দেশজুড়ে
ডা. আকাশের আত্মহত্যা : স্ত্রী মিতুর স্থায়ী জামিন
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার প্ররোচণার মামলায় তাঁর স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে স্থায়ী জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বুধবার (২৮ আগস্ট) বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি কাজী ইজহারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মির্জা মো. সোয়েব মুহিত।
তানজিলা চৌধুরী মিতুর সঙ্গে আট বছর প্রেম করে ২০১৬ সালে বিয়ের পিড়িতে বসেন আকাশ। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক এবং নগরীর থ্রি ডক্টরস কোচিংয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা ও জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন।
গত ৩১ জানুয়ারি সকালে চট্টগ্রাম মহানগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার একটি বাসায় ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নিজের শিরায় বিষ প্রয়োগ করে আত্মহত্যা করেন। তার আগে স্ত্রীর সঙ্গে অন্য পুরুষের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয়। সেদিন ভোর ৪টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান তানজিলা মিতু।
পরে স্ত্রীর সমালোচনা করে স্বামী মোস্তফা মোরশেদ আকাশ ফেসবুকে পোস্ট দেন। ফেসবুকে দেওয়া তাঁর সর্বশেষ স্ট্যাটাস থেকে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে তানজিলা হক মিতু নামের একজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২০১৬ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। বিয়ের আগে পরে অন্য তরুণের সঙ্গে মিতুর সম্পর্কের জেরে দুজনের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসার পরও দীর্ঘ প্রচেষ্টায় স্ত্রীকে ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে আকাশ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে সর্বশেষ স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন। ‘মৃত্যুর জন্য বউই দায়ী’ দাবি করে স্ট্যাটাসে ডা. আকাশ বলেন, ‘তাঁকে আমি ১০০% ভালোবেসেছি।’
আত্মহত্যার আগে স্ত্রীকে জড়িয়ে ডা. আকাশের দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো- “আমার সাথে তানজিলা হক চৌধূরী মিতুর ২০০৯ সাল থেকে পরিচয়, প্রচণ্ড ভালবাসি ওকে। ও নিজেও আমাকে অনেক ভালবাসে আমরা ঘুরে বেড়াই, প্রেম করে বেড়াই, আমাদের ভালবাসা কম বেশি সবাই জানে। অনেকে বউ পাগলাও ডাকতো। ২০১৬ তে আমাদের বিয়ে হয়, বিয়ের কয়েকদিন আগে জানতে পারি কিছুদিন আগে শোভন নামে চুয়েটের ০৮ ব্যচের এক ছেলের সাথে ও হোটেলে রাত কাটায় আর কত কি লজ্জা লাগছে সব লিখতে। ততদিনে সবাইকে বিয়ের দাওয়াত দেওয়া শেষ। আমাকে যেহেতু চট্রগ্রামের সবাই চিনে তাই বিয়ে কেনসেল করতে পারিনি লজ্জাতে। ওর মোবাইলে দেখি ভাইবারে দেখতে পাই মাহবুব নামে কুমিল্লা মেডিকেলের ব্যচম্যটের সাথে হোটেলে সেক্সের শতশত ছবি। আমিতো বেচে থেকেও মৃত হয়ে গেলাম। তারপর ক্ষমা চাইল শবে কদরের রাতে কান্না করে পা ধরে আর কখনো এমন হবে না। আমিও ক্ষমা করে দিয়ে ১ বছর ভালভাবেই সংসার করলাম। তারপর ও দেশের বাইরে আমেরিকা গেল মাঝখানে একবার ঈদ পালন করতে আসল, সেপ্টেম্বরে ২০১৮ আবার চলে গেল ইউএস। এমএলই এর প্রিপারেশন নিচ্ছিল সাথে ফেব্রুয়ারীতে ২০১৯ এ আমার ইউএস এ যাওয়ার কথা। জানুয়ারী ২০১৯ জানতে পারি ও রিগুলার ক্লাবে যাচ্ছে মদ খাচ্চে প্যটেল নামে এক ছেলের সাথে রাত কাটাচ্ছে। আমি বারবার বলছি আমাকে ভাল না লাগলে ছেড়ে দাও কিন্তু চিট করনা মিথ্যা বলনা। আমার ভালবাসা সবসময় ওর জন্য ১০০% ছিল। আমি আর সহ্য করতে