বিশেষ প্রতিবেদনস্বাস্থ্য

ডিপ্রেসডদের জন্য তিনটি গল্প

এক.

একটা বিশাল হাতিকে ভীষণ ছোট একটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হলো। কোনো চেইন নেই, কোনো খাঁচা নেই।

রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এই ব্যাপারটা খেয়াল করে খুব অবাক হলো এক ছেলে। তার চিন্তা হচ্ছে চাইলেই তো হাতিটা এই দড়ি এক নিমেষে খুলে ফেলতে পারে। এইটা তার জন্য কোনো ব্যাপারই না।

ছেলেটা হাতির ট্রেইনারকে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো ঘটনা কি! তারা দড়ি ছিঁড়ে পালায় না কেনো ?

ট্রেইনার বললেন, “তারা যখন ছোট ছিল, তখন এমন দড়িতেই বেঁধে রাখা হতো তাদের। তখন তাদের জন্য এই দড়িটাই উপযুক্ত ছিল। ছোট থাকা অবস্থায় এই দড়ি ছিঁড়ে বের হতে পারেনি বলে তাদের মনের মধ্যে ধারণা হয়ে যায়, এইটা আর কখনো ছেঁড়া যাবে না। তাই এখনো এই দড়িকে তারা সেই আগের মতো শক্তিশালী মনে করে ছেড়ার চেষ্টাই করে না।”

হাতির মতোই আমরাও জীবনের এক পর্যায়ে আর কোনো চেষ্টাই করি না ব্যর্থ হওয়ার পর। আমাদের ধারণা হয়ে যায় আমরা ব্যর্থতার দড়ি ছিঁড়তে পারবো না আর। এই ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে চেষ্টা করাই বন্ধ করে দেই। নিজের যোগ্যতার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলি। অথচ, আরেকবার চেষ্টা

করলেই হয়তো ব্যর্থতার দড়ি আমরা ঠিকই ছিঁড়ে ফেলতে পারতাম! তাই যেখানে সবাই থেমে যাবে, সেখান থেকেই আমাদের শুরু করতে হবে। থেমে যাওয়া মানেই হেরে যাওয়া।

 

দুই.

২৪ বছরের যুবক ট্রেনের জানালার পাশে বসে আছে। সমস্যা হচ্ছে সে আচরণ করছে শিশুর মতো। যা দেখছে তাতেই মুগ্ধ হচ্ছে। যা দেখছে সব কিছু নিয়েই তার কৌতূহল !

সে তার বাবাকে বলছে, “দেখো দেখো আব্বা গাছগুলো সব পেছনে চলে যাচ্ছে…!” তার বাবা কিছু না বলে শুধু একটু হাসলো। অন্য পাশের এক দম্পতি করুণ চোখে ২৪ বছর বয়স্ক যুবকের কথা শুনছে।

যুবক আবারও বললো, “দেখো আব্বা মেঘগুলো আমাদের সাথে সাথে দৌড়াচ্ছে…ওরা কোন স্টেশনে থামবে?” তার বাবা শুধু একটু হাসলেন। কিছু বলছেন না।

সেই দম্পতি যুবকের কথা শুনে বিব্রত হয়ে তার বাবাকে বললো, “আচ্ছা আপনি ওকে ভালো কোনো ডাক্তার দেখান না কেন? এত বয়সে এসে এখনো বাচ্চাদের মতো আচরণ করছে।”

তার বাবা হেসে উত্তর দিলেন, “ডাক্তার দেখিয়েছি। আসলে আমরা এখন হাসপাতাল থেকেই বাসায় ফিরছি। আমার ছেলেটা জন্ম থেকেই অন্ধ ছিলো। আজই প্রথম সে পৃথিবীটা দেখার সুযোগ পেলো…”

প্রতিটি মানুষের আচরণ এবং জীবনের পেছনে একটা গল্প থাকে। আমরা সেই গল্প না শুনে মানুষগুলোকে ভুল বুঝি, নিজের মতো করে উল্টাপাল্টা গল্প বানাই তাদের সম্পর্কে। কাউকে না জেনে তাকে নিয়ে কথা বললে একদিন তোমাকে বিব্রত হতে হবে। তার জীবনটা হয়তো তোমার কল্পনার চেয়েও কঠিন। তাই মন্তব্য করার আগে আমাদের সত্যটা জেনে নিতে হবে।

 

তিন.

ছেলেটার বয়স ১০ বছর। কোনো এক ফুটপাতের পাশে হয়তো থাকে। কিংবা কে জানে, কোনো রেললাইনের বস্তিতে থাকে।

রেস্টুরেন্টে গেল একদিন আইস্ক্রিম খেতে। তাকে দেখে রীতিমতো বিরক্ত রেস্টুরেন্টের ওয়েট্রেস। কারণ একটু পরই দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও মুখে কিছু বলছেন না তিনি।

– এই আইস্ক্রিমের দাম কত?

– ৫০ টাকা। ওয়েট্রেস উত্তর দিলেন।

ছেলেটা তার জমানো কয়েনগুলো গুনতে শুরু করলো। ওয়েট্রেস রীতিমতো রাগান্বিত হয়ে গেল। কারণ তার সময় নষ্ট হচ্ছে। এইদিকে কয়েনগুলো গোনা শেষ করে ছেলেটা আরেকটা আইসক্রিমের দাম জিজ্ঞেস করলো।

– ওই ছোট আইসক্রিম এর দাম কত ?

– এই তুমি শুধু শুধু যন্ত্রণা দিচ্ছো। যাও টাকা হলে আইসক্রিম কিনতে আসবা। এখন যাও।

– বলেন না , এই ছোটটার দাম কতো ? আর জিজ্ঞেস করবো না।

– ৩৫ টাকা।

(ছেলেটা আবার তার পুটলি থেকে কয়েনগুলো বের করে গুনলো।)

– আচ্ছা একটা দেন।

– আগে টাকা বের করো।

ছেলেটা ৩৫ টাকা হিসাব করে দিয়ে দিলো। ওয়েট্রেস রাগী রাগী মুখ করে টাকা নিয়ে আইসক্রিম দিয়ে চলে গেলো।

আর ছেলেটা কথা না বলে চুপচাপ আইসক্রিম খেয়ে বের হয়ে যায়। দোকান বন্ধ করার আগে ওয়েট্রেস যখন টেবিল পরিষ্কার করতে আসলেন, তিনি দেখতে পেলেন,সেখানে ১৫ টাকা রাখা। ছেলেটা তার জন্য টিপস হিসেবে যাওয়ার আগে ১৫ টাকা রেখে গিয়েছে!। কিন্তু এই ১৫ টাকা যদি সে তখন দিতো তাহলে সে বড় আইসক্রিমটাই পেতে পারতো!

রীতিমতো ধাক্কা খেলো ওয়েট্রেস। তিনি বুঝতে পারলেন ছেলেটার কাছে ৫০ টাকাই ছিলো। কিন্তু সে প্রথম আইসক্রিমটা না কিনে কম টাকার দ্বিতীয় আইসক্রিম কিনেছে একমাত্র তাকে টিপস দেওয়ার জন্য।

তাই কাউকে তার বাহ্যিক পোষাক ও অর্থ দেখে বিচার করা উচিত নয়। অনেকে খুব চাকচিক্য পছন্দ করে। অনেকে টাকা উপার্জন করে। কিন্তু মনের দিক থেকে তারা ছোটই থেকে যায়। মানুষকে তার মন এবং সুন্দর মানসিকতা দিয়ে বিচার করতে হবে। মনের সৌন্দর্যই যে আসল সৌন্দর্য!

লেখকঃ সাকিব মোহাম্মাদ আনিসুল ইসলাম, ৫৫ তম ব্যাচ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ

#এমএস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close