বিনোদনসাক্ষাৎকার
ডিপ্রেশন থেকে শুরু, পরী এখন সবার প্রিয়
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ আতঙ্ক আর হতাশার খবরে পরিপূর্ণ চারদিক, ঠিক তখনই মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে নেটিজেনদের সামনে হাজির হয়েছিলেন তিনি। সেই হাসি ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতেও প্রয়াস চালিয়েছেন একের পর এক। অবশ্য তিনি নিজেও ডিপ্রেশনে ছিলেন, একের পর এক ভিডিও বানিয়ে নিজের মুখেও হাসি ফুটিয়েছেন। বলছি ‘আনঅফিসিয়াল কমনসেন্স বাই পরী’-র কথা। তার আসল নাম পরী রুখ আল মতিন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত মুখ পরী পেশায় একজন লিগ্যাল অফিসার। কাজ করছেন রেডিও জকি হিসেবেও। শুধু তাই নয়, তিনি উদ্যোক্তাও। এতকিছুর পরও সময় দেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনি একটা ভিডিও প্রকাশ করলেই তা ছড়িয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষের কাছে। পরীর কাছে এটাই ভালোবাসা।
‘আনঅফিসিয়াল কমনসেন্স বাই পরী’-র শুরু থেকে বর্তমান প্রসঙ্গসহ নানা বিষয়ে কথা হয় পরী রুখ আল মতিনের সঙ্গে। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-
‘আনঅফিসিয়াল কমনসেন্স বাই পরী’-র শুরুর গল্পটা জানতে চাই? কোন উদ্দেশ্যে আসলে পেইজটি লঞ্চ করা হয়?
পরী রুখ আল মতিন: শুরুর গল্পটা বলতে হলে বলবো, হুট করেই অনেকটা শুরু করা। ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে বেরিয়ে আনার প্রয়াসেই পেইজটা ওপেন করা হয়। নিজের চিন্তাগুলোর পাশাপাশি আমার মতো যারা ভাবে তাদের জন্যই এই পেইজ ওপেন করি।
আপনার প্রতিটি ভিডিওতে বিভিন্ন সমস্যা বা ঘটনা ফুটে ওঠে। এ ঘটনাগুলো আপনার সঙ্গে কতটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত?
পরী রুখ আল মতিন: আমার প্রতিটি ভিডিওতে বলা কথাগুলোর অনেকাংশেই অধিকাংশ মানুষের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটা আমার ধারণা বলতে পারেন। হয়তো এ কারণেই আমার ভিডিও মানুষ দেখেছে এবং আমাকে পরিচিতি বেড়েছে।
আপনার ভিডিওগুলো দেখে অনেকেই মজা পান। আবার অনেক কিছু শেখারও আছে বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু এ কাজে আপনার কাছের মানুষদের কতটুকু সাহায্য পেয়েছেন?
পরী রুখ আল মতিন: মানুষের সাহায্য বলতে এটাই বলবো, আমি অপরিসীম ভালোবাসা পেয়েছি। সমালোচনা পাইনি তা এমন নয়, কিন্তু আমি তা ভালোবাসার একপ্রকার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই ধরে নেবো। আর অনেকেই আমাকে প্রায়ই ইনবক্সে যোগাযোগ করে তাদের মনের কথা নিয়ে, ডিপ্রেশন নিয়ে। আমি সেগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। আমি মনে করি, আজকাল ব্যস্ততার ভিড়ে কথা বলার কিংবা শোনার মানুষের অভাব আছে বেশ। আর আমি সেই মানুষ হতে পেরেছি অনেকের কাছে। এই ব্যাপারটা আমি ব্যক্তিগতভাবে বড় সফলতা হিসেবে মনে করি।
যতটুকু শুনলাম, আপনি প্রচুর বই পড়েন। বিষয়টি কনটেন্ট নির্মাণে আপনাকে কতটা সাহায্য করে?
পরী রুখ আল মতিন: কলেজ অবধি আমি ছিলাম বইয়ের পোকা। ভিডিও বানানো ছাড়াও, আমি ফুল টাইম করপোরেট চাকরিতে আছি লিগ্যাল অফিসার হিসেবে, পাঁচ বছর হলো রেডিও জোকি হিসেবে কাজ করছি এবং নিজের ব্যবসাও আছে। তাই ব্যস্ততার ভিড়ে খুব একটা বই পড়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু চেষ্টা করি পড়ার। আমি মনে করি, বই পড়া হলো মনের খোরাক। মন ভালো তো সব ভালো। তাছাড়া বই থেকে অনেক কিছুই জানা যায়, জ্ঞান বাড়ে। আর জ্ঞানের পরিধি বাড়া মানে সব কিছুতেই তার একটা প্রভাব পড়ে। আমার কনটেন্ট ক্রিয়েশনেও পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আপনার প্রিয় লেখক?
পরী রুখ আল মতিন: প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। তার প্রতিটি বই পড়ে শব্দের যাদুর মুগ্ধতায় আমি আমার একজীবনে অনেকবার মুগ্ধ হয়েছি।
যদি সম্ভব হতো, কোন বইয়ের কোন চরিত্রটি হতে চাইতেন?
পরী রুখ আল মতিন: রুপা।
আপনার যখন মন খারাপ হয় তখন কী করেন?
পরী রুখ আল মতিন: মন খারাপ হলে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলি। আর কনটেন্ট ক্রিয়েটারদের জন্য মন খারাপ থাকাটা আসলে অনেক সময় ব্লেসিং হিসেবে কাজ করে। ক্রিয়েটিভি তখন বেড়ে যায়। আমার যে ভিডিওগুলো মন খারাপ থেকে করা, সেগুলোই বেশি পরিচিতি পেয়েছে।
আপনার প্রতি প্রতিনিয়ত মানুষের প্রত্যাশা বাড়ছে। অনেকেই চান, আপনি যেন প্রতিদিন ভিডিও আপলোড করেন। এতে দায়িত্বের চাপ বেড়েছে কী?
পরী রুখ আল মতিন: দায়িত্বের চাপ বলব না, বলতে পারেন ভালোবাসার চাপ। তবে আমি চেষ্টা করি চাপে পড়ে কিছু না করতে। মনকে হালকা করতেই তো ভিডিও পেইজ খোলা। তাই চাপ বাড়ছে ওভাবে ভেবে না দেখার চেষ্টা করি।
আপনি দীর্ঘ সময় ধরে ভিডিও বানাচ্ছেন। এসব ভিডিও নিয়ে মজার কোনো অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
পরী রুখ আল মতিন: নাহ্; আসলে তেমন কোনো মজার ঘটনা নেই। বানিয়ে কিছু একটা বলতে পারলে মনে হয় ভালো হতো!
যারা কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
পরী রুখ আল মতিন: আসলে নিজেকে এখনও এতটা বড় মাপের কিছু মনে করছি না। তাই মনে করি উপদেশ দেয়ার মতো এখনও তেমন কেউ হয়ে উঠতে পারিনি। তবে এটাই বলবো সবার উদ্দেশ্যে, যা কিছু করলে ভালো লাগে তাই করতে। তবে তিনটি প্রশ্ন মাথায় রেখে।
১. আমি আমার ক্ষতি করছি কি-না?
২. আমি অন্য কারো ক্ষতি করছি কি-না?
৩. আমি ভুল কাজ করছি কি-না?
এই তিনটা প্রশ্নের উত্তর ‘না’ হলে ওই কাজ করতে আমি সবাইকে উৎসাহিত করবো।
/এন এইচ