প্রধান শিরোনামশিক্ষা-সাহিত্য

ডিসেম্বরেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার প্রস্তুতি, মান নিয়ে সংশয়

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ আগামী বছরের জন্য বিনামূল্যের প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে মানসম্মত বই ছাপানো ও নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, ২০২১ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সোয়া চার কোটি শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩৫ কোটি বই তৈরি করা হবে। এই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে নিয়ে যথাসময়ে বই তৈরির কাজ শুরু করেছে এনসিটিবি। তবে করোনার কারণে কাঁচামাল দেশে ঠিক সময়ে পৌঁছানো, মুদ্রণ শ্রমিকদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কার পাশাপাশি কমদরে মানসম্মত বই ছাপার সংশয় তৈরি হওয়ার পরও ডিসেম্বরের মধ্যেই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই পৌঁছানোর প্রস্তুতি চলছে।

দেশে ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে নতুন বই দিয়ে আসছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী বছর মাধ্যমিক স্তরের ২৫ কোটির কিছু বেশি বই এবং প্রাথমিক স্তরের ১০ কোটি বই ছাপার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তবে দর কম হওয়ায় মানসম্মত বই দেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছে মুদ্রণকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি। তারা বলছে, করোনার কারণে টেন্ডার আহ্বান একমাস পিছিয়ে যাওয়া, বিদেশ থেকে যথাসময়ে কাঁচামাল আমদানি করার পাশাপাশি করোনা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় হঠাৎ শ্রমিক হারানো এবং নতুন শ্রমিক পাওয়া নিয়ে সংশয় তো রয়েছেই।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত জাগো নিউজকে বলেন, বই ছাপার কাজ চলছে। তবে এবার টেন্ডার আহ্বান করতে একমাস পিছিয়ে গেছে। তবুও যে সময় আছে সে সময়ে বই দেয়া সম্ভব। কিন্তু মানসম্মত বই দেয়া সম্ভব হবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সংকটের কারণে মুদ্রণকাজের দর কমায় এবার মানসম্মত বই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে। অন্যান্য বছর যে বিপত্তিগুলো হয়, যেমন- বিদ্যুৎবিভ্রাট, হঠাৎ মালের দাম বেড়ে যায়, কিংবা শ্রমিক সংকট দেখা দেয়া, ঈদ কিংবা পূজা থাকে তবে এবার এগুলো নেই। তাই এগুলো আমাদের কাছে খুবই গৌণ বিষয়। এবার মুখ্য বিষয় হলো একটা ফ্যাক্টরিতে যদি ৫০০ শ্রমিক থাকে এর মধ্যে যদি একজন করোনা আক্রান্ত হয় তাহলে সবাই চলে যাবে। কারণ শ্রমিকদের একজন থেকে আরেকজনের দূরত্ব ছয় ইঞ্চিও থাকে না। তারপর আবার একসপ্তাহের মতো লাগবে নতুন শ্রমিক নিতে। ফলে কাজ পিছিয়ে যাবে। আমাদের অনেক জিনিস বিদেশ থেকে আমদানি করতেই হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটি জটিল হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, নতুন অনেক কোম্পানি কমদরে অনেক কাজ নিয়ে নিয়েছে। এটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। বোর্ডের উচিত ছিল তাদের অবকাঠামোগত সক্ষমতা দেখা এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা যাচাই-বাছাই করে কাজ দেয়া। এগুলো না দেখিয়ে তাদের কাজ দিলে বইগুলো ঝুঁকিতে পড়ে যাবে বলেই মনে হয়। সবচেয়ে প্রধান বিষয় হলো বই মানসম্মত হওয়া। আর এখন যদি ভালো বই শিক্ষার্থীদের কাছে না পৌঁছায় তাহলে সরকারের জন্য বড় বিড়ম্বনার কারণ হবে।

এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, গতবছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের (মাদরাসা, কারিগরিসহ) সোয়া চার কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৩৫ কোটি সাড়ে ৩৯ লাখ বই ছাপিয়ে বিতরণ করা হয়েছে। বিনামূল্যে বই দিতে গতবছর সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। তবে এবারও মহামারির মধ্যেও যথাসময়ে বই উৎসবের পুরো প্রস্তুতি চলছে এনসিটিবিতে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র পাল বলেন, যথারীতি কাজ চলছে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে বইয়ের চাহিদা প্রায় ৩৫ কোটির মতো। সঠিক হিসাবটা এখনই বলা যাচ্ছে না। কিছু চাহিদা এখনও আসছে। ডিসেম্বরে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই দিতে পারব।

তিনি বলেন, প্রতিবছর কাগজে-কলমে হিসাব নেয়া হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অনলাইনের মাধ্যমে চাহিদা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ কারণে অতিরিক্ত বইয়ের চাহিদার সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close