দেশজুড়ে
জজ পরিচয়ে পুলিশকে দিয়ে গাড়ি আটকে টাকা আদায় করত আটোচালক
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সড়ক-মহাসড়ক প্রথমে একটি গাড়ি বা বাসকে টার্গেট করে ও নম্বর সংগ্রহ করে। পরে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে নিজেকে জজ পরিচয় দিয়ে সেই থানার এলাকার ওসি বা ট্রাফিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন জহরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। পরিচয়দানকারী হাইকোর্টের ৩ নং বেঞ্চের বিচারক পরিচয়ে মুঠোফোনে বলতেন, এই নম্বরের গাড়িটি আমার গাড়িকে এক্সিডেন্ট করে পালিয়েছে। তখন কর্মকর্তারা সেই গাড়িটি আটক করলে ফোনে জজ পরিচয়দানকারী সেই গাড়ির চালক বা মালিকের সাথে কথা বলতেন। তারা গাড়ি মেরামত বাবদ টাকা দিলে তবেই ছাড়া হবে। না হলে গাড়ি জব্দ থাকবে ও জেলও খাটতে হবে চালককে। তখন বাধ্য হয়ে কথিত জজকে বিকাশে টাকা দিয়ে তবে মুক্তি পেত ভুক্তভোগীরা। পুরো প্রক্রিয়াটির লেনদেন ও কথাবার্তা হতো মুঠোফোনে। প্রশাসনকে ব্যবহার করা অভিনব এক প্রতারককে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির আসল নাম আবু বকর সিদ্দিক(২০), তিনি পেশায় একজন অটোচালক।
বুধবার (০৯ নভেম্বর) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরাফাত হোসেন । তিনি বলেন, উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্যের ভিত্তিতে আমরা কাজ শুরু করি। পরে মঙ্গলবার রাতে আশুলিয়ার জিরাব পুকুরপার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করি।
গ্রেপ্তারকৃত আবু বকর সিদ্দিক রাজবাড়ী পাংশা থানার পূর্ব বাগদোল গ্রামের মজিবরের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার জিরাব এলাকার শফিকুল কাজীর বাড়িতে ভাড়া থাকত। পেশায় তিনি একজন অটোরিকশা চালক। তার কাছ থেকে ব্যবহৃত মোবাইল ও সিম জব্দ করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর ডিবির পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন জানায়, গত কয়েক মাস আগে আশুলিয়ায় একটি মারামারি ঘটনায় ৯৯৯ এ ফোন দিলে কিছুক্ষনের মধ্যেই পুলিশ চলে আসে। আইনগত ব্যবস্থাও নেয়। ৯৯৯ এ পুলিশের তড়িৎ পদক্ষেপের বিষয়টি দেখে অপরাধারের চক সাজায় অটোচালক আবু বকর সিদ্দিক। মোবাইলের নতুন সিম কিনেন। তারপর শুরু হয় অভিনব অপরাধ কর্মকান্ড। বিচারক বা জজ পরিচয়ে ৯৯৯ এ ফোন করে বিভিন্ন পুলিশ সদস্যের মোবাইল নাম্বার জোগার করত আশুলিয়ার এক অটোচালক। সেই পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন গাড়ি জব্দের নির্দেশনা দিত। পরে গাড়ির মালিকের সাথে যোগাযোগ করে টাকা হাতিয়ে নিত অটোচালক আবু বকর সিদ্দিক (২০)। এভাবে গত দুই মাসে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ গাড়ি থেকে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এমন ঘটনার এক ভুক্তভোগী মাজেদুল ইসলাম বলেন, গত ১৩ অক্টোবর আশুলিয়া বাইপাইলে আলী নুর নামে আমার একটি বাস ট্রাফিক পরিদর্শক কাজল সাহেব আটক করে। থানা থেকেও পুলিশ আসে। তারা বলে এক জজ সাহেবের প্রাইভেটাকারে এক্সিডেন্ট করেছে আমার বাস। পরে জজ ফোনে আমার সাথে কথা বলে ২৫ হাজার টাকা তার প্রাইভেটকার মেরামতের জন্য দাবি করে। আমি তাকে বিকাশে ২০ হাজার টাকা দিলে তিনি পুলিশকে বাস ছেড়ে দিতে বলেন। আমি সেই জজ ও বাইপাইলে পুলিশকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি, আমার বাস কোন এক্সিডেন্ট করেনি। কিন্তু তারা মানেনি। ঘটনার ৫ দিন পর একই অভিযোগে আশুলিয়ার নিশ্চিতপুরে আমার আরেকটি বাস আটক করে। আশুলিয়া থানার ওসি সাহেব কে বিষয়টি জানালে তিনি জজকে সরাসারি আসার পরামর্শ দেন। কিন্তু কেউ আসেনি। পরে মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে আমি বাদী হয়ে বুধবার (০৯ নভেম্বর) আশুলিয়া থানায় মামলা দিয়েছি।
সাভার জোনের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (এডমিন) আব্দুস সালাম বলেন, জজ পরিচয় দিলেও তাৎক্ষনিকভাবে পরিচয় যাচাই করা সম্ভব ছিল না। একই ঘটনা বার বার ঘটার পর বিষয়টি আমরা উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। মুলত হাইকোর্টের ৩ নং বেঞ্চে জহরুল ইসলাম নামে একজন আসল বিচারপতি রয়েছেন। ফলে বিষয়টি খুবই স্পর্শকতার। তবে নানা তদন্ত শেষে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ই প্রতারক সেই নাম ব্যবহার করতো।
ঢাকা উত্তর ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি গত দুই মাস ধরে আবু বক্কর নিজেকে জজ পরিচয়ে ৯৯৯ এর অপব্যবহার করে অপকর্মের করে আসছিলো। ইতিমধ্যে আবু বকর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী সহ বিভিন্ন জেলায় এই ধরণের অপকর্ম করেছে। এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার কাছেও অভিযোগ গিয়েছে। সেই সূত্র ধরে তাকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে এই অপরাধের সাথে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তদন্ত চলছে।
/এন এইচ