্বাস্থ্য
ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরাও
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ গত মাসের (জুন) শুরুর দিকে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরোগীর জন্য পৃথক ব্যবস্থা করা হয়। শিশু ওয়ার্ডের ভেতরেই আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের । কিন্তু মাসের শেষ দিকে এই ব্যবস্থা আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এত রোগী আসা শুরু হয় যে, ডেঙ্গু রোগীদের আর পৃথক করে চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছিল না। এসব হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, এবার ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দুঃস্বপ্নের মতো। বিপুল পরিমাণ রোগী সামাল দিতে তাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী ভর্তি হয়েছেন ২১৪ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলেও জানান চিকিৎসকরা।
সরকারি হিসাব বলছে, চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু রোগী ছিল ৩৮, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মেতে ১৯৩, জুনে ১ হাজার ৭৫৯ এবং জুলাইতে দুই হাজার ৪৬৬ জন।
বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আছেন ২২৬ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১২৬, শিশু হাসপাতালে ২৫, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৯৬, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৫৮, বারডেম হাসপাতালে ১২, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৩০ জন, মুগদা হাসপাতালে ৫০ জন, পিলখানার বিজিবি হাসপাতালে ১৯ জন। এই হিসাবে কেবল সরকারি হাসপাতালেই ভর্তি আছেন ৪১৩ রোগী।
এদিকে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি আছেন ৪৫, ইবনে সিনা হাসপাতালে ২২, স্কয়ার হাসপাতালে ৩৯, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৭৬, কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৫৯, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৭, খিদমাহ হাসপাতালে ৯, অ্যাপোলো হাসপাতালে ৩০, ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৭, সালাউদ্দিন হাসপাতালে ৩৫, পপুলার হাসপাতালে ২০ জনসহ ঢাকার ৩৬টি হাসপাতালে মোট ৪১৩ জন রোগী ভর্তি আছেন। আর এসব হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ২০৪২ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম।
জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এবার যারা দ্বিতীয়বারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন, তারা বেশ বিপদে পড়ছেন। তাদের ‘ইমিউন সিস্টেম’ নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। আর তখনই জটিলতা বাড়ছে। এ রকম অবস্থার জন্যও মানুষের বিপদ বেড়েছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘ডেঙ্গুতে ‘সয়লাব’ চারদিক। প্রতিদিন প্রচুর রোগী পাচ্ছি। এডিস মশা যদি নির্মূল না করা যায়, তাহলে এটা ঠেকানো যাবে না।’