পারিনি। আমাদের দেশেতো ভালবাসায় চিটিং এর শাস্তি নেই। তাই আমিই বিচার করলাম আর আমি চির শান্তির পথ বেচে নিলাম। তোমাদেরও বলছি কাউকে আর ভাল না লাগলে সুন্দর ভাবে আলাদা হয়ে যাও চিট করনা মিথ্যা বলনা। আমি জানি অনেকে বিশ্বাস করবে না এত অমায়িক মেয়ে আমিও এসব দেখে ভালবেসেছিলাম। ভিতর বাহির যদি এক হত। সবাই আমার দোষ দিবে সবকিছুর জন্য তাই ব্যখ্যা করলাম। আমার শাশুড়ী এর জন্য দায়ী এসবের জন্য, মেয়েকে আধুনিক বানাচ্ছে। একটু বেশি বানিয়ে ফেলেছে। উনি চাইলে এখনো সমাধান হতো।
ও মা তুমি মাফ করে দিও তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না। মায়ের ভালবাসার কখনো তুলনা চলে না। বারবার বলছি ভাল না লাগলে আলাদা হয় যাও, চিট করনা, মিথ্যা বলনা, বিশ্বাস ভাঙ্গিওনা। হাজার হাজার ছবি আছে আরো খারাপ খারাপ। দিলাম না। যারা বিলিভ করবে এতেই করবে, না করলে নাই। এই ৯ বছরে বয়ফ্রেন্ড স্বামী স্ত্রীর মতো আমার সাথে সবই করে গেল।
ও আমাকে আর কি ভালবাসল? কিসের বিয়ে করল?
আমি শেষ পর্যন্ত চাইছি সব চুপ রেখে সমাধান করে অকে নিয়ে থাকতে। আমার শ্বশুড় আর শাশুড়ীকে বারবার বলছি উনারা সমাধান করতে পারত! আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী আমার বউ ৯টা বছর যাকে ১০০% ভালবাসছি, ওকে প্ররোচনা দিছে মইন মিথি নামে দুই ফ্রেন্ড ওর মা বাবা আমাকে মানসিক কষ্ট দিয়ে মারছে। আমাই এই বেইমানি মেনে নিতে পারি নাই। তারপর ও ভুলে আমি সুন্দর সংসার করতে চাইছি আমার শাশুড়ি, শ্বশুড় আর বউ নামের কলংক করতে দিল না। আমাকে প্রতি নিয়ত প্রেশার দিয়ে গেছে আমার বউ আমার মার নামে যা তা বলে গেছে। আমাকে ভাল না লাগ্লে ছেড়ে চলে যাইতে বলছি ১০০ বার। আমি বোকা ছিলাম তুমি সুখে থেক। অনেকে ওর ফ্যান বিলিভ করবে না, আমি জানি তবে এটাই সঠিক মরার আগে কেউ মিথ্যা বলে না আর বাইরে থেকে মানুষের ভিতরের চেহারা বুঝা যায় না। ও সুন্দরী, পড়াই ভাল, গান পাড়ে সত্য কিন্তু ও ভাল অভিনেত্রী ভাল চিটার। যাদের ঈচ্ছা বিলিভ কবে যাদের ঈচ্ছা নাই করবে না। তবে কাউকে ভালবেসে চিটার গিরি কর না।”
৩১ জানুয়ারি রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে নগরীর নন্দনকানন এলাকায় এক আত্মীয়র বাসা থেকে তানজিলা মিতুকে আটক করে। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মোস্তফা মোরশেদ আকাশের স্ত্রী, শ্যালিকা, দুই বন্ধুসহ ছয়জনকে আসামি করে ১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন ডা. আকাশের মা জোবেদা খানম। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা মানসিক যন্ত্রণা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করায় আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে মৃত্যুর মুখে পড়েন মোস্তফা মোরশেদ আকাশ। ২০০৯ সালে তানজিলা মিতুর সঙ্গে মোস্তফা মোরশেদের প্রেমের সম্পর্ক হয়। ২০১৬ সালে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে আসা–যাওয়ার মধ্যে থাকেন তানজিলা মিতু। কিন্তু বিয়ের আগে ও পরে অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। মোস্তফা মোরশেদ বিষয়টি জানার পর তাঁর শ্বশুর-শাশুড়িকে জানান। তবে তারা শোধরানোর উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো মোস্তফা মোরশেদকে শাসাতে থাকেন। তানজিলার বোন সানজিলা যুক্তরাষ্ট্র থেকে নানাভাবে মোস্তফা মোরশেদকে হুমকি দিয়ে মানসিক যন্ত্রণা দিতে থাকেন।
এই মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হন তানজিলা মিতু। পরে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। জামিন শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত আজ স্থায়ী জামিনের আদেশ দিলেন।
#এমএস