প্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদন
ছুটে চলা বিনিদ্র প্রহরী তারা (ভিডিও)
রিফাত মেহেদী, বিশেষ প্রতিনিধি: ছেলে সামিরের বয়স ১০, মিষ্টি মনি মেয়ের ২ বছর ছুঁই ছুঁই। বাসা রাজধানীর মিরপুরে। এরমধ্যে করোনায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন, চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে দুরে থাকা পরিবারটি বিপাকে পড়ে যায়। দিনে দিনে সমস্যাও বাড়তে থাকে। তাই দ্রুত সেখান থেকে নিজের কর্মস্থল মানিকগঞ্জের শিবালয়ে নিয়ে গেলেন পরিবারকে। এরমধ্যে মানিকগঞ্জের শিবালয়ে করোনা রোগীর সন্ধান। লকডাউন করা হলো শিবালয়ের কয়েকটি গ্রাম।
মনে হতাশা থাকলেও বুক ভরা সাহস নিয়ে বলল, আল্লাহ ভরসা দেখা যাক। তিনি মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান।
তিনি জানান, দিন-রাত্রি হাড় ভাঙ্গা খাটুনি শেষে প্রিয় সন্তানের কাছে যেতে পারছেন না। স্ত্রী খাবার এগিয়ে দিতে পারছেন না। আলাদা ঘরে বিশ্রাম, দূরে বসে খেতে হয় খাবার। তবুও মনের ভয় কাঁটছে না। নিজের জন্য নয়, ভয় প্রাণ প্রিয় পরিবারের জন্য। প্রতিদিনই যেন একটা মুক্তিযুদ্ধ। ঘরে সুস্থ হয়ে ফিরতে পারবেন কিনা; তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবুও দেশ ও মানুেষর জন্য প্রতিনিয়ত ছুটে বেড়ানোই বড় দায়িত্ব।
এদিকে ছেলে আরিসের বয়স ৭ বছর হলো। বাবার কোল ছাড়া ঘুমাই আসে না অবুঝ শিশু আরিসের। বাসায় যেতেই দৌড়ে বাবার কোলে। না, সেই নিয়মটা বদলে গেছে এখন। বাবা ঘরে আসলে দূরে কোনায় দাড়িয়ে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে ছোট আরিস। এই হাহাকারের ক্ষতটা, সেই বাবাই জানে। একটু ছুঁয়ে দেখার হাজারো ইচ্ছে বুকে চেপে হাসি মুখে অভয় দিচ্ছে এক বাবা। যে অবুঝ শিশুটা বাবার কোল ছাড়া ঘুমায় না। শুধু আপনাকে ভালো রাখার জন্যই স্ত্রী-সন্তানের ভালোবাসাকে দূরে সরিয়ে রাখেন।
বাইরে তেমন একটা ভয় লাগে না। দেশের মানুষের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেকে বিলিয়ে দিতে বিন্দু পরিমাণ ভয় নেই। তবে কাজের ফাঁকে বাড়িতে ফিরলেই রাজ্যের ভয় ঘিরে ধরে। তার উপর ছেলেকে দুরে সরিয়ে রাখা, স্ত্রীকে খাবার দিতে মানা। এভাবেই কাটছে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদের জীবন কাল।
মিজানুর রহমান কিবা এএফএম সায়েদ। তাদের মত শত শত পুলিশ সদস্য দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। নিজের কি হবে, তারচেয়ে বেশি দেশের মানুষের ভাবনা। ভয়হীন আলো হাতে প্রতিমুহূর্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন সড়ক, মহাসড়ক, হাট- বাজার ও প্রত্যন্ত গ্রামে।
হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক পড়ে হ্যান্ড মাইক নিয়ে আকাঁ বাঁকা সড়ক মাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে বেড়ানো এক একজন যোদ্ধার গল্প। তপ্ত রোদে ঘামের শরীর নিয়ে হাজির হচ্ছেন আপনার দুয়ারে। আপনি ভালো থাকবেন বলে।
কাঁধে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে খাবার, আতঙ্কে পড়ে থাকা মৃতদেহ নিয়ে করছেন দাফনের ব্যবস্থা। অংশ নিচ্ছেন জানাযায়। আবার সড়কে বা বাসা থেকে অসহায় মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করছেন। কখনো সড়ক, কখনো বাড়ির উঠানে গান গেয়ে শুনাচ্ছে আপনাকে। একটাই প্রচেষ্টা আপনি ঘরে থাকুন, সচেতন থাকুন। আপনি ও আপনার পরিবার নিয়ে ভালো থাকুন।
ভিডিও দেখুন-১:
ইতিমধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েক পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কেউই কিন্তু পিছ পা হয়নি। যারা আছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলেছেন হার না মানা সাহসী যোদ্ধারা।
নিজের পরিবারকে দূরে ঠেলে হলেও আপনার এবং আপনার পরিবারকে আগলে রাখার ব্রত নিয়েছেন সজ্ঞানে। আপানাকে নিরাপদ রাখতেই তাদের সকল প্রচেষ্টা। ভেবেছেন কি তাদের ঘরের অবস্থা? একজন বাবা, সন্তান ও একটি সাজানো পরিবারের অনিশ্চিত গল্প।
ভিডিও দেখুন-২: