গার্মেন্টসপ্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য

চলতি মাসেই পোশাক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা রুবানা হকের

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের পোশাক কারখানার কাজ ৫৫ শতাংশ কমেছে, বিশ্বেও ভোক্তার চাহিদা কমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চলতি মাস (জুন) থেকে শ্রমিক ছাঁটাই করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক।

বৃহস্পতিবার (৪ জুন) শ্রমিকদের করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য দেশের প্রথম ‘স্টেট অব দ্য আর্ট কোভিড-১৯ ল্যাব’ উদ্বোধন উপলক্ষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘জুন থেকে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হবে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা। কিন্তু করার কিছু নেই। কারণ শতকরা ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে ফ্যাক্টরি চলছে। আমাদের ছাঁটাই ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। তবে এ ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের জন্য কী করা হবে; এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলছি, কীভাবে এ সংকট মোকাবিলা করা যায়। তবে এ অবস্থা হঠাৎ করে বদলেও যেতে পারে। তখন ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকরাই কাজে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘করোনা প্রাদুর্ভাবের সময়ে প্রায় ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানির ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ শতাংশ ফেরত আসছে। তবে যারা ফেরত এসেছে তারা আবার বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছে।’

‘বিশ্বে ভোক্তার চাহিদা কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থা বলছে, আগামীতে ৬৫ শতাংশ চাহিদা কমে যাবে। তাই পোশাকের চাহিদা বাড়ার তেমন সম্ভাবনা কম। দেশের পোশাক কারখানায়ও ৫৫ শতাংশ কমে যাবে। ৪২ হাজার কোটি টাকা মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ক্ষতি হবে। করোনায় দেশের ৯৯ শতাংশ পোশাক কারখানার ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটি দিয়ে চালাতে হবে। জুনে কারখানাগুলোতে ৩০ শতাংশ কাজ হবে। জুলাইতে কী হবে বলা যাচ্ছে না। আমাদের বড় ধাক্কা খেতে হবে। এটি অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। বিজিএমইএ অন্তর্ভুক্ত কারখানা ছিল ২২৭৪টি, এখন ১৯২৬টি চলছে। তার মানে বেশকিছু কারখানা বন্ধ হয়েছে।’

তবে করোনা বিস্তারের সময়ে চলতি অর্থবছর পোশাকখাতে রফতারি আয় কমলেও সেটা ২৩ বিলিয়ন হবে বলে প্রত্যাশা করেন পোশাক কারখানা মালিকদের এ নেতা।শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়ে পরে যোগাযোগ করলে রুবানা হক জাগো নিউজকে বলেন, দেশে শ্রম আইন আছে। শ্রম আইনের বাইরে কিছু হবে না। আগামীতে ভার্চুয়াল মার্কেট তৈরির ওপর জোর দিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এখন পুরো বিশ্ব অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করছে। অনলাইনে ব্যবসায়ী টু ভোক্তা (বিটুসি) মার্কেটে এগোতে হবে। এতে করে ক্রেতা জোটের দিকে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে না। পাশাপাশি পণ্য উৎপাদনের ধরন পরিবর্তন করতে হবে।’

ড. রুবানা হক বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় এখন মানুষ সুস্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি; পোশাকে নয়। ফলে শতকরা ৬৫ শতাংশ অর্ডার কমে যাচ্ছে। চীন থেকে ৫৫ ভাগ বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে দুই শতাংশ কমিয়েছে। অন্যদিকে ভিয়েতনামে সাত শতাংশ রফতানি আদেশ বাড়িয়েছে। তবে চীন ভিয়েতনামে অনেক বিনিয়োগ করেছে। এটা তারা হয়তো বাড়াবে। কিন্তু আমরা কীভাবে এগোবো তা বের করতে হবে।’

শ্রমিকদের করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য দেশে চালু হওয়া প্রথম ‘স্টেট অব দ্য আর্ট কোভিড-১৯ ল্যাব’টির কারিগরি সহায়তা করছে ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বাডাস)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসারে দেশে প্রথম বিশ্বমানের স্টেট অব দ্য আর্ট কোভিড-১৯ ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গাজীপুরের চন্দ্রায় ড. ফরিদা হক মেমোরিয়াল জেনারেল হাসপাতালে প্রধান ল্যাবটির কার্যক্রম শুরু হবে। এতে ওষুধ এবং ল্যাব খরচ দেবে বিজিএমইএ।

আন্তর্জাতিক মানের এসব ল্যাব সেন্টারে প্রতিদিন ৪০০টি করে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা যাবে। পর্যায়ক্রমে শিফটসহ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়ানো হবে। এই ল্যাবগুলো হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসারে। এছাড়া পরবর্তীতের নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে ল্যাব করা হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুশের্দী, শ্রমসচিব কে এম আব্দুস সালাম, ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বাডাস) সভাপতি প্রফেসর ডা. এ কে আজাদ খান প্রমুখ।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close