দেশজুড়ে
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি পিছিয়েছে
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোার্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভটু আপিল শুনবেন সর্বোচ্চ আদালত। এজন্য আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত রিট আবেদনকারীদের দুটি আবেদনের শুনানি মুলতবি করা হয়েছে।
সোমবার (০৬ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
লিভটু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী দলটির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আবেদন শুনানির জন্য ছিল।
এর সঙ্গে বিচারাধীন বিষয় উপেক্ষা করে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবির অভিযোগে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনটিও ছিল শুনানির জন্য। গত ১৯ অক্টোবর আদালত এ তারিখ দিয়েছিলেন।
সে ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমীর ও আহসানুল করিম।জামায়াতের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. জিয়াউর রহমান।
পরে তানীয়া আমীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত অবমাননা ও দলটির কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার আবেদন শুনানির জন্য ছিল। আদালত বলেছেন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যে লিভটু আপিল বিচারাধীন, সেটিই শুনে ফেলবেন। এর জন্য ১২ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন। আশা করি ওইদিন শুনানি হবে।’
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন চ্যালেঞ্জ করা রিটকারী তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজন (রিটকারী) সম্প্রতি দুটি আবেদন করেন। একটি আবেদনে লিভটু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। আরেকটি আবেদনে বিচারাধীন বিষয় উপেক্ষা করায় দলটির নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনার অরাজি জানানো হয়।
সেদিন চেম্বার আদালত আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। সে ধারাবাহিকতায় গত ৩ আগস্ট আবেদন দুটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। এর মধ্যে ৪২ ব্যক্তি আবেদন দুটিতে পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেন। এই ৪২ ব্যক্তির মধ্যে আছেন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, অধিকার কর্মী, আইনজীবী।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। এর পরের বছরই বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।
এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১) (বি) (২) ও ৯০ (সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘণ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
রুলটি যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াত ইসলামী আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করলে ওই বছর ৫ আগস্ট তা খারিজ হয়। পরে ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলে রায়ের বিরুদ্ধে লিভটু আপিল করে জামায়াতে ইসলামী। সে আপিলে পক্ষভুক্ত হয়ে জামায়াতের নিবন্ধনের পক্ষে গত ১ আগস্ট আবেদন করেন ৪৭ ব্যক্তি।
হাইকোর্টের রায়ের পর ওই সময় বিএনপির জোট শরিক দল জামায়াতের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দশম, একাদশ সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেনি জামায়াতে ইসলামী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের মার্চে জামায়াতের জন্য বরাদ্দ মার্কা ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট জারি করে নির্বাচন কমিশন।