বিশ্বজুড়ে

ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে জনসমর্থন বাড়ছে!

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএস নিউজের সবশেষ জাতীয় জনমত জরিপ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫ শতাংশ মানুষ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্তের উদ্যোগে সমর্থন জানিয়েছেন।

একই জরিপ অনুযায়ী, ৫৩ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, এই অভিশংসন তদন্তের লক্ষ্য ট্রাম্পকে বিপদে ফেলা।

যথারীতি ট্রাম্পকে অভিশংসন প্রশ্নে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে মতভেদ আগের মতোই তীব্র। সিবিএস নিউজের জনমত জরিপেও তা স্পষ্ট। ৭৭ শতাংশ রিপাবলিকান ট্রাম্পকে অভিশংসনের বিপক্ষে। ৮৭ শতাংশ ডেমোক্র্যাট অভিশংসনের পক্ষে। আর দলনিরপেক্ষ আমেরিকানদের অবস্থান কার্যত সমান সমান—৫১ শতাংশ বিপক্ষে, ৪৯ শতাংশ পক্ষে।

অধিকাংশ ভাষ্যকার মনে করেন, ডেমোক্র্যাটদের আনুষ্ঠানিক উদ্যোগে অভিশংসনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এক ধরনের বাজিতে নেমেছেন। দেশের মানুষ বিপক্ষে—এই যুক্তিতে তিনি এত দিন দলের প্রগতিপন্থীদের দাবি সত্ত্বেও অভিশংসন সমর্থন করেননি। তবে অবস্থা বদলে যায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ট্রাম্পের কথোপকথনের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর।

হোয়াইট হাউস নিজ থেকে সেই কথোপকথনের বিবরণ অবমুক্ত করায় ডেমোক্র্যাটদের কাছে টাটকা প্রমাণ রয়েছে, ট্রাম্প কীভাবে নিজের ক্ষমতা অপব্যবহার করেছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ নিজে ডেকে এনেছেন। কথোপকথন লুকিয়ে রাখার যে চেষ্টা হোয়াইট হাউস করেছে, পেলোসি তাকে ‘কভার-আপ’ বলে বর্ণনা করেছেন।

পেলোসির ধারণা, ট্রাম্প কীভাবে তাঁর ওপর ন্যস্ত শাসনতান্ত্রিক দায়িত্বের অপব্যবহার করেছেন, সে কথা সাধারণ আমেরিকানদের কাছে সহজেই ধরা পড়বে।

রোববার বিকেলে দলীয় নেতাদের সাপ্তাহিক টেলিফোন কনফারেন্সে পেলোসি ও দলের অন্যান্য নেতা অভিশংসন প্রশ্নে তদন্তের সিদ্ধান্ত সঠিক, সে বিষয়ে নিজেদের আস্থা ব্যক্ত করেন।

পেলোসি বলেন, ‘আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জনমত সে কথাই বলছে। তবে আমাদের সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হবে। আমরা যা-ই করি, তা যেন শাসনতন্ত্রসম্মত হয়।’

জানা গেছে, এই তদন্তে অন্য সব বিষয় বাদ দিয়ে শুধু ইউক্রেনের উদাহরণ ব্যবহার করা হবে। ডেমোক্রেটিক নেতা হাকিম জেফ্রিস দলের সদস্যদের পরামর্শ দিয়েছেন, তাঁরা যেন ‘জাতীয় নিরাপত্তা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশ্বাসঘাতকতা’—এই তিনটি বিষয়েই তাঁদের বক্তব্য সীমাবদ্ধ রাখেন।

ট্রাম্প নিজে টুইটারে ক্ষান্তিহীনভাবে ডেমোক্র্যাটদের আক্রমণ করে যাচ্ছেন। তিনি কোনো আইনভঙ্গ করেননি, এই দাবি করছেন। তিনি বলেছেন, ডেমোক্র্যাটরা যা করছেন, তার একমাত্র লক্ষ্য তাঁকে হেনস্তা করা।

ট্রাম্পের ক্রোধের একটি প্রধান লক্ষ্য কংগ্রেসের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির প্রধান এডাম শিফ। মিথ্যাচারের অভিযোগে তিনি শিফের পদচ্যুতি দাবি করেছেন।

ট্রাম্পের জন্য স্বস্তির কথা হলো, এখন পর্যন্ত অধিকাংশ রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য তাঁর সঙ্গে রয়েছেন।

হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার এমন কথাও বলেছেন, ট্রাম্পই আসল হুইসেলব্লোয়ার। কারণ তিনি সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তাঁর ছেলের দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচন করেছেন।

যে হুইসেলব্লোয়ার বা সতর্কতাকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে ডেমোক্র্যাটরা অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ট্রাম্প তার বিরুদ্ধেও টুইটার-যুদ্ধে নেমেছেন।

সব হুইসেলব্লোয়ারকে যেকোনো পাল্টা প্রতিশোধ থেকে রক্ষার আইন আছে। তবে ট্রাম্প এই অজ্ঞাতনামা হুইসেলব্লোয়ারকে ‘স্পাই’ হিসেবে অভিহিত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন।

রোববার এক টুইটে ট্রাম্প এই হুইসেলব্লোয়ার ও যেসব সরকারি কর্মকর্তা তাঁকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন, তাঁদের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাতের দাবি তুলেছেন।

অভিশংসনের প্রশ্নে কংগ্রেসের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটি ও কমিটির প্রধান এডাম শিফ নেতৃত্ব দেবেন, সে ব্যাপারে ডেমোক্রেটিক নেতৃত্ব ঐকমত্যে পৌঁছেছে। শিফ ইতিমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানিকে তাঁর কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সমন পাঠিয়েছেন।

জুলিয়ানি জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধেই তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

এখনো স্পষ্ট নয়, হোয়াইট হাউস এই সমনের জবাবে কী ব্যবস্থা নেবে। এত দিন তারা ডেমোক্র্যাটদের সব অনুরোধ উপেক্ষা করে এসেছে। কিন্তু এখন এই সমনের পেছনে অভিশংসনের আইনগত ক্ষমতা রয়েছে, যা উপেক্ষা করা খুব সহজ হবে না।

এডাম শিফ জানিয়েছেন, তাঁর কমিটির সামনে অজ্ঞাতনামা হুইসেলব্লোয়ার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রশ্নোত্তরে উপস্থিত হতে সম্মত হয়েছেন।

কবে এই বৈঠক, তার তারিখ নির্ধারিত হয়নি। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে হুইসেলব্লোয়ারের মুখোমুখি সাক্ষাতের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে।

#এমএস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close