দেশজুড়েপ্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদন
জানেন কি কত বছর আগে চা পান শুরু হয়!(ভিডিও)
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ আপনি হয়তো নিয়মিত দিনে কয়েক কাপ চা পান করেন। তবে আপনি কি জানেন, চায়ের প্রচলণ কবে বা কিভাবে মানুষের অভ্যাসের মধ্যে এতো গভীরভাবে ছড়িয়ে পড়লো এই পাণীয়। এর পিছনের গল্পটা বেশ চমকপ্রদ। আপনার হাতে এক কাপ চায়ের পেছনে রয়েছে উটের কাফেলা, পরজীবনের প্রয়োজন এবং বিপ্লব-এর নানা ইতিহাস। আর বাংলাদেশেই কিভাবে চায়ের চাষ বা জনপ্রিয়তা পেল। তো চলুন বন্ধুরা আজকে চা নিয়ে জানাবো নানা অজানা তথ্য।
৫ হাজার বছরেরও আগে চীনের ইয়াং লিং এলাকায় মৃত মানুষের শেষ বিদায়ে উপকরন হিসেবে পাতা দিয়ে তৈরি শুকনো কেক দেয়া হতো। এইসব পাতার মধ্যে থাকা ক্যাফেইন এবং থিয়ানিন প্রমাণ করে যে, সেগুলো প্রকৃতপক্ষে ছিল চা পাতা। যা কিনা মৃতদেহের সাথে দিয়ে দেয়া হতো। মৃত ব্যক্তির পরজীবনের জিনিসপত্র হিসেবে। সেখানে থেকে চীনারা ধীরে ধীরে চা পাতার রহস্য খুঁজে পায় ও চা পানের যাত্রা শুরু করে। এভাবে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের চা এবং বিভিন্ন প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে চা তৈরি করা হচ্ছে।
আর চীনে ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। আর ভারতবর্ষে এর চাষ শুরু হয় ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে। ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশে চা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ১৮৩৯ সালে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসাম ও সিলেটের পার্বত্য অঞ্চলে চা বাণিজ্য শুরু করে। বেশ কয়েক বছর গবেষণা করার পর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় চা এস্টেট থেকে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৭টি বাণিজ্যিক চা এস্টেট রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কর্মক্ষম চা বাগান। এখানকার এই শিল্প বিশ্বের ৩% চা উৎপাদন করে থাকে এবং ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশে চা উৎপাদনের সাথে প্রায় ৭৫ শতাংশই নারী শ্রমিক জড়িত।
চা গাছের জন্য অধিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত ও তাপের প্রয়োজন হয় বলে বাংলাদেশের বৃষ্টিবহুল পাহাড়িয়া অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চায়ের চাষ করা হয়। চা শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। জাতীয় অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এখান থেকে চা রফতানি করা হয় ২৫টি দেশে। চা উৎপাদনের দিক থেকে এগিয়ে আছে চীন, ভারত, কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কা। চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১০ তম। চা পানে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৬তম ৷ বাংলাদেশে চা পানকারীর সংখ্যা প্রতিবছর ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে।
‘
তবে চা উৎপাদনে ১৬৬ বছরের রেকর্ড ভাঙলো বাংলাদেশ। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২০১৯ সালে ৯৬ দশমিক ০৭ মিলিয়ন কেজি (৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি) চা উৎপাদন করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক কোটি ৬০ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদিত হয়েছে।
এর মধ্যে মৌলভীবাজারে রয়েছে ৯২টি চা বাগান। বাকিগুলো হবিগঞ্জে ২৪টি, সিলেটে ১৯টি, চট্টগ্রামে ২২টি, পঞ্চগড়ে সাতটি, রাঙ্গামাটিতে দুটি ও ঠাকুরগাঁওয়ে একটি। এসব বাগানে মোট জমির পরিমাণ ২ লাখ ৭৯ হাজার ৪৩৯ একর।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, রাশিয়া, চেক ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্র, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরী, জাপান, মিশর, সুদান, জর্ডান, গ্রীস, সাইপ্রাস, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে চা রপ্তানী করা হয়।
/এন এইচ