প্রধান শিরোনামস্বাস্থ্য
ছবি প্রতিযোগিতার নামে চিকিৎসকদের বেতন কেটে নিলো গণস্বাস্থ্য
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দ্বিতীয় জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ছবি প্রতিযোগিতার ছবি সম্বলিত বই কেনার জন্যে বাধ্যতামূলকভাবে বেতন কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন থেকে ৭৫০টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, দ্বিতীয়বারের মতো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে ১৮ জুন থেকে শুরু হয় দেশের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ছবি প্রতিযোগিতা। ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রদশর্নী এবং পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানের। পরবর্তীতে বিজয়ী ছবি ও বিভিন্ন লেখা নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রকাশিত এই বই বিক্রির উদ্দেশ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সকল স্বাস্থ্যকর্মী, গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজের সকল শিক্ষক এবং হাসপাতালের চিকিৎসকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ৭৫০টাকা হারে কাটা হয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেন, দুইটি প্রতিষ্ঠান মিলে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করলো এবং সেই প্রতিযোগিতা বিষয়ক একটি বই ছাপিয়ে জোরপূর্বক সবার বেতন কেটে নেওয়া কি অন্যায়, অবিচারের শামিল নয়? এভাবে চলতে থাকলে যেকেউ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে আমাদের বেতন কেটে নিতে পারবে।
বেতন কেটে নেওয়া বিষয়ে প্রতিবেদকের সাথে গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজের একজন বিভাগীয় প্রধানের কথা হয়। তিনি নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, “প্রতিবছরই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিভিন্ন বই, ম্যাগাজিন কেনা বাবদ আমাদের বেতন থেকে একটি অর্থ কেটে নেওয়া হয়। সেই টাকাই এইবার হয়তো ফটো কন্টেস্টের জন্যে কেটে নেওয়া হয়েছে।”
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বড় পাঁচটি হাসপাতাল সহ দেশব্যাপী প্রায় ত্রিশ অধীক সাবসেন্টার বা ক্লিনিক হাসপাতাল হয়েছে। এইসকল সেবাকেন্দ্রে কয়েকশ স্বাস্থ্যকর্মী কর্মরত রয়েছেন। একজন স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “প্রতিমাসে সাবসেন্টারে থাকা-খাওয়া বাবদ অর্থ কেটে রেখে বেতন হিসাবে পাই মাত্র ১০০০টাকা। তাও ২-৩মাস পরপর বেতন পেয়ে থাকি। এইবার আমাদের জানানো হয়েছিলো, ছবি প্রতিযোগিতার বই কেনা বাবদ সবাইকে বাধ্যতামূলক ভাবে ৭৫০টাকা দিতে হবে। নগদ অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়, তাই আমরা বাধ্য হয়ে বেতন থেকে কেটে নিতে বলেছিলাম। এবার তাই বেতন হিসাবে পাবো মাত্র ২৫০ টাকা। অথচ আমরা কিছুই জানি না ছবি প্রতিযোগিতা সম্পর্কে।”
অভিযোগ সম্পর্কে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ক ডা. মনজুর কাদির আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “যেহেতু অভিযোগ উঠেছে এবং অনেকের আপত্তি রয়েছে, তাই আমরা বিষয়টি কিভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে অতিশীঘ্রই আলোচনায় বসবো। ইতোমধ্যে পরিচালক ও হিসাব বিভাগের সাথে কথা বলেছি। প্রয়োজন হলে আমরা টাকা ফিরিয়ে দিবো।”
গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে থাকা একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁদের কর্মীদের প্রতি এমন অবিবেচনাসূলভ আচরন স্বৈরাচারী শোষন ও অপরাধের সামিল।