প্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য
জিএসপি সুবিধা নয়, আঞ্চলিক এফটিএ নির্ভরতা চান ব্যবসায়ীরা
টেকসই রফতানি বাজার নিশ্চিতকরণ
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। তবে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জন্য বেশকিছু সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা থাকছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মাধ্যমে এলডিসি দেশগুলো বিভিন্ন দেশে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পেয়ে থাকে। উন্নয়নশীল হলে এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে দেশ। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন রফতানি পণ্য ও সেবা বিশ্ববাজারে সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত বাজারের ওপর নির্ভর না করে ২০২৬ সালের মধ্যেই বিভিন্ন দেশ, অঞ্চল ও মহাদেশের সঙ্গে আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে হবে। একই সঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাশিয়ান এসপিএফএসের মাধ্যমে মুদ্রা লেনদেন চালুর প্রস্তাবও করেছেন তারা।
রফতানিসংক্রান্ত জাতীয় কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য বিশ্ববাজারে পণ্য ও সেবার রফতানি বাড়াতে সম্প্রতি বেশকিছু প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। তাদের প্রস্তাবে এসব বিষয় উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করবে। তাই এখন উন্নত বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ব্যবসা-বাণিজ্যে এগিয়ে যেতে হবে। এ গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এরই মধ্যে ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সই হয়েছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশকিছু দেশের সঙ্গে এফটিএ (মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি) বা পিটিএ স্বাক্ষরের জন্য কাজ চলমান রয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এফটিএ বা পিটিএ স্বাক্ষরের ফলে প্রাথমিকভাবে অর্থনীতির ওপর চাপ পড়বে। তবে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করলে এর সুবিধা অনেক। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সুবিধা আদায় করতে এর বিকল্প নেই। এজন্য দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এফটিএর সঙ্গে শুধু অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক সম্পর্ক নয়, অনেক টেকনিক্যাল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। এক্ষেত্রে দেশের ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে এফবিসিসিআই বলছে, বিশ্ববাজারে রফতানি পণ্য ও সেবার প্রবেশ বাড়াতে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে জিএসপিসহ শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সহায়ক ব্যবস্থাগুলো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের পরও অব্যাহত রাখার পথনকশা সক্রিয়ভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া আমাদের প্রতিযোগী রফতানিকারক দেশগুলোর প্রবণতা এবং অনুসৃত উদ্যোগ বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যমান জিএসপি বা শুল্কমুক্ত বাজারের ওপর নির্ভর না করে ২০২৬ সালের মধ্যে পণ্য ও সেবা খাতের নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই রফতানি বাজার নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আরসিইপি, রাশিয়া-সিআইএস অঞ্চলভুক্ত ইউএই, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, আফ্রিকান মহাদেশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল দক্ষিণ আমেরিকা কমন মার্কেট ইত্যাদি আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য একটি সময়সূচিভিত্তিক সক্রিয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রফতানি পণ্যের ব্যবসাবান্ধব প্রবেশাধিকার ত্বরান্বিত এবং সহজ করার জন্য বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা রফতানি হয় এসব দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য সংক্রান্ত বিধিমালার সমন্বয় করতে হবে। এক্ষেত্রে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, শুল্ক ও কর, মান-নিয়ন্ত্রণ এবং মেধাস্বত্ব সংস্থাগুলোসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য দ্বিপক্ষীয় সক্রিয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
বিনিময় হারের ওঠানামার অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে দক্ষ ও সাশ্রয়ী পারস্পরিক লেনদেনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেডিং অংশীদারদের সঙ্গে বিশেষ করে ইসিবি, ব্যাংক অব রাশিয়া, ব্যাংক অব চায়না এবং অন্যান্য ইউএসডি, ইউরো, ডলার, ইয়েন, রুবল এসব মুদ্রাবিনিময় চুক্তি করতে হবে। ব্যয়বহুল তৃতীয় ব্যাংক গ্যারান্টির পরিবর্তে লেনদেনকারী ব্যাংকের মধ্যে সুবিধাজনক ও সম্মত আর্থিক মেসেজিং সিস্টেম ব্যবহার করে সরাসরি অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্মত মুদ্রায় দ্বিপক্ষীয় লেনদেন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এইউএস সুইফটের সঙ্গে সমান্তরালভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লেনদেনের বিকল্প নেটওয়ার্ক যেমন ইসিবি ও রাশিয়ান এসপিএফএস এবং অন্যদের খরচ দক্ষতা, লেনদেনের ঝুঁকি এবং নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ব্যবহার করতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমরা এখন জিএসপি সুবিধা পাচ্ছি।
যদিও জিএসপি প্লাসের জন্য চেষ্টা চলছে, তার পরও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আমরা হয়তো এ সুবিধা আর নাও পেতে পারি। এজন্য আমরা চাচ্ছি যেসব দেশে বিশেষ করে আমাদের রফতানি বাণিজ্য রয়েছে সেসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা হোক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারতসহ প্রায় ৬৫টি দেশের সঙ্গে ভিয়েতনামের এফটিএ রয়েছে। আমাদের অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোও অনেক দেশের সঙ্গে এফটিএ চুক্তি করেছে। তাই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা না হলে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ব।
রাশিয়ার রুবলের সঙ্গে মুদ্রাবিনিময় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে মুদ্রা বিনিময় করছি না। তবে বর্তমানেও রাশিয়ার অনেক দেশ এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশ সেখান থেকে জ্বালানি কিনছে। সেজন্য তাদের সঙ্গে পেমেন্ট সিস্টেমও ডেভেলপ করেছে। আমাদের খাদ্যপণ্য, জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্যও রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানি করা হয়। তাই আমাদের রাশিয়ার সঙ্গে আধুনিক পদ্ধতির লেনদেনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।
/একে